‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ কথাটির বাস্তব উদাহরণ সৃষ্টি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের চাপে মানুষ যখন পিষ্ট হচ্ছে, তখন আরো একটি ‘খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে ভ্যাট বৃদ্ধির অধ্যাদেশ। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পণ্য ও সেবায় উল্লেখযোগ্য হারে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। আগস্টের গণ-আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও এর তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে।
অনেকে এমনও বলেছে, শতাধিক পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর ফলে মানুষের দুর্দশা-দুর্ভোগ অনেক বেড়ে যাবে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর জনগণের আস্থায় চিড় ধরবে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনও। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে, কিন্তু সরকার নির্বিকার।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে দুশ্চিন্তা বেড়েছে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদেরও।
অর্থনীতি বিশ্লেকরাও বলছেন, এর ফলে চাপে পড়বে দেশের সার্বিক অর্থনীতি। সংকটে পড়বে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। তাঁরা বলছেন, এমনিতেই রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস-বিদ্যুৎ ঘাটতিসহ আরো অনেক কারণে দেশের ব্যবসা-বিনিয়োগ নেতিবাচক ধারায় চলছে। এই ভ্যাট বৃদ্ধি তা আরো জটিল করে তুলবে।
ব্যবসা পরিস্থিতি আরো সংকটে পড়বে জানিয়ে দেশের রেস্তোরাঁ মালিকরা ভ্যাট প্রত্যাহারের আলটিমেটাম দিয়ে রেখেছেন। তা বাতিল করা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখারও হুমকি দিয়ে রেখেছেন তাঁরা। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরাও। তাঁদের মতে, অভাব-অনটনের কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। মানুষ অনেক পণ্যই কম কেনে।
ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে বেচাকেনা আরো কমে যাবে।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। মূল্যস্ফীতি শুধু একটি সংখ্যা নয়। যে মানুষগুলোর আয়ের ও ব্যয়ের ওপর কশাঘাত আসছে, তারা এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় সরকারের ট্যাক্স-ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া ঠিক হয়নি।’ এই উদ্যোগকে আইএমএফের শর্তের চাপের কাছে নতি স্বীকার বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। অনেক অর্থনীতিবিদই সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, সরকার ভ্যাট বাড়ালেও সেই অর্থ সরকারের খাতায় যাবে এমনটা বলা যায় না। তাঁদের মতে, কেবল ভ্যাট-ট্যাক্স না বাড়িয়ে আহরণ পদ্ধতি উন্নত করা প্রয়োজন।
প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম। খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত মাসে ছিল ১৩ শতাংশের কাছাকাছি এবং তার আগের মাসে ছিল ১৪ শতাংশের কাছাকাছি। নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির চাপে প্রায় দিশাহারা। এর মধ্যে আসছে রমজান মাস। এ সময় এমনিতেই পণ্যমূল্য বাড়ে। এবার ভ্যাট বৃদ্ধির অজুহাত দিয়ে ব্যবসায়ীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবেন। আর চিড়েচ্যাপটা হবে সাধারণ মানুষ।
আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে অতি দ্রুত ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে।