দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে উঠতি বয়সী কিছু কিশোর। তারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মাস্তানি করে। রাস্তাঘাটে ছিনতাই করে।
রক্তারক্তি,
খুুনাখুনি করে। এই কিশোর-তরুণ গ্যাং। হত্যা, মাদক ব্যবসা, ডাকাতি, ছিনতাই,
চাঁদাবাজি, জমি দখল থেকে শুরু করে এসব অপরাধী সুযোগ পেলে নারীদেরও
উত্ত্যক্ত করে। বিগত সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত
এপ্রিলের আগে রাজধানীতে অন্তত ১২৭টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় ছিল। সারা দেশে ছিল
২৩৭টি। এসব গ্যাংয়ের সদস্য ছিল দুই হাজারের বেশি।
রাজধানীর মানুষের
অশান্তির বড় কারণ এখন কিশোর গ্যাং। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে বলা
হয়েছে, রাজধানীর অনেক এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দৌরাত্ম্য রয়েছে, যা
এলাকাবাসীকে আতঙ্কের মধ্যে রেখেছে।
ঢাকার মধ্যে আদাবর ও মোহাম্মদপুর
এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সবচেয়ে বেশি, প্রায় দুই হাজার সদস্য রয়েছে। মিরপুর,
উত্তরা, পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লা, ডেমরাসহ রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায়
কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আগের চেয়ে বেড়েছে। শুধু রাজধানী
নয়, সারা দেশেই এরা বেপরোয়া। ঢাকার বাইরে অনেক জেলা, উপজেলা ও প্রত্যন্ত
এলাকায়ও এমন কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রবের তথ্য রয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে।
গত পাঁচ মাসে দেশের সর্বত্র কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ব্যাপক বেড়েছে।
হত্যা,
ছিনতাই, ডাকাতিসহ রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে অর্থের বিনিময়ে ভাড়াটে অপরাধী
হিসেবে তারা কাজ করছে। প্রতিদিনই তাদের আটক করা হচ্ছে। জামিন নিয়ে ফের তারা
একই কাজ করছে।
অন্যদিকে সরকার পরিবর্তনের পর তালিকাভুক্ত শীর্ষ
সন্ত্রাসী, পেশাদার খুনিসহ বেশ কয়েকজন ভয়ংকর অপরাধী জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।
এর মধ্যে রয়েছেন একাধিক খুনের আসামি, যাঁরা জেল খেটেছেন ২০ থেকে ২৪ বছর
পর্যন্ত। অথচ জামিনে বের হয়েই নিজ নিজ অপরাধের সাম্রাজ্যে আধিপত্য
বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন তাঁরা। দখল, চাঁদাবাজির
পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে হত্যাচেষ্টাসহ ছুরিকাঘাতে জোড়া খুনের ঘটনাও ঘটেছে
রাজধানীতে।
দেশজুড়ে হঠাৎ করে অপরাধ বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে
প্রধান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার একটি হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণ করা। মানুষ নিরাপত্তাহীন। সারা দেশেই ঘটছে খুনের ঘটনা। সেই সঙ্গে
বেড়েছে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি। বাড়ছে হুমকি-ধমকি ও চাঁদাবাজির ঘটনা। সমাজে
খুনখারাবিসহ অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, দেশের
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতির কারণ কী? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে
করছেন, পেশাগত অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার কারণেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির
অবনতি ঘটছে। আবার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় সারা দেশে অনেক থানায়
হামলা হয়। অস্ত্র, গোলাবারুদ লুট হয়। থানা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের
একটি বড় অংশ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সেসব আগ্নেয়াস্ত্র
সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। ফলে দেশব্যাপী অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার
বাড়ছে। কাজেই এখন জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে
হবে। শক্ত হাতে দমন করতে হবে।