বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৩ মাঘ ১৪৩১
শীতলতম মাসে শীত কম কেন?
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ১:১১ এএম আপডেট: ১৬.০১.২০২৫ ২:১৩ এএম |

 শীতলতম মাসে শীত কম কেন?



বছরের শীতলতম মাস জানুয়ারির প্রথমার্ধ প্রায় শেষ। ঋতুতে আজ মাঘের আগমন ঘটলেও তাপমাত্রার পারদ বেশ ওপরে। এখনো সারাদেশে তীব্র শীতের দেখা মেলেনি। চলতি মৌসুমে শীত, তার প্রকৃত চরিত্র নিয়ে এলেও পৌষ মাসের শেষ দশকে এসে শীতের চরিত্র দেখা যায়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এবারের মৌসুমে শুরুর দিকে শীতের কামড় অনুভূত হলেও তা শীতের স্বাভাবিক চরিত্র নয়। কুয়াশা কমে যাওয়া ও দিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ দেশের অধিকাংশ জায়গায় শীতের অনুভূতি খুবই কম। যদিও দেশের উত্তরাঞ্চলে বিচ্ছিন্ন ভাবে শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও এ বছর এখনো তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আসেনি। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত তাপমাত্রা নেমেছে সর্বনিম্ন ৭ ডিগ্রিতে।
সর্বশেষ ১১ জানুয়ারি থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে উত্তরাঞ্চলে বিচ্ছিন্ন ভাবে শৈত্যপ্রবাহ ছিল। গত কয়েকদিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত সোমবার রেকর্ড করা হয়েছিল ফেনীতে, এদিন ঢাকায়ও ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীতের দিন অনুযায়ী সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অনেকটা বেশিই বলা যায়। গত কয়েকদিনে রাতের তাপমাত্রাও ১০ থেকে ১৭ ডিগ্রির ঘরে ছিল। এছাড়া ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ঘন কুয়াশার অনুপস্থিতি কম থাকার কারণে এই অঞ্চলে শীতের অনুভূতি খুবই কম।
আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, এবার শীত আছে, তবে তীব্রতা নেই। দিনের তাপমাত্রা খুব বেশি কমছে না। আবহাওয়া একটি নির্দিষ্ট সার্কেল মেনটেইন করে। দু-তিন বছর পর হঠাৎ করে এক মৌসুমে শীত কম পড়ে। গত মৌসুমে তাপমাত্রার পারদ কিন্তু খুব বেশি নিচে নামেনি, তবে ঘন কুয়াশার কারণে শীতের অনুভূতি বেশি ছিল। এবার শীত মোটামুটি এক সপ্তাহ আগেই এসেছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সাগরে একটা লঘুচাপ ছিল। আমার এটি সম্পর্কে জানাই নেই, কারণ এটি গভীর হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু এর প্রভাবে দেশের তাপমাত্রায় বেড়েছে। প্রতি বছর শীতের সময় হালকা বা মাঝারি বৃষ্টি হয়। এ বছর তেমন কোনো বৃষ্টি রেকর্ড হয়নি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের শেষে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও বৃষ্টি হয়নি। ফলে এটাও শীত তীব্র না হওয়ার একটা কারণ।
আফরোজা সুলতানা বলেন, উচ্চ চাপ বলয় খুব বেশি শক্তিশালী হয়নি। উচ্চ চাপের বাতাস খুব বেশি স্ট্রং নয়। শীত এলে এই উচ্চ চাপটা পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত আসে। এবার তা আসেনি।
পশ্চিমা লঘুচাপ না থাকাটা আরেকটি কারণ উল্লেখ করে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, আরব সাগর ও আটলান্টিক থেকে কিছু ময়েশ্চার আসে আমাদের বঙ্গোপসাগর থেকেও কিছু যায়। এই দুটোর কারণে বৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার পশ্চিমা লঘুচাপ না থাকায় বৃষ্টি হয়নি। ফলে তাপমাত্রার তারতম্য হয়নি। দেশের আকাশে মেঘ আছে। বৃষ্টি হলে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যেত। আকাশে মেঘ থাকলে তাপমাত্রা খুব বেশি কমতে পারে না। বলা যায়, মেঘের কিছু প্রভাব রয়েছে।
চলতি শীত মৌসুমের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই মৌসুমে তিন ধাপের শৈত্যপ্রবাহ ছিল। কিন্তু এর একটিও তীব্র শৈত্যপ্রবাহে রূপ নেয়নি। ডিসেম্বরের ১৩ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত দেশে এবছরের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ এসেছিল পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গায়। সেগুলো মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে রূপ নেয়নি। এরপর জানুয়ারির ৩ তারিখ রংপুর বিভাগ ও উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় এবং এক বিভাগে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ছিল।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সর্বশেষ ৯ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত যে শৈত্যপ্রবাহ ছিল সেটি উত্তরাঞ্চল থেকে খুলনা বিভাগেও ছড়িয়েছে। ৯ তারিখ পাঁচ জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে ১০ তারিখ এর আওতা বেড়ে যায় ১০ জেলায়। তবে তাপমাত্রার পারদ ৮ ডিগ্রির নিচে নামেনি। ফলে ১১ জানুয়ারি শৈত্যপ্রবাহের আওতা কমে যায়। এরপর থেকে সারাদেশে বিচ্ছিন্ন ভাবে দু-এক জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও সেটি স্থায়ী হতে পারেনি।
