বুধবার ২২ জানুয়ারি ২০২৫
৯ মাঘ ১৪৩১
ট্রাম্পের শাসনকাল নিয়ে কতটুকু আশাবাদী হওয়া যায়
গাজীউল হাসান খান
প্রকাশ: সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১:২৬ এএম আপডেট: ২০.০১.২০২৫ ২:২৭ এএম |

 ট্রাম্পের শাসনকাল নিয়ে কতটুকু আশাবাদী হওয়া যায়
যে বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একজন কট্টর সাম্রাজ্যবাদী, সে অর্থে ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প নন। যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তির অবস্থানে ধরে রাখতে বাইডেন যেভাবে তাঁর সামরিক ও আধিপত্যবাদী কৌশল প্রয়োগ করেছেন, সেখানে ট্রাম্প তাঁর দেশের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে বিশ্ববাণিজ্য ও অর্থনীতির মারপ্যাঁচকে সব সময়ই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। রিপাবলিকান দলীয় হলেও ট্রাম্প দৃশ্যত যুদ্ধবাজ নন। বাইডেন দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পেলে ডেমোক্রেটিক দলীয় হয়েও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে একটি বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতেন।
এ ধারণা ওয়াশিংটন ডিসির তথ্যাভিজ্ঞমহলের। তাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হচ্ছে, ডেমোক্র্যাটরা রাজনৈতিক মূল্যবোধগতভাবে অধিকতর সহনশীল হলেও পরাশক্তিগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠতে বাধ্য। কারণ পূর্ব দিগন্তে চীনের অপ্রতিরোধ্য উত্থান ঠেকানো এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমে ক্রমে শক্তিশালীভাবে মাথা তুলে দাঁড়ানোকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাধর রাজনীতিকরা একটি অশনিসংকেত বলে মনে করেন। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্টের তুলনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত শ্রেষ্ঠত্ব কিংবা আধিপত্য বজায় রাখার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ করার পরিবর্তে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করে অন্যদের দুর্বল অবস্থানে ঠেলে দিতে বেশি আগ্রহী। এতে তাঁর কৌশলগত মিত্র, এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ট্রাম্প নীতিগতভাবে পিছু হটবেন না। কারণ ওপরে উল্লেখিত তথ্যাভিজ্ঞমহলের মতে, ট্রাম্প একজন কট্টর পুঁজিবাদী ব্যবসায়ী। তিনি রাজনীতি কিংবা কূটনীতির চেয়েও তাঁর ব্যাবসায়িক স্বার্থকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন।
কারণ তিনি মনে করেন, একটি শক্তিশালী অর্থনীতিই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি, উন্নয়ন বা সমৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে, যুদ্ধবিগ্রহ কিংবা সংঘাত-সংঘর্ষ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম টার্মের পর ক্ষমতা হারিয়ে ফেললেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো মানসিক পরিবর্তন হয়েছে বলে অনেকে মনে করে না। তাঁর বাহ্যিক আচার-আচরণ একজন ভাবগম্ভীর সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির মতো না হলেও তাঁর কাছে প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ। তাঁর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হচ্ছে বিশ্বের সর্বাগ্রে। মুখে স্বীকার না করলেও তিনি ‘শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্ববাদে’ বিশ্বাস করেন।
সে অর্থে অনেকের কাছে তিনি একজন সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী ব্যক্তিত্ব। তিনি কোনো প্রথাগত রাজনীতি কিংবা প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা নিয়ে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্ষমতার বলয়ে প্রবেশ করেননি। তবে প্রথাগত সব কিছুকে অগ্রাহ্য করার তাঁর রয়েছে এক দারুণ স্পর্ধা। অনৈতিকভাবে হলেও তাঁর কাছে অর্থবিত্ত কিংবা অর্থনৈতিকভাবে শক্তি-সামর্থ্য অর্জনই হচ্ছে সবচেয়ে বড় রাজনীতি বা কূটনীতি। জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রকৌশল-প্রযুক্তি কিংবা সামরিক ও বেসামরিকÍসব ক্ষেত্রেই তাঁর কাছে অগ্রাধিকার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পুঁজিবাদী অর্থনীতির। সে ক্ষেত্রেও বিশ্বব্যবস্থাকে অগ্রাহ্য করে তিনি অপকৌশলের আশ্রয় নিতে দ্বিধা বোধ করেন না। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিতভাবে করারোপ কিংবা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতে দ্বিতীয়বারের মতো এবারও তিনি যে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী এক চরম অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন না, তার ন্যূনতম কোনো নিশ্চয়তা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে চীন, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ এবং এমনকি ভারত ও অন্যদের ওপর বর্ধিত করারোপ কিংবা বিধি-নিষেধ জারির হুমকি দিতে শুরু করেছেন। এতে ক্রমেই এখন অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করেছে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে একটি বিশাল বাজার, যাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কারো নেই। তার পরও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক দক্ষিণ বা ভিন্ন অর্থে নবগঠিত ব্রিকসের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে ট্রাম্পের শাসনকালে বিশ্ববাণিজ্যের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে।
উল্লেখিত এমন একটি পরিস্থিতিতে প্রজ্বলিত আগুনে ঘি ঢালার মতো ট্রাম্পের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আরেক ধনকুবের ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক। সর্বাধুনিক ব্যাটারিচালিত গাড়ি টেসলার নির্মাতা এবং আন্তর্জাতিকভাবে ইন্টারনেট প্রযুক্তি ‘স্টারলিংক ইন্টারনেট’-এর উদ্ভাবক মালিক মাস্ক এখন ট্রাম্পের সঙ্গে সগৌরবে মাঠে নেমেছেন বিশ্ববাজার দখল করতে। সে কারণে ইন্টারনেট বাজার এবং জ্বালানিসহ ভারতের বাণিজ্য এক অদৃশ্যপূর্ব হুমকির মুখে পড়েছে। একদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যেমন রয়েছে ব্যাবসায়িক গ্রুপ আদানি কিংবা আম্বানি, তেমনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের রয়েছেন শক্তিশালী সহযোগী ইলন মাস্ক। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গুজব উঠেছে যে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র চালাবেন কে? ডোনাল্ড ট্রাম্প, না ইলন মাস্ক? ভারতে আদানি গ্রুপ বর্তমানে ইন্টারনেট পরিষেবা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। সে বিশাল বাজারে ঢুকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ইলন মাস্কের স্টারলিংক ইন্টারনেট পরিষেবা। তার সঙ্গে রয়েছে সর্বাধুনিক ব্যাটারিচালিত টেসলার মোটরযান। তা ছাড়া ভারতের বিশাল বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী রপ্তানির ব্যাপারে ট্রাম্প অত্যন্ত তৎপর হয়ে উঠেছেন। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বিশাল। সে ব্যবধান অতি দ্রুত ঘুচিয়ে আনতে তৎপর হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প। এর পাশাপাশি ‘এইচওয়ানবি’ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ভারতের লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষের ভবিষ্যৎ এখন প্রায় সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। কারণ তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষমতাসীন হওয়ার পরপরই ট্রাম্প সে ভিসার সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিতে পারেন। সেখানে ভারতীয়দের জায়গায় কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ নাগরিকরা। কারণ গত নির্বাচনে তারাই ট্রাম্পকে পাস করিয়েছে। সেসব কারণে এখন মোদির কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তা ছাড়া রাশিয়াসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ থেকে সামরিক যুদ্ধ সরঞ্জাম কিংবা ভারী অস্ত্রশস্ত্র কেনার কারণে ভারতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কৌশলে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞাও জারি করতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় পাকাপোক্ত হওয়ার আগে যে দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে তা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর ব্যাপারে ট্রাম্পের শান্তি উদ্যোগ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিবাদী ইসরায়েল ও গাজার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ থামাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর একটি বিশেষ টিম গঠন করেছেন। সেই টিম এরই মধ্যে পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। গত ২৭ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় নবনির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প জেনারেল কিথ কেলগ (অব.)-কে বিশেষ দূত মনোনীত করেছেন রাশিয়া-ইউক্রেন বিষয়ে কাজ করার লক্ষ্যে। জেনারেল কেলগ এরই মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কিছুদূর এগিয়েছেন বলে জানা গেছে। তা ছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি হস্তক্ষেপের মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি গাজার হামাস যোদ্ধা এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হয়েছে। এই চুক্তিতে ছয় সপ্তাহের প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির রূপরেখা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার ও জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি অন্যতম প্রধান। ১৯ নভেম্বর থেকে এই প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি বাস্তবে কার্যকর হবে বলে জানা গেছে। এতে জাতিসংঘের মহাসচিবসহ বিশ্বনেতারা এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ যুদ্ধবিরতি নিয়ে একাধিক পোস্ট করেছেন বলে জানা গেছে। ট্রাম্প আন্তরিকভাবে এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘অবশেষে মধ্যপ্রাচ্যে আবার শান্তি ফিরে আসবে।’ কিন্তু এ ক্ষেত্রে ইহুদিবাদী ইসরায়েল ও তার আগ্রাসনবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভূমিকা নিয়ে শান্তিকামী বিশ্ববাসী যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের রয়েছে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। তা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে গভীর পারিবারিক বন্ধন।
সমাজতান্ত্রিক প্রেক্ষাপট ও ঐতিহ্যের অধিকারী রাশিয়ার প্রাজ্ঞ রাষ্ট্রপ্রধান ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অধিনায়ক ডোনাল্ড ট্রাম্পের রয়েছে এক অদৃশ্য কিংবা অঘোষিত গভীর সম্পর্ক। সে সম্পর্ক কিভাবে গড়ে উঠেছিল, অতীতের সে ঘটনাবলি সম্পর্কে কারোরই সম্যক ধারণা নেই। কিন্তু এই দুজনের মধ্যে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে অনেকে মনে করে। সে কারণেই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি নির্বাচিত হলে এক দিনের মধ্যেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ থামানো সম্ভব। উল্লেখিত সে যুদ্ধ থামানোর প্রক্রিয়া এখন দ্রুত চলমান। তবে চীনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক যে সামনে খুব একটা সুখকর কিংবা শান্তিপূর্ণ হবে না, তা নিয়ে ওয়াকিফহাল মহলের যথেষ্ট উদ্বেগ কিংবা উৎকণ্ঠা রয়েছে। এর মধ্যে তাইওয়ানের বিষয়টি আপাতত পাশে সরিয়ে রাখলেও আবার যে উচ্চ পর্যায়ের একটি বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বহু আগে থেকেই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও নতুন পর্যায়ে বর্ধিত করারোপের বিষয়টি ট্রাম্প সামনে নিয়ে এসেছিলেন। তবে এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প চীনের দিকে শক্তিশালীভাবে বাণিজ্যের ঢিল ছুড়লে যে চীন থেকে আরো শক্তিশালী পাটকেলটি ফিরে আসবে না, তা কেউ বলতে পারে না। চীনের নেতা শি চিনপিং এরই মধ্যে তাঁর গৃহীত বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা বলেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ভাবিয়ে তুলবে বলে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (নিউইয়র্ক) অধ্যাপক জেফ্রি স্যাকস। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করলে বিশ্ববাণিজ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যসামগ্রীর বাজার এবং ভোক্তাগোষ্ঠীকে যথেষ্ট খেসারত দিতে হতে পারে।
একটি বহুপক্ষীয় বিশ্ব গড়ে তোলা কিংবা বৈশ্বিক দক্ষিণের (ব্রিকস) অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প কী ধরনের প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করতে পারেন, তা এখনো পরিষ্কারভাবে ধারণ করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া ট্রাম্প ডলারের আন্তর্জাতিক প্রভাবকে ধরে রাখার জন্য কী কী ব্যবস্থা নিতে পারেন, তা-ও এখনো অনেকের কাছে অজানা। তবে এসব ব্যাপারে ট্রাম্প যে সৌদি আরব, আমিরাত, কুয়েত ও কাতারের দ্বারস্থ হবেন, সে ব্যাপারে বিশেষ সন্দেহ নেই। ট্রাম্প ব্রিকসকে ভেঙে দেওয়া এবং ডলারের প্রভাব অক্ষুণ্ন রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। আদালতে দণ্ডিত একজন অপরাধী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আগ বাড়িয়ে কিছু বলা হয়তো সম্ভব নয়। তবে তাঁর শাসনকালে বিভিন্ন পরাশক্তির সঙ্গে যে বিভিন্ন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে তাঁর সাহায্য-সহযোগিতায় যে ভাটা পড়বে, তা-ও অনেকে সন্দেহ করছে। কারণ ট্রাম্প চান ন্যাটোর সদস্যরা তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট অতীতের ২ থেকে ৫ শতাংশে উন্নীত করুক, কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় ফ্রান্স, জার্মানি এবং অন্যদের জন্য তা কষ্টসাধ্য হবে। তা ছাড়া ক্রয়কৃত অস্ত্রশস্ত্রের বেশির ভাগই হয়তো বা হতে হবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা। সেসব প্রশ্নেই ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিভিন্ন মতবিরোধ কিংবা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতে পারে। ট্রাম্প ইরানের কিংবা তুরস্কের সামরিক অগ্রগতিকে সহজভাবে নিতে পারছেন না। মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের স্বার্থে ট্রাম্প ইরান, তুরস্ক কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করতে পারেন। ট্রাম্প প্রশাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই পরিষ্কারভাবে কেউ কিছু বলতে পারছে না। সবাই এ ব্যাপারে একটি কথাই স্পষ্ট করে বলছে আর তা হচ্ছে, দেখা যাক কী হয়!
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক















সর্বশেষ সংবাদ
বিয়ে করতে আর কর দিতে হবে না
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিলে আবেদন করবে পুলিশ
গোমতী নদীর ভাঙ্গনে বিলীন ফসলী জমি বাড়ীঘর
‘দেশের প্রয়োজনে প্রশিক্ষিত বিএনসিসি সদস্যরা সশস্ত্রবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারবে’
শিশুকে পুকুরে ফেলে দেওয়া সেই শিক্ষক কারাগারে
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
এবার সাবেক এমপি বাহার ও তার স্ত্রী-মেয়ের নামে দুদকের মামলা
কুমিল্লায় বাড়বে দুই লাখ ৩৮ হাজার নতুন ভোটার
আলী ইমাম মজুমদার ভূমি মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পেলেন
বিপুল পরিমাণফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার
পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের পোশাক বদলে যাচ্ছে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২