যমুনা
নদীর উপর নবনির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু দিয়ে দ্রুত গতিতে পরীক্ষামূলক
ট্রেন চলেছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে দুটি ইঞ্জিন তিনটি করে বগি নিয়ে
সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করছে।
ট্রেন দুটি আপ ও ডাউন
টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর প্রান্ত থেকে পশ্চিমপ্রান্ত সিরাজগঞ্জে দিনভর ও সোমবারও
চলাচল করবে বলে রেলসেতু প্রকল্পের মুখ্য প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম জানান। এর
আগে ২৬ নভেম্বর ৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল।
মাইনুল
ইসলাম বলেন, “প্রথমে ৪০ এবং পরে ধীরে ধীরে গতি বাড়িয়ে ১২০ কিলোমিটার বেগে
ট্রায়াল ট্রেন চালানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়েনি।
আগে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যেখানে ২০-২৫ মিনিট লাগছে, নতুন সেতু দিয়ে মাত্র
আড়াই থেকে তিন মিনিট সময় লাগবে সেতু পার হতে।”
জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে সেতুটি উদ্বোধন করা হবে বলে তিনি জানান।
যমুনা
রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান বলেন, সেতুটির
কাজ পুরোপুরি শেষ। পরীক্ষামূলকভাবে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের যমুনা
রেলসেতু দিয়ে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে দুটি ট্রেন পাশাপাশি চলাচল
করবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি জানুয়ারি শেষে অথবা ফেব্রুয়ারিতে
আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন হবে।
পরীক্ষামূলক ট্রেন চলার সময় রেলওয়ে
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা ছিলেন। সেতুটিতে কোনো
ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কিনা এ ট্রেন চালিয়ে সেটিই পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়।
তবে
২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এরপর
থেকে সেতুর উপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে থাকে। গতি
কমের কারণে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটতে থাকে শিডিউল বিপর্যয়, বাড়ে যাত্রী
ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যমুনা নদীর উপর
আলাদা রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮১
দশমিক ৯৬ কোটি টাকা।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে ‘বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’ নাম দিয়ে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েলগেজ ডবল লাইনের এই
সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন।
নির্মাণ ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থ ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি-জাইকা।
জাপানের আইএইচআই, এসএমসিসি, ওবায়শি করপোরেশন, জেএফই এবং টিওএ করপোরেশন প্রতিষ্ঠান মিলে তিনটি প্যাকেজে সেতুর নির্মাণ কাজ করছে।
অর্ন্তবর্তী সরকার সম্প্রতি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’র নাম পরিবর্তন করে ‘যমুনা রেলওয়ে সেতু’ নামকরণ করেছে।
বর্তমানে
বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। নতুন রেল সেতু চালু হলে দুই
লাইনে দ্রুত গতিতে মালবাহীসহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের
সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ তৈরি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।