মূল্যস্ফীতি এখন বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। বাজারে জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া। মানুষের আয় বাড়ছে না, কিন্তু পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চালের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, আমনের ভরা মৌসুমে পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে। চালের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহে মিল পর্যায়ে অস্বাভাবিক দাম বেড়ে গেছে। চালকল মালিকদের দাবি, এবার বাড়তি দামে ধান কেনার কারণে তাঁরা চালের দাম বাড়িয়েছেন।
চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত নভেম্বরে আমদানির ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রেখে বাকি আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু এতে চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। শুল্কছাড় দিলেও চাল আমদানি তেমন বাড়েনি। গত নভেম্বরে চাল আমদানি হয়েছিল সাত হাজার ৫০৭ মেট্রিক টন।
ডিসেম্বরে ৫৫ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। চাহিদার তুলনায় তা নামমাত্র। বাণিজ্য উপদেষ্টার দাবি, দেশে চালের কোনো সংকট নেই। ব্যবসায়ীদের মজুদদারিতে দাম বাড়ছে। তাহলে কি অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়?
মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও সেটি এখনো বাড়তি। প্রশ্ন হচ্ছে, বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখার জন্য সরকারের যেসব সংস্থা রয়েছে, তাদের কোনো ভূমিকা কি দেখা যাচ্ছে? বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। শুধু চাল নয়, প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। নাকাল হচ্ছে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট যেন বাজারকে অস্থির করতে না পারে সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। আমদানি ঠিক রেখে সাপ্লাই চেইন সচল রাখার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেবে-এটিই আমাদের প্রত্যাশা।