জীবনে
প্রথম সামনাসামনি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের খেলা লাঠিখেলা ও মোরগ লড়াই দেখলো
শিক্ষার্থীরা। বৃহষ্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা জিলা স্কুল ও নবাব ফয়জুন্নেছা
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথমবারের মত এসব প্রাচীন খেলাধুলা
পরিবেশন করা হয়। মাঠ ভর্তি দর্শক এসব নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা এসব
প্রাচীন খেলা দেখে অভিভূত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তারুণ্যের উৎসব ২০২৫
উপলক্ষে এই লাঠি খেলা ও মোরগ লড়াইয়ের প্রদর্শনের আয়োজন করে কুমিল্লা জেলা
প্রশাসন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা থেকে কুমিল্লায় আসে এই লাঠিয়াল ও মোরগ লড়াইয়ের দল।
কুমিল্লা
নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ঘণ্টাব্যাপি লাঠি খেলার
মুহুর্মুহু হাততালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো স্কুল। এর পরেই শুরু হয় মোরগ
লড়াই। দুই মোরগের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আরো বেশি আনন্দ পায় শিক্ষার্থীরা।
নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাবাসসুম শৈলী, আগে কখনো লাঠিখেলা দেখিনি। শুধু শুনেছি। এবারই প্রথম দেখলাম ভালো লেগেছে।
একই শ্রেণীর সাবিকুন্নাহার রাহী বলেন, জীবনে প্রথম লাঠি খেলা দেখলাম, আমি খুব উপভোগ করেছি। এর আগে ছবিতে দেখেছি, ভিডিও দেখেছি।
দশম
শ্রেণীর ছাত্রী নাফিসা ভূঁইয়া বলেন, মোরগ লড়াই দেখে ভালো লেগেছে। এসব খেলা
সম্পর্কে জানলেও কখনো সামনাসামনি দেখা হয় নি। দুপুরেই কুমিল্লা জিলা
স্কুলে খেলা দেখান লাঠিওয়ালারা।
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র গোলাম রওফুর
রাহিম বলেন, গানের তালে তালে বয়ো বৃদ্ধ মানুষজন যেভাবে খেলা দেখালেন আমরা
সবাই তা উপভোগ করেছি। গ্রামীন এসব ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এসব খেলার প্রদর্শনী
হলে ভালোই হবে।
তারুণ্যের উৎসব ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থেকে লাঠি
খেলার দল এবং মোরগ লড়াইয়ের দলকে নিয়ে আসে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। সকালে
কুমিল্লা টাউন হল মাঠে প্রথম প্রদর্শনী দেখে নগরবাসী। লাঠিখেলার দলনেতা
ষাটোর্ধ হারুন মিয়া জানান, সাদা ফতুয়া ও ধূতি পড়ে, পায়ে ঘুংঘুর এবং বালা
লাগিয়ে প্রাচীন যোদ্ধাদের সাজে নানান শারীরিক ও লাঠিয়ালের কৌশল দেখানো হয়।
বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে দুই ভাগে বিভক্ত লাঠিয়ালেরা কসরৎ দেখান। এতেই
মানুষ আনন্দ পায়। আমার দাদা বাবার কাছ থেকে এখেলা শিখেছি।
৫৫ বছর বয়সী
লাঠিয়াল দফাদার শাহজাহান বলেন, বাপ দাদার কাছ থেকে এখেলা শেখা। এখন সব
জায়গায় মানুষ এসব খেলা চিনেও না। আমরা সারা দেশ ঘুরে ঘুরে খেলা দেখাই। দলের
এক এক জন জীবিকার তাগিদে এক এক কাজ করে।
একই এলাকা থেকে আসা মোরগ
লড়াইয়ের মোরগের মালিক শাহ জাহান জানান, মোরগ লড়াই নিয়ে এক সময় দেশের
বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় লড়াইয়ের আয়োজন হতো।এখন কমে গেছে। সবই জানেও না মোরগ
লড়াই করে কিভাবে। সরাইলের মোরগ লড়াইয়ের জন্য বিখ্যাত।
সকালে অনুষ্ঠান
উদ্বোধনে এসে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়সার বলেন, আজকে
খেলাধুলার যে প্রতিযোগিতাগুলা আমরা আয়োজন করেছি । এটি একটি সুস্থ বিনোদন।
আমাদের বর্তমান যে প্রজন্ম রয়েছে । তারা যেন সুস্থ দেহ এবং সুস্থ মন নিয়ে
বেড়ে উঠে সেটাই কাম্য। পাশাপাশি আমাদের দেশের যে ঐতিহ্য মোরগ খেলা, লাঠি
খেলা এগুলো আমরা সচরাচর দেখতে পাই না। সেগুলোর সাথে আমাদের দেশের যারা
নাগরিক রয়েছে । যারা তরুন সমাজ রয়েছে । তাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই আমাদের
মুল উদ্দেশ্য।
লাঠিখেলা ও মোরগ লড়াই অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন
কুমিল্লার স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক এসএম গোলাম কিবরিয়া,, অতিরিক্ত জেলা
প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা)মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, এনডিসি মোঃ
ফরিদুল ইসলাম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব
জিয়া উদ্দিন মুহাম্মদ রুবেলসহ অন্যান্যরা।