মানুষের
জীবনে আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত অসংখ্য ও অপরিসীম। সুস্থতা, রিজিক, শান্তি,
নিরাপত্তা, ইমানএ সবই মহান আল্লাহর অনুগ্রহ। আল্লাহর নেয়ামত যেমন তার অশেষ
দয়া ও করুণার বহিঃপ্রকাশ, একইসঙ্গে পরীক্ষার অংশও বটে। আল্লাহ যদি চান,
তাহলে মুহূর্তের মধ্যেই তা কেড়ে নিতে পারেন। অনেক সময় মানুষ আল্লাহর দেওয়া
নেয়ামতের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করে বা শোকর আদায় করতে ভুলে যায়। তখন
আল্লাহ তাআলা শাস্তি হিসেবে সেই নেয়ামত ফিরিয়ে নেন বা বিপরীত অবস্থার
মুখোমুখি করেন।
তাই নেয়ামত পেলে সেটাকে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দান মনে করে
কথায় ও কাজে আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করা উচিত। আল্লাহ তাআলার শাস্তি ও
অসন্তুষ্টিকে ভয় করা উচিত। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি যে লাভ করে, সে
দুনিয়া-আখেরাতের সব কিছু লাভ করে। আর আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি যে হারায়,
আল্লাহ তাআলা যার ওপর অসন্তুষ্ট হন, সে দুনিয়া-আখেরাতের সব কিছু হারায়।
আমাদের
প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর
শাস্তি, নেয়ামতের অপসারণ ও অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় চেয়ে দোয়া করতেন।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, নবিজি (সা.) দোয়া করতেন,
উচ্চারণ: আল্লহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন্ যাওয়ালি নি’মাতিকা ওয়া তাহাওউলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা ওয়া জামীই সাখাত্বিকা
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই নেয়ামত চলে যাওয়া থেকে, আপনার দেওয়া
সুস্থতা পরিবর্তন হয়ে যাওয়া থেকে আপনার আকস্মিক শাস্তি থেকে এবং আপনার সব
ধরনের অসন্তুষ্টি থেকে। (সহিহ মুসলিম: ২৭৩৯)
নবিজির (সা.) ছোট এ দোয়াটি গুরুত্বপূর্ণ ও গভীর অর্থবহ। দোয়াটিতে যে চারটি বিষয় থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া হয়েছেÍ
১. নেয়ামত দিয়েও কেড়ে নেওয়া থেকে
আল্লাহ
তাআলা আমাদের জীবন, স্বাস্থ্য, পরিবার, সম্পদ, সুখ-শান্তি ইত্যাদি অনেক
নিয়ামত দিয়েছেন। কিন্তু এই নেয়ামতগুলো স্থায়ী নয়। অনেক সময় মানুষের
নাশোকরির কারণে আল্লাহ তাআলা নেয়ামত দান করেও পরে তা আবার তা ছিনিয়ে নেন। এ
দোয়ায় নবিজি (সা.) নেয়ামত ফিরিয়ে নেওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চেয়েছেন।
২. সুস্থতা পরিবর্ত করে দেওয়া থেকে
শারীরিক
ও মানসিক সুস্থতা আল্লাহর বড় নেয়ামত। কেউ সুস্থ থাকা অবস্থায় যদি তা
যথাযথভাবে ব্যবহার না করে, অকৃতজ্ঞ হয়, পাপাচারে লিপ্ত হয়, তাহলে আল্লাহ সে
সুস্থতা কেড়ে নিতে পারেন। তাই নবিজি (সা.) এ দোয়ায় চেয়েছেন, যেন আল্লাহ
তাআলা আমাদের কাজের কারণে তার দেওয়া সুস্থতা পরিবর্তন করে আমাদের কষ্ট বা
দুর্ভোগে না ফেলেন।
৩. আকস্মিক শাস্তি থেকে
জীবনে কখন কোন বিপদ
আসবে, তা কেউ জানে না। অনেক সময় মানুষের অবাধ্যতা, অন্যায় ও পাপাচারের
কারণে আকস্মিক শাস্তি নেমে আসেÍযেমন ভূমিকম্প, বন্যা, মহামারি, অর্থনৈতিক
সংকট বা ব্যক্তিগত দুর্যোগ। এ দোয়ায় নবিজি (সা.) আকস্মিক শাস্তি থেকে
আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।
৪. আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয়
আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জনই একজন মুমিনের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত। যার ওপর
আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন, তার দুনিয়া-আখেরাত উভয়ই ধ্বংস হয়। নবিজি (সা.) এ
দোয়ায় আল্লাহ তাআলার সব রকম অসন্তুষ্টি থেকে আল্লাহ তাআলার আশ্রয়
প্রার্থনা করেছেন।
আল্লাহ তাআলা নবিজির (সা.) এ দোয়াটি আমাদের নিয়মিত পড়ার তওফিক দিন এবং দোয়াটি আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করে নিন। আমিন।