নিজস্ব
প্রতিবেদক: কুমিল্লায় যৌথবাহিনীর অভিযানে আটকের পর যুবদল নেতা তৌহিদুল
ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন
ভুক্তভোগীর পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে
নিহত যুবদল নেতা তৌহিদের লাশ নিয়ে মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের
বিচারের দাবিতে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা
গ্রাম ও আশপাশের এলাকার সর্বস্তরের জনতা কুমিল্লা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে
বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
এদিন বেলা বারোটার দিকে যুবদল নেতা
তৌহিদের লাশবাহী গাড়ি নিয়ে জনতার সমাবেশ ঘটে কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সামনে।
এ সময় বিক্ষুব্দ লোকজন দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
তারা প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন ।
এসময়
নিহত যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার অভিযোগ করেন,
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে যৌথবাহিনী ও সিভিল পোষাক পরিহিত কিছু
লোকজন তাদের বাড়িতে প্রবেশ করেন। এ সময় তৌহিদের পিতার কুলখানির রান্নার
আয়োজন চলছিল। কুলখানি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ওই রাতে যৌথবাহিনীর
লোকজন তৌহিদ ও তার স্ত্রী সহ অন্যদের মোবাইল ফোন জব্দ করেন। পরে তৌহিদের
ঘর তল্লাশি করতে চাইলে তার স্ত্রী কারণ জানতে চান। তখন সেনা সদস্যরা জানান
ঘরে অস্ত্র আছে। এরপর ঘর তল্লাশি করে কোন অস্ত্র না পেলেও তৌহিদকে যৌথ
বাহিনী আটক করে। তাকে আটকের পর রাতভর উৎকণ্ঠায় থাকার পর সকাল সাড়ে আটটার
দিকে যৌথ বাহিনীর ওই টিম তৌহিদকে নিয়ে তার বাড়িতে আসে। এসময় তৌহিদকে
মুমূর্ষুও দেখা যাচ্ছিল বলে তার স্ত্রী দাবি করেন।
তিনি আরো বলেন,
কিছুক্ষণ বাড়িতে অবস্থানের পর সেনা সদস্যরা তৌহিদকে নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে আবার
চলে যায়। বেলা সাড়ে বারোটার দিকে কোতোয়ালি থানার একজন পুলিশ অফিসারের ফোন
পেয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে তৌহিদকে তারা মৃত অবস্থায় দেখতে
পান। এ সময় তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে তৌহিদের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার তার স্বামীর মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
মানবন্ধনে
তৌহিদুলের ভাগ্নি গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর মাহবুবা উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার শুরু
থেকে এ পর্যন্ত দফায় দফায় আমরা কুমিল্লা সেনানিবাসের সিনিয়র কর্মকর্তাদের
সাথে কথা বলেছি। তাঁরা পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনার সাথে জড়িতদের সেনা
আইনে বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা যদি ন্যায় বিচার না পাই তাহলে বিধি
অনুসারে আইনগত পদক্ষেপ নেব।’
বিচার দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সংহতি
প্রকাশ করে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগর
শাখার সদস্য সচিব রাশেদুল হাসান বলেন, ঘটনার পর থেকে আমরা এ বিষয়ে অনেকের
সাথে কথা বলেছি। সেনাবাহিনী জুলাই আগষ্ট আন্দোলনে জনতার সাথে মধুর সম্পর্ক
রেখে দেশের জন্য কাজ করেছে। এভাবে কোন নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যু আমাদের কষ্ট
দেয়। আশা করি ওই ব্যক্তির পরিবার এর বিচার পাবে।
এর আগে গত
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যৌথবাহিনীর পরিচয়ে কিছু সেনা সদস্য ও সিভিলে থাকা
ব্যক্তি তৌহিদকে বাড়ি থেকে তুলে নেয়। তিনি জেলার আদর্শ সদর উপজেলার
পাঁচথুবি ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন
যুবদলের আহবায়ক ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি
শিপিং কোম্পানিতে চাকুরী করতেন। চার দিন আগে বাবা মারা যাওয়ার খবরে বাড়ি
এসেছিলেন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাকে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশে
সোপর্দ করার পর কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে
মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটকের পর নিহত তৌহিদুল ইসলামের প্রথম জানাজা শনিবার বাদ জোহর ইটাল্লা মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানাজায়
বিএনপি কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ত্রাণ ও
পুনর্বাসন সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ
সম্পাদক রবিউল ইসলাম নয়ন, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহবায়ক উদবাতুল বারী
আবু, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক,
সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলুসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জানাজায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ তৌহিদের মৃত্যুর সঠিক কারণ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।