খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত মাসে ছিল ১৩ শতাংশের কাছাকাছি এবং তার আগের মাসে ছিল ১৪ শতাংশের কাছাকাছি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণের দাম। নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির চাপে প্রায় দিশাহারা অবস্থায় রয়েছে। এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতিকে আরেক দফা উসকে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
পত্রিকান্তরে খবর অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে ইন্টারনেটসহ ৬৭টি পণ্য ও সেবার ভ্যাট-সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে গত বৃহস্পতিবার অধ্যাদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে সেই তালিকায় রয়েছে ওষুধ, এলপি গ্যাস, মিষ্টি, বিস্কুট, আচার, টমেটো সস, ফলের রস, সব ধরনের তাজা ফল, সাবান ও ডিটারজেন্ট, কিচেন টাওয়েল, টয়লেট টিস্যু, মোবাইল সেবা ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ম্যাট্রেস, ফেরো ম্যাঙ্গানিজ (রড তৈরির কাঁচামাল), বার্নিশ ইত্যাদি। স্থির আয়ের মানুষের এমনিতেই চিড়েচ্যাপটা অবস্থা। বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, তাদের অবস্থা আরো শোচনীয় হবে।
ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম কম থাকলেও ক্রমাগতভাবে বাড়ছে চালের দাম। চালভেদে কেজিপ্রতি ১০-১২ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। তেল, ডাল, চিনি, ছোলা, মাছ, মাংস, মসলা-অনেক পণ্যেরই দাম বেড়েছে। এর মধ্যে এগিয়ে আসছে পবিত্র রমজান মাস।
আর মাত্র মাস দেড়েক বাকি। এই সময়ে এভাবে ভ্যাট বৃদ্ধি করায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এর সুযোগ নেবেন। দাম বাড়াতে উঠেপড়ে লাগবেন। বাজার এভাবে অস্থির হলে রোজার মাসে দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠবে। সারা দিন রোজা রাখার পর মানুষ সাধ্যমতো ইফতারিতে কিছু ফল রাখার চেষ্টা করে।
রোজার প্রাক্কালে সেই ফলেও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি ক্রমাগতভাবে দুই অঙ্কের ঘরে থাকায় মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। ধরা যাক, আগে যে পরিবার ১০ হাজার টাকায় কোনো রকমে সংসার চালাত, এখন তার সেই একই প্রয়োজন মেটাতে ১২ হাজার টাকা বা তারও বেশি দরকার হয়। কিন্তু বাকি টাকা কোথায় পাবে? আয় বা বেতন তো বাড়েনি। ফলে পরিবারের পুষ্টিসহ অনেক প্রয়োজন কাটছাঁট করতে হয়। কিন্তু কিছু প্রয়োজন উপেক্ষা করা যায় না। সন্তান অসুস্থ হলে ধারকর্জ করে হলেও চিকিৎসা করাতে হবে। ওষুধ কিনতে হবে। সেই ওষুধের দামও বেড়েছে। ফলে অবধারিতভাবে নিম্ন আয়ের মানুষের বেশি পরিমাণে দারিদ্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
রাজস্ব আয় বাড়ানোটা যেমন প্রয়োজন, মানুষের দুঃখ-কষ্ট-দুর্ভোগ বিবেচনা করাও একইভাবে প্রয়োজন। আইএমএফ বা অন্য কোনো সংস্থা চাপ দিলেই পরোক্ষ কর বাড়িয়ে দেওয়া কাঙ্ক্ষিত নয়। আমরা চাই, সরকার ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুক।