বাড়ছে নাবাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি।
আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের বাস্তবতায় বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে
অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা কাক্সিক্ষত মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে
পারেননি।
তাই ভালো ও বেশি আয়ের পেশায় বাংলাদেশিদের নিয়োগ কম। আবার দক্ষ
জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্ব দিয়ে কখনো ভেবেছে বলেও মনে হয়
না। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর
রেকর্ডসংখ্যক কর্মী বিদেশের মাটিতে পা রাখলেও বাড়েনি পেশাজীবী কর্মীর
সংখ্যা। অভিবাসনবিষয়ক গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস
রিসার্চ ইউনিট (রামরু) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ বছর ধরে
পেশাজীবী কর্মীর সংখ্যা আশানুরূপ নয়।
রামরুর প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালে
মূল জনশক্তির ৪.১৪ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে মূল জনশক্তির ৪.৫৯ শতাংশ পেশাজীবী
কর্মী বিদেশে কাজ করতে গেছেন।
বৈদেশিক কর্মসংস্থানের দিক থেকে
পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট পিছিয়ে আছে। এর একটি
প্রধান কারণ পেশাজীবী জনশক্তি তৈরিতে আমাদের পিছিয়ে থাকা। পেশাজীবী জনশক্তি
রপ্তানির মাধ্যমে আরো বেশি রেমিট্যান্স আয় সম্ভব হতে পারে।
এর পাশাপাশি
নতুন শ্রমবাজারও খুঁজে বের করতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদার
পরিবর্তন ও দক্ষতার দিকে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। ভালো ও বেশি আয়ের পেশায়
বাংলাদেশিদের নিয়োগ কম। আর সে কারণেই আমাদের লক্ষ্য হওয়া দরকার পেশাজীবী
কর্মী। দক্ষ পেশাজীবী কর্মী পাঠানোর সুবিধাও অনেক।
একজন পেশাজীবী কয়েকজন অদক্ষ শ্রমিকের সমান রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয় দেশে পাঠাতে পারেন।
যেকোনো
দেশে মানুষই সম্পদ। মানুষের শ্রমে-ঘামে-মেধায়-পরিকল্পনায় একটি দেশ বা
জাতির অগ্রগতি নিশ্চিত হয়। দেশের অভ্যন্তরে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা যখন
ক্রমেই বাড়ছে, তখন দক্ষ পেশাজীবী গড়ে তোলার বিষয়টি আরো গুরুত্ব নিয়ে সামনে
আসছে। বিশ্ববাজারের চাহিদার ভিত্তিতে পেশাজীবীদের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে
যোগাযোগ করতে হবে। অনেক দেশ চাকরির বাজার অনুযায়ী বা ‘জব মার্কেট
ওরিয়েন্টেড’ শিক্ষাব্যবস্থা সাজায়। জনশক্তিকে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে
তুলতে পারলে জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত হবে।
জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে
রূপান্তরের লক্ষ্যে বহুবিধ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। আমূল পরিবর্তন আসতে হবে
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়। শিক্ষার্থীদের গুণগত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও
জীবনব্যাপী শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে অন্তত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সামলাতে
পারার মতো দক্ষ জনশক্তি ও পেশাজীবী তৈরি করা যাবে। আমাদের তরুণরা সামান্য
সহযোগিতা পেলে পেশাজীবী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলে বাংলাদেশকে শিল্প বিপ্লবের
নেতৃত্বের জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। উপযুক্ত পেশাজীবী গড়ে তুলে আন্তর্জাতিক
বাজারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ সামনের সারিতে থাকবে, এটিই আমাদের
প্রত্যাশা।