বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৩ মাঘ ১৪৩১
অর্ধলক্ষাধিক বইয়ের সমাহার কুমিল্লার গণগ্রন্থাগারে
লোকবল সঙ্কটে ৯জনের কাজ চালাচ্ছেন ৪ জন
জহির শান্ত, কুমিল্লা
প্রকাশ: বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:৫৯ এএম আপডেট: ০৫.০২.২০২৫ ২:২৮ এএম |


অর্ধলক্ষাধিক বইয়ের সমাহার কুমিল্লার গণগ্রন্থাগারে
চারিদিকে গাছগাছালি ঘেরা সবুজ-সুন্দর নিরিবিলি পরিবেশ। একতলা ভবনের বিশাল একটি কক্ষে শেলফে সাজানো সারি সারি বই। মাঝে চেয়ার-টেবিলে বসে পড়াশোনা করছেন নানা বয়সী মানুষ। তাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। কেউ ব্যস্ত একাডেমিক পড়াশোনায়, কেউ নিচ্ছেন চাকরির ইন্টাভিউর প্রস্তুতি; কেউবা সময় কাটাচ্ছেন দৈনিক পত্রিকা কিংবা গল্প উপন্যাসের পাতায়। পাঠে মনযোগিতার এমনই চিত্র দেখা গেছে কুমিল্লার সরকারি গণগ্রন্থাগারে।