এবার শীত কিছুটা ব্যতিক্রম বলে উল্লেখ করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এই বছরের শীত মৌসুম কিছুটা ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে। জানুয়ারির প্রথম দশক শেষে তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শীতের অনুভূতি অনেকটা কমে গেছে।
এছাড়া সর্বশেষ ২০২৪ সালে সবকিছুই ব্যতিক্রম দেখা গেছে, তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি। এখন নতুন বছর এলেও সিকোয়েন্স কিন্তু এক- অর্থাৎ গ্রীষ্মের পরই শীতের মৌসুম। সুতরাং পুরো বছরই আবহাওয়ার বিরূপ ভাবটা লক্ষণীয়। অন্যদিকে যেহেতু উষ্ণতা ছিল, পাশাপাশি এল-নিনো আর লা-নিনোর একটা প্রভাব রয়েছে। ফলে শীতের ভাবটা কমে গেছে।
জেবুন্নেছা বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই দেখবেন তাপমাত্রা খুব বেশি নিচে নামেনি। গত বছর কুয়াশা বেশি ছিল। ফলে দিনের তাপমাত্রা কম থাকার কারণে মানুষের শীতের অনুভূতি বেশি ছিল। কিন্তু আমাদের তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণে কমেনি। এ বছর মৌসুমের শুরুর দিকে কুয়াশা বেশি থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি হয়নি, ফলে দিনের তাপমাত্রাও কমেনি। শীতও ভারি হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে এবছরের সবকিছু এবনরমাল মনে হচ্ছে। পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে কিছু বৃষ্টি হয়, শীতের আমেজ আসে। এবার সেটাও দেখা যায়নি।
এ বছর রাজধানীতেও শীতের তীব্রতা দেখা যায়নি। তিন বারে শৈত্যপ্রবাহ হলেও সেটির ছোঁয়া রাজধানীতে আসেনি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ৯ বছরে ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে মাত্র একবার। আশপাশের এলাকা থেকে মূল ঢাকায় তাপমাত্রা থাকছে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
ঢাকায় শীত কম হওয়ার কারণে সবুজায়ন ও জলাভূমি কমে যাওয়ার বিপরীতে কংক্রিট বেড়ে যাওয়া ও শহরের বায়ুদূষণকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সারাদেশের তুলনায় ঢাকায় শীত অনেকটা কম। সারা পৃথিবীতে ২০২৪ সালটা উত্তপ্ত বছর। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েই চলছে। এর একমাত্র কারণ গ্রিন হাউজ ইফেক্ট। অন্যদিকে প্রাকৃতিক জলাধার ও সবুজায়ন কমে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে পুকুর ভরাট হচ্ছে, বৃক্ষ ক্রমাগত নিধন হচ্ছে, গ্যাস ও এসির ক্রমাগত বৃদ্ধি উষ্ণতা বাড়াচ্ছে। ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি, চারদিকে ইটভাটা, শিল্পাঞ্চলে বায়ুদূষণ বাড়ছে। ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর শীর্ষে থাকছে। দূষিত কণা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, এসব দূষিত কণা তাপকে আটকে রাখে। ফলে অতিরিক্ত যতটুকু নামার কথা ততটুকু নামে না। দিনের বেলা সূর্যের তাপ আসার পর তা রাতেও জমে থাকছে। ফলে রাতেও তাপমাত্রা খুব বেশি কমছে না।
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইনটেনসিটি, ফ্রিকোয়েন্সি, টাইমিং, ন্যাচার সবই বদলাচ্ছে। এখন আবহাওয়া আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে যাচ্ছে। সৌদি আরবে বৃষ্টি হচ্ছে, আমেরিকায় সব শুকিয়ে দাবানল হচ্ছে।
‘আমাদের এখানেও অনেক কিছু প্রেডিক্ট করা যাচ্ছে না। আজ মাঘ মাসের শুরু। দেখা যাবে দশদিন পর প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ। এটি হতে পারে কিংবা নাও হতে পারে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন এমন। তাই আবহাওয়ার এক্সট্রিম অবস্থান চিন্তা করে পরিকল্পনা নিতে হবে বলে জানান এই জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ।
আইনুন নিশাত বলেন, ‘এখন নিয়ম অনুযায়ী কিছু হচ্ছে না। পৃথিবীর সাথে সূর্যের আপেক্ষিক অবস্থান রয়েছে। সূর্যের তাপে পৃথিবী উত্তপ্ত হয়। পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডলের অবস্থা এখন এমন; উত্তপ্ত হওয়ার অবস্থা অসমান হয়ে যাচ্ছে। পরিপ্রেক্ষিতে বৃষ্টির অনিয়ম, ঠান্ডা বাতাসের সময় পরিবর্তন হচ্ছে।’














সর্বশেষ সংবাদ
অর্ধলক্ষাধিক বইয়ের সমাহার কুমিল্লার গণগ্রন্থাগারে
চৌদ্দগ্রামে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ফোন নাম্বার হ্যাক
জামায়াত নেতা মাহবুবর রহমানের মায়ের ইন্তেকাল
ব্রাহ্মণপাড়ায় বিজিবি অভিযানে গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় কুমিল্লার এক যুবক নিহত
কুমিল্লায় একদিনে তিন লাশ উদ্ধার
যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম স্মরণে শোক সভা
কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না
চৌদ্দগ্রামে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২