বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
২ মাঘ ১৪৩১
১২ জানুয়ারির ‘বিশৃঙ্খলা’ কুবির তিন দপ্তরে শিক্ষার্থীদের অভিযোগপত্র
আতিকুর রহমান তনয়, কুবি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ১:৩৩ এএম আপডেট: ১৪.০১.২০২৫ ২:০১ এএম |


 ১২ জানুয়ারির ‘বিশৃঙ্খলা’ কুবির তিন দপ্তরে শিক্ষার্থীদের অভিযোগপত্র
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ১২ জানুয়ারি ঘটা 'বিশৃঙ্খলা'-কে কেন্দ্র করে তিন দপ্তরে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তর, প্রক্টর দপ্তর এবং ছাত্র ও পরামর্শক দপ্তরে এই অভিযোগপত্র জমা দেন তারা। তবে অভিযোগপত্রের বিষয় মন্তব্য করতে রাজি হননি তিন দপ্তর প্রধানের কেউ-ই। তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা 'এ বিষয় কোনো মন্তব্য করতে পারবো না' বলে জানান।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, গত ১২ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে লোকপ্রশাসন বিভাগের ১৪তম আবর্তনের মাহফুজ অন্তর, মার্কেটিং বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শাহাদাত তানভীর রাফি, ফার্মেসী বিভাগের ১৫তম আবর্তনের সাদী, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ১৬তম আবর্তনের মোহাম্মদ রাফি দ্বারা 'গণিত বিভাগের টিচার্স রুম ভাঙচুরের হুমকি, সাংবাদিকদের পা চাটা গোলাম বলে আখ্যায়িত এবং তাদের প্রাণনাশের হুমকির' মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনায় শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন।'
এছাড়া আরও জানা যায়, অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পূর্বেও হলের সামনে জ্বালাও পোড়াও, প্রশাসনিকভাবে দেখে নেওয়ার হুমকি, সিনিয়র পেটানোর মনোভাব, গণিত বিভাগ ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের খেলায় মারামারির মূল হোতাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায়, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানায় তারা।
অভিযোগপত্রের বিষয় গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ইয়াসমিন আক্তার বলেন, 'শিক্ষকের অনুমতি ব্যতিত ওনার অনুপস্থিতিতে রুমে প্রবেশ করা একজন শিক্ষার্থীর আচরণ হতে পারে না।গতকাল আমার শিক্ষকের সাথে যেভাবে আচরণ করেছে তথাকথিত কিছু শিক্ষার্থী, তা কোনো শিক্ষার্থীর আচরণ হতে পারে না।স্যারের সামনে তারা ভাংচুর করার হুমকি দেয়।স্যারদের সাথে তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ,অশ্রাব্য আচরণ আমাদের ব্যথিত করে।দলীয় ট্যাগ কোনো ছাএের অন্যায়ের প্রতি সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে না।অন্যায়কারীর আইন অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনা হউক।ক্যম্পাসে মব জাস্টিস হতে পারে না।আইন নিজের হাতে নিবে অথচ প্রশ্ন করলেই দালালি ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া এটা আগের স্বৈরাচারের অসুস্থ কালচার।এটা হতে পারে না।আমি একটা সুস্থ ক্যম্পাস চাই।আমি একটা নিরাপদ ক্যম্পাস চাই।যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী সবাই নিরাপদ।ক্যম্পাসে কোনো নব্য স্বৈরাচার দেখতে চাইনা যারা নিজের হাতে আইন তুলে নেয়।'
অভিযোগপত্রের বিষয় গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী হুজাইফা হামিম বলেন, 'জুলাই বিপ্লবের উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্য দূর করা। আইনের সুসংহত প্রয়োগ করা। কিন্তু এই ঘটনার পর মনে হচ্ছে নতুন করে একটি দল সাধারণ ছাত্র নাম ধরে সেই পুরনো ক্ষমতা প্রয়োগের খেলায় মেতে উঠেছে। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে যেরকম ঔদ্ধত্য দেখা গেল, এর বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যাবস্থা না নিলে সামনে আরো খারাপ কিছু হয়তো অপেক্ষা করছে। বিচার নিশ্চিত করার নামে একটা মব জাস্টিস বলি বা এটাক বলি, আমরা যেন তারই প্রতিচ্ছবি দেখলাম। যা হতাশাজনক।
অভিযোগপত্রের বিষয় গণিত বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ফরহাদুল ইসলাম নাঈম বলেন, 'গতকাল যে ধরণের ঘটনা ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। এর সুষ্ঠু বিচার না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কখনো শিক্ষার্থীদের অনুকুলে থাকবে না। আমরা এখানে মারামারি দেখতে আসি নাই। কেউ যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে তার বিচারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। নিজের হাতে আইন তুলে ক্ষমতার অপব্যাবহার পূর্বেও কেউ মেনে নেয় নি, বর্তমানেও কেউ মেনে নিবে না। অদূর ভবিষ্যতে হলে প্রশাসন দমন করবে তা আমাদের জানিয়েছে।'
অভিযোগপত্রের বিষয় গণিত বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা শান্তা বলেন, গতকাল বাইরের বিভাগ থেকে কয়েকজন গণিত বিভাগের অভ্যন্তরে টিচার্স রুমে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে বিভাগের শিক্ষকদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছে। এমনকি নানান পোস্টে শিক্ষকদের নাম ধরে উনাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করা হয়েছে। একজন গণিত বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থী হয়ে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং যারা এই স্পর্ধা দেখিয়েছে তাদের বিচার এর আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের নিকট অনুরোধ করছি।'
অভিযোগপত্রের বিষয় গণিত বিভাগের ২০২১-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মোঃ মিশকাত হোসেন বলেন, 'সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে কোনো ডিপার্টমেন্টের অফিসে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা করা, স্যারদের গালমন্দ করার অধিকার তারা কীভাবে পায়? অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনতে গিয়ে সৃষ্ট ন্যাক্কারজনক ঘটনা নতুন অপরাধের জন্ম দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কর্তৃক আমার বিভাগের শিক্ষকদের অপমানিত হতে দেখে আমি লজ্জিত। উক্ত ঘটনার সঠিক বিচার দাবি করছি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, আমার কাছে একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছে। এটা যদি শৃঙ্খলা বিরোধী কিছু হয় তাহলে প্রক্টর স্যারের কনসার্ন লাগবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ঐরকম মন্তব্য করতে পারব না।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, 'আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি অভিযোগপত্র পেয়েছি। এ বিষয়ে আমরা একটা মিটিং করব তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিব।'
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, 'আমি এখন ঢাকায় আছি। এই মূহুর্তে অভিযোগপত্র না পাওয়ায় আমি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। আগামীকাল অফিসে গিয়ে অভিযোগপত্র দেখে মন্তব্য করতে পারব।'












সর্বশেষ সংবাদ
পদত্যাগ করলেন টিউলিপ
কুমিল্লার দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাং ‘রতন গ্রুপের’অন্যতম সদস্য মাইনুদ্দিন আটক
দুটি পিস্তল ও ধারালো অস্ত্রসহ দুই সন্ত্রাসী আটক
কুমিল্লায় দুই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
কুমিল্লা মেডিকেল ছেড়ে কোথায় গেলো শিশুটি?
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে পুলিশে সোপর্দ
প্লাস্টিক জমা দিন গাছের চারা নিন
কুমিল্লায় ‘প্রেমিকের’ সাথে দেখা করতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার দুই নারী
অধ্যক্ষকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার অভিযোগ
অনার্সে জিপিএ-৪ পেয়ে বাজিমাত ভিক্টোরিয়ার সাদিয়া
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২