কুমিল্লা নগরীর ছোটরা সরকারি কলোনী কম্পাউন্ডে গড়ে উঠা জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে প্রতিদিন নানা বয়সী অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন বই পড়তে আসেন। পাঠক চাহিদার কথা মাথায় গ্রন্থাগারটিতে ঠাঁই পেয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি বই। বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী থেকে শুরু করে তাদের রচনা, সাহিত্যভাণ্ডার, ইতিহাস, দর্শন, গল্প, কবিতা, উপন্যাস, একাডেমিক বই, বিভিন্ন জেলার পরিচিতি ছাড়াও ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য বইয়ের পাশাপাশি রয়েছেদেশের প্রথম সারির কয়েকটি জাতীয় ও স্থানী পত্রিকা।শিশুদের জন্য গল্পের বই, খেলনা সামগ্রী, কম্পিউটার কোডিং সেবাও এখানে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া গ্রন্থাগারটিতে পাঠকদের জন্য নামাজের স্থান, ওজুখানা ও ওয়াশরুমের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
অর্ধলক্ষাধিক বইয়ের সমাহার কুমিল্লার গণগ্রন্থাগারে
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লায় সরকারি গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮২ সালে। কুমিল্লার আদালত পাড়ায় স্থাপিত গ্রন্থাগারটিকে পাঠক চাহিদার কথা মাথায় রেখে ছোটরা কলোনী এলাকায় স্থানান্তরিত করে বর্ধিত পরিসরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালে এর মানোন্নয়নে কাজ শুরু করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বাড়ানো হয়বইয়ের সংখ্যা। পাঠকদের বসার জন্য সুব্যবস্থা করা হয়। বই রাখার জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবেরও ব্যবস্থা করা হয়। তাতেই বদলে যায় দৃশ্যপট। দিন দিন পাঠক বাড়তে থাকে এ গ্রন্থাগারে। বর্তমানে দিনে গড়েতিন থেকে পাঁচশর বেশি পাঠক আসেন এখানে। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে কুমিল্লার গ্রন্থাগারটিতেই সবচেয়ে বেশি পাঠক সমাগম ঘটে বলে জানিয়েছেন এখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। এখানে পড়তে আসাদের বেশির ভাগই স্কুল কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পাঠমগ্ন বয়স্ক পাঠকদের আনাগোনাও দেখা যায় এখানে। প্রতি শনিবার থেকে বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সকল শ্রেণির পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে এ গ্রন্থাগার। 
তবে জনবল সঙ্কটে এখানে পাঠক সেবা কিছুটা ব্যহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। গ্রন্থাগারটিতে ৯ জনের মনোনীত পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র চারজন। এর মধ্যে সিনো লাইব্রেরিয়ান, নৈশ প্রহরী, কম্পিউটার অপারেটর, চেকপোস্ট এটেনডেন্ট, অফিস সহায়কের মতো গুরুত্ব পদগুলোই শূন্য পড়ে আছে। যে চারজন এখানে কর্মরত আছেন, তারাই বাকিদের কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। 
সম্প্রতি পাঠাগারটি ঘুরে দেখা গেছে, ৫২টি তাকে সারি সারি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বই। টেবিলে মাথা গুঁজে পড়াশোনায় মগ্ন অসংখ্য পাঠক। কেউ কাউকে বিরক্ত না করেই সরুকণ্ঠে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের পাঠকার্য।
সেখানে কথা হয় অভি মজুমদার নামে এক পাঠকের সাথে। তিনি বলেন, আমি বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছি। নোয়াখালী থেকে কুমিল্লায় এসেছি কোচিং করতে। কুমিল্লায় আসার পর থেকে আমি নিয়মিতই এখানে আসি। পরিবেশ ভালো, পড়তে ভালো লাগে।
মাস্টার্স শেষ করে চাকুরির ইন্টারভিউয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকায় সারোয়ার খান বলেন, আমি এখানে চাকরির প্রস্তুতি নিতেই আসি। পড়ার বই সাথে করে নিয়ে আসি। এখান থেকেও রেফারেন্স বই পাই। গ্রন্থাগারে কর্মরত যারা আছেন তারাও বেশ হেল্পফুল। তবে এখানে একটি ক্যান্টিন থাকলে ভালো হতো। মাঝে মাঝে চা-নাস্তা খেতে ইচ্ছে করলেও তা সম্ভব হয় না।
কুমিল্লা শহরতলীর চানপুর এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ২০২০ সালে মাস্টার্স শেষ করে চাকুরির অপেক্ষায় আছি। সে প্রস্তুতির জন্য এখানে আসা। পরিবেশ ভালো, নামাজের কক্ষ আছে। তবে চাকরির প্রস্তুতির কিছু সহায়ক বই থাকলে ভালো হতো। 
নগরীর ফৌজদারী এলাকার শিক্ষার্থী ফৌজিয়া খন্দকার বলেন, পড়াশোনার জন্য যে ধরনের পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা প্রয়োজনী তার সবটাই এখানে আছে। জনবল সঙ্কটের কথা শুনছি। মাত্র চারজন্য মানুষ এখানে দায়িত্বরত আছেন তারপরও সবাই হেল্পফুল। আমাদের কোনো সমস্যা হয় না।
গ্রন্থাগারটিতে সংযুক্তি পদে কর্মরত বাইন্ডার সুমন মিয়া বলেন, অন্যান্য পদ খালি থাকায় আমাদের একটু বাড়তি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। তবে যারা পড়তে আসেন তারা সকলেই নিয়ম-কানুন মানেন, কেউ কাউকে বিরক্ত করেন না। ফলে আমাদের তেমন সমস্যা হয় না। তিনি বলেন, নানা প্রান্ত থেকে এতো মানুষ আসেন। আমরা একটু বাড়তি পরিশ্রম করলেও তাদের দেখে ভালো লাগে।
অপর বাইন্ডার ফারুক আহমেদ বলেন, সকালের দিকে পাঠক বেশি থাকে। আমরা তাদেরকে সর্বোচ্চ সেবাটুকু দেওয়ার চেষ্টা করি। এখানে বইয়ের পাশাপাশি ১১টি জাতীয় দৈনিক ও তিনটি স্থানীয় পত্রিকা থাকে। বইয়ের পাশাপাশি পাঠকরা এখানে পত্রিকাও পড়তে পারেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কুমিল্লা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক মো. নাফিস সাদিক শিশির জানান, এখানে পাঠক চাহিদার সবকিছুই আছে। ৫০ হাজারের বেশি বই আছে গ্রন্থাগারে। প্রতিদিন নানা প্রান্ত থেকে মানুষজন আসেন খানে। কিন্তু আমাদের জনবল সঙ্কট প্রকট। এখানে ৯ জনের মনোনীত পদ থাকলেও আমরা আছি মাত্র ৪ জন। ৫ জন লোকের সল্পতার কারণে আমাদের পাঠক সেবা দিতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। 
তিনি বলেন, কুমিল্লা একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। এখানকার মানুষজন বই পড়তে ভালোবাসেন। একারণে গ্রন্থাগারটিতে পাঠকের ভিড় থাকে সবসময়। তবে একতলা ভবন হওয়ার কারণে কিছুটা স্থান সংকটও রয়েছে। বহুতল ভবন হলে পাঠক ভেদে আলাদা আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করা যেতো। সামনে এখানে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ হবে। চারতলা ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। তখন পাঠক সেবা শতভাগ নিশ্চিত করা যাবে।

















সর্বশেষ সংবাদ
অর্ধলক্ষাধিক বইয়ের সমাহার কুমিল্লার গণগ্রন্থাগারে
চৌদ্দগ্রামে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ফোন নাম্বার হ্যাক
জামায়াত নেতা মাহবুবর রহমানের মায়ের ইন্তেকাল
ব্রাহ্মণপাড়ায় বিজিবি অভিযানে গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় কুমিল্লার এক যুবক নিহত
কুমিল্লায় একদিনে তিন লাশ উদ্ধার
যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম স্মরণে শোক সভা
কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না
চৌদ্দগ্রামে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২