জহির শান্ত: গ্রাহকের সাথে প্রতারণা করে পারিবারিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি ও হয়রানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে পূবালী ব্যাংক কুমিল্লা শাখার ম্যানেজার মঈনুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) কুমিল্লায় দুদকের শুনানি চলাকালে নগরীর কাপ্তান বাজার এলাকার বাসিন্দা নাসিমা আক্তার বেবি নামে এক গ্রাহকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
শুনানি চলাকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মোঃ আলী আকবর আজিজী এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
শুনানি চলাকালে নগরীর কাপ্তান বাজার এলাকার বাসিন্দা নাছিমা আক্তার বেবি অভিযোগ করেন, '২০১৮ সালে পূবালী ব্যাংকে যৌথ একাউন্টে আমি এবং আমার ছোট ভাই ২০ লক্ষ টাকা করে দুটি চল্লিশ লক্ষ টাকার এফডিআর করি। এতে শর্ত ছিল এফডিআরের মেয়াদ শেষে টাকা যৌথ একাউন্টে ফেরত আসবে। ব্যাংকের ম্যানেজার মইনুল ইসলাম এবং আরেক কর্মকর্তা রাবেয়া আক্তার ঝুমুর আমাদেরকে এই শর্তসাপেক্ষে এফডিআর করায়- সিঙ্গেল সিঙ্গেল এফডিআর করেন মেয়াদ শেষে যৌথ একাউন্টে টাকা প্রবেশ করবে। যেহেতু ব্যাংকে আমাদের ভাই বোনের সিঙ্গেল সিঙ্গেল একাউন্ট ছিল তাই আমরা চেয়েছিলাম টাকাগুলো যেন সরাসরি সিঙ্গেল একাউন্টে না যায়। এ পেক্ষিতে তারা আমাদেরকে পরামর্শ দেন তাদের কাছে একটা দরখাস্ত লিখলে কেউ আর সিঙ্গেল একাউন্টে টাকা নিতে পারবে না। আমরা দরখাস্তও প্রদান করি। '
`কিন্তু ব্যাংক ম্যানেজার আমাকে না জানিয়ে আমার ভাইয়ের সাথে যোগসাজশে ওই এফডিআরকে স্পনসর করে থেকে আমার ভাইকে ১৬ লাখ টাকা ব্যাংক লোন দেয়। এর ফলে আমি টাকা পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়ি এবং অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলাও করতে হয়েছে আমাকে। '
ওই নারী গ্রাহকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পূবালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য চাওয়া হলে জানানো হয়, 'তাদের যৌথ একাউন্ট থাকলেও তারা ব্যক্তিগত একাউন্টে আলাদা আলাদা ভাবে এফডিআর জমা করে। তবে তারা পরবর্তীতে একটা আবেদন করেছিলেন যেন ওই টাকা যৌথ একাউন্টে যায়। তবে পরবর্তীতে ওনার ভাই এরশাদ আলী আবেদন করেন যেহেতু এটা আমার ব্যক্তিগত একাউন্ট আমি আগে নির্দেশনা বাতিল করতে চাই এবং আমি লোন চাই। তৎকালীন কর্মকর্তারা যাচাই বাছাই করে উনাকে ১৬ লাখ লোন দেন।
এরপর বেবির এফডিআরের টাকা যৌথ একাউন্টের মাধ্যমে উনার একাউন্টে যায়। এবং ভাইয়ের টাকা ভাইয়ের একাউন্টে যায়। উনারা ভাইবোন কেউ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এছাড়া উনি মামলা করেছেন মামলাটি তদন্তাধীন আছে। '
এর প্রেক্ষিতে নাসিমা আক্তার বেবী বলেন, 'মামলা আমি ভাইয়ের বিরুদ্ধে করেছি- সেটা আদালতে চলমান। কিন্তু ব্যাংক ম্যানেজার যে আমাদের পারিবারিক ফাটল ধরালো, আমার সাথে প্রতারণা করলো এ প্রেক্ষিতে আমি ফৌজদারী মামলা করতে গিয়েছিলাম কিন্তু পুলিশ ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি। আমি আজকে শুনানিতে এসেছি ব্যাংক ম্যানেজারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে। আমি আমার সাথে হয়ে যাওয়া প্রতারণার বিচার চাই। '
তখন দুদকের পক্ষ থেকে কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মোঃ আলী আকবর আজিজী বলেন, আপনার অভিযোগের বিষয়টি দুদক মামলা আকারে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আদালতে আপনার যে মামলা চলমান সে সিদ্ধান্ত আদালত জানাবেন।
বুধবার সকাল ১১ টা থেকে কুমিল্লা শিল্পতলা একাডেমিতে শুরু হওয়া গন শুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
দুদকের কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের সূত্র জানা গেছে, গণ শুনানির জন্য দুদুকে মোট ১২১ টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৪০টি অভিযোগের শুনানি হয়। এসময় দুদক চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ ও তাদের বক্তব্য শুনেন এবং তাৎক্ষণিক বিভিন্ন বিষয় নিষ্পত্তির নির্দেশনা প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ, কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ, দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে উপপরিচালক মো: আবুল হোসেন, কুমিল্লা জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান। গণশুনানি পরিচালনা করে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো আমিরুল কায়ছার।