আগে খেলাপি ঋণের তথ্য
লুকানো হতো, এখন লুকিয়ে রাখা সব তথ্য প্রকাশের চেষ্টা চলছে। বলা হচ্ছে
খেলাপি ঋণ ৪ লাখ কোটি টাকা বা তার থেকে বেশি। পুরো তথ্য সামনে এলে প্রকৃত
খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ কোটিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ব্যাংকগুলোতে অডিট হচ্ছে
প্রকৃত খেলাপির তথ্য পেলে এরপর কমানোর পদক্ষেপ সম্পর্কে জানানো হবে।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা।
মুখপাত্র
বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে গত পাঁচ মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকের
বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে, ব্যাংকিং টাস্কফোর্স গঠন হয়েছে, ডলার বাজার
স্থিতিশীলতা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য বিষয়ে বেশকিছু উদ্যোগ
নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে কিছু সুফল পাওয়া গেছে, কিছু ফলাফল আসতে আরও সময়
লাগবে। কিন্তু আর্থিক খাতে এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। তাই
বাংলাদেশ ব্যাংক খুব বেশি খুশি নয়। তবে আর্থিক ভীতি কেটে গেছে বলে মন্তব্য
করেছেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, ২০২৫ সালের
শেষ নাগাদ কোন ব্যাংকের মাধ্যমে কত টাকা কোন দেশে পাচার হয়েছে সে বিষয়ে
স্পষ্টভাবে জানা যাবে। পাচারের টাকা ফেরত আনা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।
নির্ধারিত সংস্থাগুলো বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই তারা এই
বিষয়গুলো আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন না।
মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা ইতোমধ্যেই একাধিকবার নীতি
সুদ বাড়িয়েছি। আশা করছি জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। না এলে হয়তো আবার
নীতি সুদহার বাড়ানো হতে পারে। তবে এই বিষয়ে ব্যবসায়ীরা মোটেই খুশি নন।
কারণ, ব্যাংক ঋণের জন্য তাদের অতিরিক্ত সুদ গুনতে হয়। বিনিয়োগেও ধীরগতি
নেমে আসে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাগুলোকে ঠিকঠাক
মতো কাজ করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগ কমার জন্য শুধু সুদের হার
এককভাবে দায়ী নয়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জ্বালানি সরবরাহ, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ
আরও অনেক কিছু বিনিয়োগ বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
একক প্রচেষ্টায় মূল্যস্ফীতি পুরোপুরিভাবে কমানো সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত,
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি তলানিতে নেমেছে। গত নভেম্বর মাসে আগের বছরের
একই সময়ের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এই
প্রবৃদ্ধি গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও
বেনামি-জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণ কমে আসায় এবং দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত ও
পর্ষদে পরিবর্তন হয়েছে এমন ১১টি ব্যাংকের নতুন ঋণ প্রদান বন্ধ থাকায় এমন
পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এই ব্যাংকগুলো অবশ্য আমানতকারীদের টাকার চাহিদা
মেটাতেই এখন হিমশিম খাচ্ছে।
বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে আসায় অনেক
ব্যাংক সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এতে ঋণের চেয়ে বেশি
মুনাফা মিলছে। কারণ, ঋণ দিলে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি থাকে আর বিল ও বন্ডে
মুনাফা নিশ্চিত হয়। ফলে বিদায়ী ২০২৪ সালের কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায়
অনেক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণে প্রবৃদ্ধি ৭
দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছিল, যা ২০২১ সালের মে মাসের পর সর্বনিম্ন। ওই বছরের মে
মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত নভেম্বরে অর্জিত প্রবৃদ্ধি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নিচে রয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫
অর্থবছরের প্রথমার্ধের জুলাই-ডিসেম্বর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৯ দশমিক ৮
শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।