বিশ্ববাজারে
নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে সোনা। প্রথমবারের এক আউন্স সোনার দাম ২ হাজার
৮০০ ডলার স্পর্শ করেছে। বিশ্ববাজারে সোনার এমন দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এরই
মধ্যে দেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে যে হারে
বেড়েছে, দেশের বাজারে সেই হারে বাড়েনি। ফলে দেশের বাজারে সোনার দাম আরও
বাড়তে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের বাজারে সোনার দাম নির্ধারণের
দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এ বাজুসের
দায়িত্বশীল এক সদস্য জানান, বিশ্ববাজারে এক আউন্স সোনার দাম যে কোনো সময় ২
হাজার ৮০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে অনেক আগেই ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দফা
দুই হাজার ৮০০ ডলারের কাছাকাছি গিয়ে ফিরে আসে। গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো
এক আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৮০০ ডলার স্পর্শ করেছে।
তিনি বলেন,
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও গত সপ্তাহে দাম বাড়ানো
হয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে যে হারে সোনার দাম বেড়েছে, তাতে দেশের বাজারে যে
কোনো সময় আবার দাম বাড়তে পারে। আর দেশের বাজারে এখন সোনার দাম বাড়ানো হলে,
বিশ্ববাজারের পাশাপাশি দেশের বাজারে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে।
বিশ্ববাজারের
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে লেনদেন শুরু হওয়ার আগে বিশ্ববাজারে
প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৭৭০ ডলার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস
লেনদেনের একপর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৭৩১ ডলারে নেমে যায়। তবে
এরপর আবার দাম বাড়ার প্রবণতা শুরু হয়। ২৯ জানুয়ারি প্রতি আউন্স সোনার দাম ২
হাজার ৭৬০ ডলারে উঠলে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়
বাজুস।
২৯ জানুয়ারি বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস
মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে পরের দিন ৩০ জানুয়ারি থেকে সোনার নতুন দাম
কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাজুসের এ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব থেকে
ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৩৬৫ টাকা বাড়িয়ে
নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৪২ হাজার ৭৯১ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১
হাজার ৩০৭ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩০৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া
১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ১০৮ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার
৮২৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়ে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ৯৫৬ টাকা
বাড়িয়ে ৯৬ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের বাজারে এ
দামেই সোনা বিক্রি হচ্ছে।
দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসার পর
বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৪০ ডলারের মতো বেড়ে গেছে। সপ্তাহ শেষে
বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৯৭ ডলার। অবশ্য
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেনের একপর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার
৮১৫ ডলার পর্যন্ত উঠে যায়। এর আগে কখনো এক আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৮০০
ডলার হয়নি।
বিশ্ববাজারে এতদিন এক আউন্স সোনার সর্বোচ্চ দাম ছিল ২ হাজার
৭৯০ ডলার। গত ৩০ অক্টোবরে সোনার এ দাম হয়। বিশ্ববাজারে সোনার এ রেকর্ড দাম
হওয়ার পর ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশে সব থেকে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম
বাড়ানো হয় ১ হাজার ৫৭৫ টাকা। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম দাঁড়ায় ১ লাখ
৪৩ হাজার ৫২৬ টাকা। দেশের বাজারে এটিই সোনার সর্বোচ্চ দাম।
বিশ্ববাজারে
রেকর্ড দাম হওয়ার পরের দিন থেকেই অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর থেকে পতনের মধ্যে পড়ে
সোনা। কয়েক দফায় দাম কমে ১৪ নভেম্বর প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৫৪৭
ডলার পর্যন্ত নেমে যায়। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারে
যেমন সোনার দাম বাড়ানো হয়, তেমনি বিশ্ববাজারে দরপতন দেখা দিলে দেশের
বাজারেও সোনার দাম কমানো হয়। ৫ থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে চার দফায় দেশের
বাজারে ভালোমানের প্রতি ভরি সোনার দাম ৯ হাজার ১৭ টাকা কমানো হয়।
এরপর
বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরেও কয়েক দফায় দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো বা
কমানোর ঘটনা ঘটে। আর নতুন বছর ২০২৫ সালে এখনো পর্যন্ত দেশের বাজারে তিন দফা
সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে। এ তিন দফা দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসার আগে
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বড় অঙ্কে বাড়তে দেখা গেছে।
চলতি বছর দেশের বাজারে
ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম তিন দফায় বেড়েছে ৪ হাজার ৫০৩ টাকা। অপরদিকে
বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ১৭৩ ডলার। এক আউন্স সমান ৩১
দশমিক ১০৩৪৭৬৮ গ্রাম। এ হিসাবে বিশ্ববাজারে চলতি বছর এখনো পর্যন্ত এক ভরি
সোনার দাম বেড়েছে ৭ হাজার ৯১৫ টাকা (এক ডলার সমান ১২২ টাকা ধরে)।