ব্যাপক
সমালোচনা ও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে কয়েক খাতে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত
থেকে পিছু হটলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মোবাইল ফোনে কথা বলা,
ইন্টারনেট ব্যবহারসহ তথ্যপ্রযুক্তি সেবার ওপর ২৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে
আগের মতো ২০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। ওষুধের ওপর বর্ধিত
ভ্যাটও প্রত্যাহার হতে পারে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি)
রেস্তোরাঁ সেবায় ভ্যাট আগের হারে ফেরত নেয় এনবিআর। রেস্তোরাঁর খাবারে বিলের
ওপর ১৫ শতাংশের পরিবর্তে আগের মতো ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া
হয়। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পোশাক,
নন-এসি হোটেলসহ বেশ কিছু খাতের ভ্যাট হার কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। এসব
খাতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল। ভ্যাট হার কমানোর এই
সিদ্ধান্তের বিষয়টি কয়েক দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে।
গত
৯ জানুয়ারি এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও শুল্ক
বাড়ানো হয়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে হঠাৎ করে বিপুলসংখ্যক পণ্য ও সেবায়
ভ্যাট বাড়ানোয় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে অন্তর্র্বতী সরকার।
জানতে
চাইলে এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব বদরুজ্জামান মুন্সী বলেন, মূসক ও ভ্যাট
সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে রেস্তোরাঁ সেবার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ভ্যাট
বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে সরকার এই সিদ্ধান্ত কিছুটা পরিবর্তন
এনেছে। এ খাতের ভ্যাট পুনরায় ৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে
অনুযায়ী রাজস্ব বোর্ড কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আশা করছি আজ অথবা রোববারের
মধ্যে এসআরও জারি হবে।
তিনি বলেন, আরও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পণ্যের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
জানা
গেছে, মোবাইল ফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিফোন সেবায়
(টকটাইম, ইন্টারনেট ব্যবহার ইত্যাদি) সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে
২৩ শতাংশ করেছিল এনবিআর। এখন তা কমিয়ে আগের মতো ২০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়েছে।
একইভাবে ইন্টারনেট সংস্থার (আইএসপি) সেবার ওপর আরোপিত ১০
শতাংশ সম্পূরক শুল্কও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। গত ৯ জানুয়ারি
এই সেবার ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল এনবিআর।
তৈরি পোশাকের ওপর
থেকেও ৫ শতাংশ ভ্যাট কমানো হতে পারে। নিজস্ব ব্র্যান্ডের পোশাক বিপণনের
ক্ষেত্রে ভ্যাট হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল। এখন তা
১০ শতাংশ করা হতে পারে। নন-এসি হোটেলের ক্ষেত্রেও ভ্যাট হার ১৫ থেকে কমিয়ে
১০ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারির আগে এই খাতে
ভ্যাট হার ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। এছাড়া মোটরগাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপের ভ্যাট
হারও কমিয়ে আগের হারে অর্থ্যাৎ ১০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই খাতে
ভ্যাট ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল।
এদিকে, ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী
পর্যায়ে ভ্যাটের হার ২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৩ শতাংশ। এখন
বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
নিজস্ব ব্র্যান্ডের
পোশাক বিপণনের ক্ষেত্রে ভ্যাট হার কমিয়ে ১০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত
৯ জানুয়ারি জারি হওয়া অধ্যাদেশে এই খাতে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে
১৫ শতাংশ করা হয়েছিল। হজযাত্রীদের হজ পালনের খরচ কমাতে তাদের বিমান টিকিটের
ওপর আবগারি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।
আকাশপথে বিদেশযাত্রায় দূরত্বভেদে আবগারি শুল্ক ২০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা
বাড়ানো হয়েছিল। বাড়তি সেই আবগারি শুল্কের ক্ষেত্রে ছাড় পেতে যাচ্ছেন
হজযাত্রীরা।
এ ছাড়া মিষ্টির দোকানেও ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০
শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ৯ জানুয়ারির আগে মিষ্টির দোকানে ভ্যাট হার
ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ।