মাঘের
হাঁড় কাঁপানো শীতে জুবুথুবু জনজীবন। ভারী পোশাক পড়ে ঘরে থাকাও যেন দায়। আর
এমন শীতে মহাসড়কের লেন বিভাজনের উপর খোলা আকাশের নিচে মাসের পর মাস বসবাস
করছেন সত্তরোর্ধ্ব এক অসুস্থ বৃদ্ধ!
অসুস্থতা তাঁর শরীরে এমন ভাবে জেঁকে
বসেছে হাটা-চলা থাক দূরের কথা ঠিকমতো কথাও বলতে পারছেন না তিনি। যেখানে
বসে আছেন সেখানেই ঘুমাচ্ছেন। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে এমনকি মল-মূত্র
ত্যাগও একছেন একই জায়গায়। দীর্ঘদিন যাবৎ গোসল না থাকায় এবং শরীরে প্রচন্ড
দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পথচারীদের দেয়া খাবার খেয়ে কোন রকমে বেঁচে আছেন অচেনা এই
বৃদ্ধ।
ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা-বাগুর
বাস স্টেশন থেকে এক’শ গজ পশ্চিমে চার লেন মহাসড়কের বিভাজনের উপর ঝুঁকিপূর্ণ
অবস্থায় পলিথিনের তাবুর নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তিনি!
বিভাজনের
দুই পাশ দিয়ে দিন রাত হাজার হাজার যানবাহনে উচ্চপদস্থ কর্তা ব্যক্তি থেকে
শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক সংগঠনের লাখ লাখ যাত্রী যাতায়াত করলেও
চান্দিনা-বাগুর বাস সংলগ্ন মহাসড়কের বিভাজনের উপর বসবাস করা ওই বৃদ্ধের
প্রতি চোখ পড়েনি কারও! কোথায় তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, কোথায় তার বাড়ি?
স্থানীয়দেরও অজানা। অযত্ন অবহেলায় চিকিৎসার অভাবে দিনের পর দিন ধুঁকে ধুঁকে
অসহায়ত্ব জীবন কাটছে তাঁর। স্থানীয়দের তথ্যানুসারে দীর্ঘ চার মাস যাবৎ এমন
পরিস্থিতিতে পড়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সেবায় কিংবা আশ্রয় দেওয়ার
জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ।
সরেজমিনে রবিবার (২৬ জানুয়ারী) বিকেলে কুমিল্লার
চান্দিনা বাস স্ট্যান্ডের এক’শ গজ পশ্চিমে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম
মহাসড়কের বিভাজনের উপর পলিথিনের সামান্য তাবু টানিয়ে শুয়ে আছেন ওই বৃদ্ধ।
এসময় কাছে গিয়ে কথা বলে তাঁর সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেও তার কোন পরিচয়
জানা সম্ভব হয়নি। ওই বৃদ্ধকে অনেক প্রশ্ন করলেও কোন উত্তর বা তার নাম পরিচয়
কিছুই বলছে না। অস্পষ্ট ভাষায় শুধু কোরআনের কয়েকটি আয়াত পাঠ করতে শোনা
গেছে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, প্রায় চার মাস আগে এই বৃদ্ধ লোকটি মহাসড়কের
উত্তর পাশে ফুতপাতে শুয়ে থাকতে দেখেছি। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ওনাকে এই
ডিভাইডের ওপর তাবু টানিয়ে রেখে যায়। তিনি তার নাম পরিচয় কিছুই বলতে পারছেন
না। তারপর থেকেই বিভাজনের ওপর তাবুর নিচে দিন কাটছে তাঁর।
স্থানীয়
বাসিন্দা মো. রবিন জানান, তাঁর কোন সন্তান আছে কিনা তাও আমাদের জানা নেই।
তবে অধিকাংশ মানুষ সন্দেহ করছেন, হয়তো সন্তানরাই তাকে এখানে ফেলে গেছেন!
পথচারী
মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, দেশে এতো মানবিক সংগঠন থাকতে এবং এতো বৃদ্ধাশ্রম
থাকতেও কেন অসুস্থ এই বৃদ্ধকে ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের ডিভাইডারের (বিভাজন)
উপর বাস করতে হবে? কারও নজরে কি পড়ছে না? এই ঘটনায় কি এখন মানবাধিকার
লঙ্ঘন হচ্ছে না? অধিকাংশ সামাজিক ও মানবিক সংগঠনগুলো করা হয়, যার যার
স্বার্থে। ওই অসুস্থ অজ্ঞান বৃদ্ধের এভাবে দিনের পর দিন পড়ে থাকাই তার
প্রমাণ।
এভাবে পড়ে থাকলে তীব্র শীতে ঠান্ডা জণিত কারণে এখানে তাঁর
মৃত্যুর শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বিভাজন থেকে পড়ে গেলে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়েও
মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। এই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কোন সামাজিক সংগঠন, কোন
হৃদয়বান, বিত্তবান ব্যক্তি এগিয়ে এসে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি তার পরিচয়
নিশ্চত করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দাবী স্থানীয়দের।
চান্দিনা
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন জানান, আমি বিষয়টি আগে জানতাম
না। এখনই আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের
মাধ্যমে ওই বৃদ্ধকে উঠিয়ে এনে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি পরিবারের কাছে ফিরিয়ে
দেয়ার চেষ্টা করবো।