নিজস্ব
প্রতিবেদক: কুমিল্লার বুড়িচংয়ে বালু নিয়ে খেলার অপরাধে চার বছরের এক
শিশুকে ডোবার গভীর পানিতে ছুড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় রোগী শিশু মিফতাহুল মাওয়ার মা শামসুন্নাহার তানিয়া প্রতিবেশী
শিক্ষক হাজী শাহজাহানের বিরুদ্ধে বুড়িচং থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা
দায়ের করেছেন। হাজী শাহজাহান বুড়িচং ফজলুর রহমান কলেজ অফ টেকনোলজি এর
শিক্ষক।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে জেলার বুড়িচং উপজেলার সদর
ইউনিয়নের অন্তর্গত বুড়িচং পূর্ব পাড়া মঞ্জুর আলী সর্দার বাড়িতে এ ঘটনা
ঘটে।
এ ঘটনার প্রতিবাদ করে মিফতাহুলের মা প্রতিবাদ জানিয়ে হাজী
শাহজাহানের সাথে বাকবিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে
সমালোচনার জন্ম দেয়।
শিশু মিফতাহুল মাওয়াকে প্রতিবেশীদের সহায়তায় ডোবা
থেকে তুলে প্রথমে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেয়া হয়, পরে তাকে
নিয়ে এসে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
মিফতাহুলের মা
শামছুন নাহার তানিয়া বলেন, আমার ছোট মেয়েটা রাস্তার বালু নিয়ে খেলছিল, সে
তো ছোট মানুষ - অপরাধ হলেও কি একজন শিক্ষক মানুষ একটা শিশু বাচ্চাকে এভাবে
পানিতে ফেলতে পারেন! মেয়েটার জিহ্বা কেটে গেছে, ভয়ে খিচুনি চলে আসছে। তাকে
বুড়িচং থেকে কুমিল্লা মেডিকেলে নিয়ে আসছি।
শামসুন নাহার তানিয়া এই
ঘটনার বিচার চেয়ে বলেন, অপরাধ থাকলে আমাদেরকে বলতে পারতো, কিন্তু যেহেতু
আমাদের এসব বলে নাই আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়,
বৃহস্পতিবার বিকালে বুড়িচং থানার পূর্ব পাড়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ নজির
আহম্মেদের দুই মেয়ে মোসাঃ মিফতাহুল মাওয়া (৪) এবং গালিবা সুলতানা (১০) বালি
নিয়ে খেলা করছিলেন ওই এলাকার মোঃ শাহ জাহান (৫০) এর বাড়ির সামনে। এসময় একই
এলাকার বাসিন্দা ও তাদের প্রতিবেশী মোঃ শাহ জাহান মিফতাহুল মাওয়াকে মারধর
করে এবং কোলে তুলে পুকুরে ফেলে দেয়। ছোট বোনকে পানিতে ফেলে দেয়ার ঘটনা দেখে
গালিবা চিৎকার করলে শাহ জাহান তাকেও মারধর করে। চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন
এগিয়ে এলে অভিযুক্ত শাহজাহান ওই জায়গা থেকে চলে যায়। প্রতিবেশীরা আহত দুই
শিশুকে উদ্ধার করে প্রথমে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
সেখানে চিকিৎসক মিফতাহুল মাওয়ার অবস্থার অবনতি দেখে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। বর্তমানে শিশুটি সেখানে চিকিৎসাধীন।
উপজেলা
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোঃ মীর হোসেন জানান, ভাগ্য ভালো যে বড় কোন
দুর্ঘটনা ঘটেনি। ছোট বাচ্চা তার উপর সাঁতার জানে না - হঠাৎ পানিতে ফেলে
দেয়ায় যে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যখন নিয়ে
আসা হয়েছিল আমরা তাকে চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করে তুলেছিলাম। সে অনেক ভয়
পেয়ে গিয়েছিল।
এ বিষয় নিশ্চিত করে বুড়িচং থানার ওসি আজিজুল হক বলেন,
আজ (শুক্রবার) সকালে শিশুর মা বাদী হয়ে বুড়িচং থানা একটি শিশু নির্যাতন
মামলা করেন করেন। আমরা আসামিদের ধরার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেছি।
সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা ভিডিওতে দেখা যায় মিফতাহুলের মা যখন ওই
ব্যক্তিকে বলছিলেন, "আপনার মধ্যে কি মনুষ্যত্ব নেই আপনি আমার বাচ্চাকে
পানিতে ফেলে দিলেন। আপনি একজন সামাজিক মানুষ হয়ে এমন কাজ কিভাবে করতে
পারলেন। একটু বালু ফেলে দিয়েছে বলে আপনি এভাবে আমার বাচ্চাকে পুকুরে ফেলে
দিবেন। আপনি কি একটা যুক্তিসঙ্গত কাজ করলেন এটা। আপনি আমার বাচ্চাকে ফেলে
দেওয়ার পর না উঠিয়ে উল্টো বলছেন যে বাচ্চাটা মরে যাক।" তখন বাচ্চাকে ফেলে
দেওয়া ওই ব্যক্তি পাল্টা জবাবে বলেন, "তোমার বাচ্চা নাকি কার বাচ্চা এটা
আমি দেখবো না। আমার কাছে বালির মূল্য বেশি, মানুষের কোন মূল্য নাই৷ আর আমি
সামাজিক মানুষ ও না৷ আজকে ২০ দিন ধরে সবাইকে বলতেছিলাম। কেউ আমার কথা
শুনেনি। তোমার বাচ্চা এখানে এসে বালি ধরেছিলো৷ তোমার বাচ্চা আমার এখানে
আসবে কেন।"