নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে সাত বছর পর মায়ের সঙ্গে মিলিত হলেন ছেলে; লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে সৃষ্টি হল আবেগঘন মুহূর্তের।
বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনের স্থানীয় সময় বুধবার সকালে
৯টার পরপর হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখানে আগে থেকেই
অপেক্ষায় ছিলেন তার ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার
স্ত্রী জুবাইদা রহমান।
কাতারের আমিরের দেয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে
করে খালেদা জিয়া লন্ডনে পৌঁছান। টার্মিনালে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ফুল
দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার হযরত আলী খান।
এরপর পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান খালেদা জিয়ার পা ছুঁয়ে সালাম করেন। তারপর তারেক রহমান মায়ের হুইল চেয়ারের কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেন।
খালেদা
জিয়ার সঙ্গেই লন্ডনে গেছেন তার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী
সৈয়দ শামিলা রহমান সিঁথি। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ
সম্পাদক কয়সর এম আহমদসহ অনেক নেতা-কর্মী বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
২০০৭-০৮
সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার মত তার বড়
ছেলে তারেক রহমানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি পরিবার
নিয়ে লন্ডনে চলে যান, দেশে আর ফেরেননি।
এর মধ্যে পাসপোর্টের মেয়াদ
ফুরিয়ে যাওয়ায় তারেককে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হয়। ছোট ভাই আরাফাত
রহমান কোকোর মৃত্যু আর মায়ের কারাগারে যাওয়ার মত দুঃসময়েও তার দেশে ফেরা
হয়নি।
খালেদা জিয়া লন্ডনে গেলে কেবল তখনই মায়ের স্পর্শ পাওয়ার সুযোগ হত
তারেকের। সবশেষ সে সুযোগ হয়েছিল ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। সেবার নিজে গাড়ি
চালিয়ে মাকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
পরের বছর ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি
মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেদিনই বিএনপির স্থায়ী
কমিটির বৈঠকে তারেককে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০২০
সালে আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয়।
কিন্তু দুই শর্তের কারণে তিনি কার্যত বন্দি ছিলেন বাসা আর হাসপাতালের
জীবনে। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার জন্য বার বার অনুমতি চাইলেও তাতে সাড়া
দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার।
২০১৭ সালের ১৫ জুলাই হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছে
খালেদা জিয়া পায়ে হেঁটেই টার্মিনালে যেতে পেরেছিলেন। সেবারও মাকে জড়িয়ে
ধরেছিলেন তারেক রহমান।
আর এবার খালেদা জিয়াকে বিমান থেকে নামিয়ে হুইল
চেয়ারে করে যখন টার্মিনালে নেওয়া হল, তার সামনে থমকে দাঁড়ান তারেক। হাঁটু
গেড়ে বুকে জড়িয়ে নেন মাকে।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন,
“এ যেন এক অন্যরকম স্পর্শ, অন্য রকম মুহূর্ত যা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়।
যিনি মায়ের স্পর্শ অনেকদিন পাননি, তিনিই বুঝতে পারবেন এর আবেদন।”
তিনি
জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া
হচ্ছে। তাকে ভর্তি করা হবে বিখ্যাত লন্ডন ক্লিনিকে, যেখানে ব্রিটিশ রাজ
পরিবারের সদস্যরাও চিকিৎসা নেন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা
জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস,
আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন
হলে তাকে পরে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হতে পারে বলেও আভাস দিয়ে রেখেছেন তার
ব্যক্তিগত চিকিৎসক।
বিমানবন্দর থেকে লন্ডন ক্লিনিকে খালেদা জিয়া:
নিজে
গাড়ি চালিয়ে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি মাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছেন তারেক
রহমান; আগে থেকেই ঠিক করে রাখা লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে খালেদা
জিয়াকে। বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে হিথ্রো বিমানবন্দরে বিএনপি
চেয়ারপারসন নামার আড়াই ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পশ্চিম লন্ডনের কাছে
অবস্থিত ওই হাসপাতালে পৌঁছান বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির এক নেতা।
তাদের গাড়ি হাসপাতালের কাছে পৌঁছালে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের স্বাগত জানান।
উন্নত
চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে থাকা তার ব্যক্তিগত
চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘ম্যাডামকে ভর্তি করা হয়েছে।
এখন ফিজিশিয়ানরা তাদের কাজ শুরু করবেন।”
লন্ডন ক্লিনিকে অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডির অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে।
হিথ্রো
বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মাকে নিয়ে রওনা দেন তারেক রহমান। নিজের
গাড়িতে খালেদা জিয়াকে পেছনের সিটে বসিয়ে নিজেই গাড়ি চালান বিএনপির
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক। সামনে তার পাশে বসেছিলেন স্ত্রী জোবাইদা
রহমান।
এর আগে সাত বছর পর হিথ্রো বিমানবন্দরে মা ও ছেলের সাক্ষাৎ হয়। তখন সেখানে আবেগঘন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়।
গত
মঙ্গলবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাতারের আমির
শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা
জিয়া রওনা হন। দোহায় যাত্রাবিরতি শেষে বুধবার সকাল ৯টায় হিথ্রো বিমানবন্দরে
পৌঁছান তিনি।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন
থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক
অসুস্থতায় ভুগছেন।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডন গেলে বিএনপি
চেয়ারপারসনের তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। এবার অসুস্থতার কারণে চিকিতসকদের
পরামর্শেই আগেই থেকে এই হাসপাতালে ভর্তির সব কিছু আগে থেকেই ঠিক করে রাখা
হয়েছিলো।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক
শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফএম সিদ্দিক, অধ্যাপক নুরদ্দিন আহমেদ,
অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. জাফর ইকবাল ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন
লন্ডনে এসেছেন একই বিমানে।
বাংলাদেশে এভারকেয়ার হাসপাতালের গঠিত মেডিকেল
বোর্ডের অধীনে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। কয়েকবার তাকে হাসপাতালেও দীর্ঘ
সময় ধরে ভর্তি থাকতে হয়েছিলো।