দেশে খুনখারাবি ও নিষ্ঠুরতার ঘটনা ক্রমেই
বাড়ছে। মানুষ কথায় কথায় সংঘাত-সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত
খবরে বলা হয়, দেশে গত বছরের শেষ পাঁচ মাসে এক হাজার ৫৬৫ জন খুন হয়েছে। এতে
প্রতি মাসে গড়ে খুন হয়েছে ৩১৩ জন।
এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রে
দেড় সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়। পুলিশ সদর দপ্তর, হাসপাতাল ও হতাহতের পরিবার
সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সর্বশেষ গত শুক্রবার এক দিনেই তিনটি চাঞ্চল্যকর
হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুরের দিয়াবাড়ী সিটি বস্তিতে মো.
মিলন নামের এক পোশাককর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
খুলনা নগরের
তেঁতুলতলা মোড় এলাকায় রাত সাড়ে ৯টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব
কুমার সরকারকে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। একই দিন দুপুরে
চট্টগ্রামের রাউজানে জুমার নামাজ আদায়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে
জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন।
প্রতিনিয়ত দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে বহু খুনের ঘটনা।
সেই
সঙ্গে বেড়েছে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি। বাড়ছে হুমকি-ধমকি ও চাঁদাবাজির ঘটনা।
পথে-ঘাটে মানুষ যেমন নিরাপত্তাহীন, তেমনি নিরাপত্তাহীন নিজের বাসার ভেতরেও।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় বৈঠক করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
নেওয়া হচ্ছে নানামুখী পদক্ষেপ, কিন্তু পরিস্থিতি সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা
যাচ্ছে না।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও
বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা বেড়ে যাওয়া মানে সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
তাঁদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর ব্যর্থতার কারণেই মূলত এসব
ঘটছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করে জনমনে শান্তি ফেরাতে হবে। হত্যার নেপথ্যের কারণ
হিসেবে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার,
চাঁদাবাজি, সম্পত্তির লোভ ও সম্পর্কের টানাপড়েন ইত্যাদি। এমনকি তুচ্ছ
ঘটনাকে কেন্দ্র করেও কুপিয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে।
ছাত্র-জনতার
অভ্যুত্থানের সময় সারা দেশে অনেক থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা হয়। অস্ত্র,
গোলাবারুদ লুট হয়। পুলিশের বহু গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে পুলিশের সক্ষমতাও
কমেছে। এ ছাড়া লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের একটি বড় অংশ এখনো উদ্ধার করা
যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সেসব আগ্নেয়াস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে।
ফলে দেশব্যাপী অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে।
মানুষ এক বেলা কম
খেয়ে হলেও পরিবার নিয়ে নিরাপদে এবং মান-সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চায়। তাই
সারা দেশে পুলিশি কর্মকাণ্ড দ্রুত স্বাভাবিক করতে হবে। যৌথ অভিযান আরো
বাড়াতে হবে। যেকোনো মূল্যে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।