অনেক কিছুতে অগ্রগতির পাশাপাশি যেসব কিছুতে বাংলাদেশ পিছিয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বেড়েছে, ডালপালা গজিয়েছে। গত ১৫ বছরে রাজনীতির মোড়কে চলে আখের গোছানোর কাজ। আর দল ক্ষমতায় থাকা মানেই হচ্ছে দুর্বৃত্তায়নের অবারিত সুযোগ।
এমপিরা আইন প্রণেতা হওয়ার পরপরই দলীয় কর্মী-সমর্থক নামের এক শ্রেণির তোষামোদকারী দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েন। উন্নয়নের নামে পাওয়া অর্থ দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের তাঁরা যেমন বশে রাখেন, তেমনি তাঁদের কেউ কেউ এই সুযোগে বরাদ্দের একটি অংশ নিজেদের পকেটে ভরার সুযোগটিও হাতছাড়া করেন না।
গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে উন্নয়নের নামে চলে লুটপাট। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এমপিদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা দেয় শেখ হাসিনা সরকার।
এমপিদের নামে নেওয়া দুই প্রকল্প থেকে প্রত্যেক এমপির এলাকায় উন্নয়নের নামে ২৬ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়। জুলাই আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের পর বেশির ভাগ এমপিই পলাতক, কিছুসংখ্যক জেলে। অথচ সেই দুই প্রকল্প থেকে বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দ্রুত তুলে নেওয়ার তোড়জোড় চলছে। বলা যায়, আওয়ামী সরকারের এমপিদের ‘স্বার্থ দেখার’ থোক বরাদ্দের প্রকল্প নিয়ে এখনো হরিলুট চলছে।
প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে নয়ছয় করে ঠিকাদাররা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দুটি প্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা এখন এভাবেই খরচ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর এই প্রকল্পই সবার আগে বন্ধ হওয়া উচিত ছিল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে সংসদ সদস্যদের সুবিধার্থে পরিকল্পিত প্রকল্পগুলো অনুমোদন করে জনসাধারণের তহবিলের অপব্যবহার করে আসছে। এসব প্রকল্পে ন্যায্যতার অভাব দেখা যায়।
কারণ এগুলো মূলত সড়ক উন্নয়নের নামে সংসদ সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা করে অথবা দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের সহযোগীদের লাভবান হতে দেয়...।’
উন্নয়নের নামে লুটপাটের খবর নতুন নয়। উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা চলে যায় সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠীর হাতে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের স্বার্থে এসব প্রকল্প প্রণয়ন করে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন-এমন অভিযোগ অনেক পুরনো। জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের ও দলের লোকদের পকেট ভরাতে গিয়ে এভাবে নানা প্রকল্প দেখিয়ে উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা লুটপাটে অংশ নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ বরাবরই ছিল। এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তল্পিবাহকদের যুক্ত করা হয়।
দুর্বৃত্তায়নের এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এর আগে যেসব প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেসব প্রকল্পের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, লুটপাটের সব প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করা হবে।