স্টাফ রিপোর্টার।। বিনা মেঘে বজ্রপাত। হঠাৎ করেই কুমিল্লা জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত। কিন্তু কেন ? এ প্রশ্নটি যখন রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনার বিষয়। আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ আহবায়ক কমিটি হঠাৎ কেন ভাঙা হলো ? তার কোন সদত্তোর দিতে পারছেন না জেলার শীর্ষ বিএনপি নেতারা।
সবাই বলছেন, দলের হাইকমান্ড দলের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেই হয়তো কমিটি ভেঙেছেন। কুমিল্লার কাগজ নানাভাবে অনুসন্ধান করে জানতে চেয়েছে আসলে হঠাৎ কমিটি কেন ভাঙলো ?
জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩০ মে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে সাবেক সংসদ সদস্য ও দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত নেতা হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনকে আহবায়ক ও জসিম উদ্দিন জসিমকে সদস্য সচিব করা হয়। তিন মাসের জন্য গঠিত এ কমিটির মেয়াদ দুই বছর সাত মাস হয়ে গেছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির অধীনে থাকা ১৪টি সাংগঠনিক কমিটির একটিরও সম্মেলন হয়নি। অন্তত এই কমিটির আমলে একটিও সম্মেলন হয়নি। অথচ দলের হাইকমান্ড চায় তৃণমূল থেকে সম্মেলন করে করে জেলার সম্মেলন করে সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত করা হোক। কিন্তু দীর্ঘ পৌনে তিন বছরে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির অধীনে থাকা ১৪টি সাংগঠনিক কমিটি সম্মেলন না হওয়া কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। বিভিন্ন সূত্র গুলো এমনই বলছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেন ? প্রশ্ন উঠেছে এখানে।
সূত্র আরো জানায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আয়োজিত এক ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন- ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম নিলে বেহেশত যাওয়া যাবে।’ তার এই বক্তব্য জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। দলের হাইকমান্ড এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হয়। দেশের বাইরে থেকে স্থানীয় এক নেতার কাছে জানতে চাওয়া হয়- ‘কামরুল হুদাকে নেতা কারা বানিয়েছে ? ঐ নেতা বলেছেন- এ ব্যাপারে জেলা কমিটি ভালো বলতে পারবে।’
কুমিল্লার কাগজের নানা সূত্র নিশ্চিত হয়েছে এমন তথ্য জানতে চাওয়ার পরদিনই কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ঠিক এ কারণেই কমিটি ভেঙেছে এমন কোন নিশ্চিত তথ্য দৈনিক কুমিল্লার কাগজের কাছে নেই।
আহবায়ক কমিটি বিলুপ্তির পর প্রশ্ন হচ্ছে এখন কি পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে না নতুন করে আহবায়ক কমিটি হবে। নতুন আহবায়ক কমিটি হলে কি পুরানোরা আবার কমিটিতে আসবেন ? নাকি নতুন নেতার হাতে তুলে দেওয়া হবে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি ?
বিএনপির বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া জানান, আসলে তো নতুন লোকজনই আসবে। পুরানো লোকজনই যদি আসে তাহলে তো কমিটি বিলুপ্তির প্রশ্ন আসতো না।
কি কারণে কমিটি ভাঙলো ? এ প্রশ্নের উত্তর মোস্তাক মিয়া বলেন, দলের প্রয়োজনে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন। এটিও তেমন একটি সিদ্ধান্ত। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি বিলুপ্তের দিন আরো ৩টি কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। হাইকমান্ড প্রয়োজন মনে করেছে বলেই তা করেছে।
তিনি জানান, বিলুপ্ত আহবায়ক কমিটি ১৪টি সাংগঠনিক কমিটির কোন সম্মেলন করতে পারেনি। তারা নানা রিপোর্ট দিয়েছে। অবশ্য এ কমিটির সময়ে তীব্র আন্দোলনও গেছে। আন্দোলন সংগ্রামে তারা ব্যস্ত ছিল। কিন্তু সাংগঠনিক কাজকর্মও করা দরকার ছিল।
এদিকে কমিটি বিলুপ্তের পর দক্ষিণ জেলা বিএনপির তোদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বিভিন্ন পরিমণ্ডলে বৈঠক করেছেন। যোগাযোগ শুরু করেছেন। একটি বৈঠক সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে বিএনপি অঙ্গনে। সেটি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আইনজীবী ব্যারিষ্টার আবদুল্লা আল মামুনের বাসায় দেখা করেছে বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। ব্যারিষ্টার মামুন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া আসন থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে আগ্রহী। এ আসনেই সংসদ সদস্য পদে আগ্রহী বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন।
অন্যদিকে বিএনপির বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়ার ছেলের বিয়োত্তর বৌভাত অনুষ্ঠানে একটি বিষয় সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। আর তা হলো জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য শিল্পপতি কাউসার জামান বাপ্পির পাশে জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আনাগোনা। সবাই কাউসার জামান বাপ্পির সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন।
কমিটি কেন ভেঙেছে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায় মেয়ের কাছে অবস্থানরত কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জসিম উদ্দিনের কাছে। তিনি জানান, তিন দিন হয়েছে আমি অস্ট্রেলিয়ায় এসেছি। কেন কমিটি ভাঙলো আসলে জানি না। হাইকমান্ড যা ভালো মনে করেছে তাই করেছে। তবে আমরা কিছু কাজ করতে পারতে পারিনি। আন্দোলন সংগ্রামে ব্যস্ত ছিলাম।
কমিটি ভাঙার কারণ জানতে ফোন করা হয় সাবেক আহবায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনকেও। তিনি ঢাকায় ব্যস্ত থাকায় ফোন ধরতে পারেন নি। তবে তার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, আন্দোলন-সংগ্রাম, মামলা-মোকদ্দমা সবকিছু চালিয়ে আসছে হাজী ইয়াছিন। দলের জন্য তিনি নিবেদিত প্রাণ। হঠাৎ কেন এমন হলো তা বোধগম্য নয়।