আজ
শীতে ভোরের সূর্যের আলো তেমন একটা দেখা মেলেনি। কুয়াশার চাদরে ঢাকা আকাশ।
রাস্তার পাশ ধরে চলতেই চোখে পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বক। শীতের সময়টাতে
বোরোধানের জন্য কৃষক তাদের পতিত বীজতলা ও জমি তৈরি করে এ সব জমিতে দেখা
মেলে সারি সারি সাদা বক । শীতের আবেশ এখন প্রকৃতিতে বিদ্যমান। আর এ
প্রকৃতিতে সবুজ অপরূপ সুন্দরের প্রতীকের মাঝে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বকের উড়া
উড়ি দেখে প্রকৃতি প্রেমিদের মনে দোলা দেয়।
বোরো ফসলের মাঠে ঝাঁকে ঝাঁকে
সাদা বক যেন চিরন্তন বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য্যের প্রতিক। এই সময়টাতে
খাদ্যের সন্ধানে উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ, নদী ও জলাশয়ের ধারে ভিড় করে
দেশি সাদা বকের দল। চাষ করার সময় শত শত বক উড়ে এসে লাঙলের ফলার চারপাশে
ঘিরে থাকে। মাটির নিচের পোকামাকড় খায়।
এদিকে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বক দেখে
মজা পায় সব বয়সী মানুষ।সরেজমিন বুড়িচং উপজেলার ইন্দবতী এলাকায় দেখা যায়
এমনই দৃশ্য। ওপরে সাদা মেঘ কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন কুয়াসায় ঘেরা আকাশ, কৃষকের
জমিতে কাদা মাটির উপরে সাদা বকের অবস্থান, মিলিমিশে যেন একাকার। মনে হয় এটা
যেন বকের অভয়াশ্রম।
এক সময় সাদা বকের প্রচুর দেখা মিলত বিল, পুকুর,
ডোবায়, ফসলের মাঠে। এরা সাধারণত গাছের মগডালে বাসা বাঁধে। আর এই পাখির
প্রধান খাদ্য মাছ ও পোকামাকড়। এ ছাড়া ফসলি জমিতে পোকামাকড় দমনে এদের ভূমিকা
অপরিসীম। এই পাখিটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। শুধু গ্রামগঞ্জে ফসলের জমিতে
ও নদীর ধারে শীতের মৌসুমে দেখা মেলে এই বকের।
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর
রহমান বলেন, শীতকাল থেকে সাদা বকেরা এ এলাকায় আসতে শুরু করে, আবার শীত শেষ
হতে না হতেই যেতে শুরু করে। তাদের উড়াউড়ি ও কলকাকলিতে এই এলাকা মুখরিত হয়ে
থাকে। অনেকেই আসেন এ দৃশ্য দেখতে। স্থানীয় কৃষক লোকমান মিয়া বলেন,
দাদা-দাদির কাছ থেকে শুনেছি কোনো এক সময় গ্রামবাংলার প্রায় প্রতিটি পুকুরের
জলে সাদা বক দেখা যেতো। এখনতো সচরাচর তাদের দেখাই যায় না। যে কারণে এখানে
এতো বক একসাথে দেখে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যায়। প্রতিদিন অনেকেই আসে পাখিগুলোর
দলবেঁধে ওড়াউড়ি ও খাবারের দৃশ্য দেখতে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা কৃষি
সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক( ডিডি) আইয়ুব মাহমুদ গতকাল কুমিল্লার
কাগজকে বলেন, সাদা বক একটি অতিপরিচিত পাখি। বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলে তাদের
বেশি দেখা যায়। তবে তুলনামূলক ভাবে এই এলাকায় সংখ্যা তেমন একটা নেই।খাবারের
সন্ধানে প্রকৃতির নিয়মে তারা আসে এখানে। ফসলের জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড়
খেয়ে ফসলের উপকার করে। বকসহ সব উপকারি পাখি ফসলের জমিতে পোকামাকড় খায়। এতে
করে মাটি তার পরিপূর্ণ পুষ্টি পায়।