নিজস্ব
প্রতিবেদক: কুমিল্লায় যৌথবাহিনীর হাতে আটকের পর তৌহিদুল ইসলাম নামে এক
যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ ও অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামি
করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহতের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার।
বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুমিল্লা কোতোয়ালি থানা ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম।
ওসি মহিনুল জানান, মঙ্গলবার রাতে নিহত
তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার ছয়জনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ
দাখিল করেন। বুধবার সেটিকে মামলা হিসেবে আমলে নেয়া হয়।
মামলার এজাহার
নামীয় আসামিরা হচ্ছেন- জেলার আদর্শ সদর সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়নের
রামচন্দ্রপুর (পান্ডানগর) গ্রামের সাইফুল ইসলাম, নিহত তৌহিদুলের প্রতিবেশী
তানজিল উদ্দিন, নাজমুল হাসান টিটু, খাইরুল হাসান মাহফুজ, সাইদুল হাসান সবুজ
ও একই উপজেলার বামইল গ্রামের সোহেল। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জনকে
অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে- অভিযুক্তদের সাথে
তৌহিদুলের পরিবারের জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ হয়।
কিন্তু বিরোধ শেষ হয়নি। এ নিয়ে তৌহিদুলকে হত্যার হুমকি দেয় আসামিরা। গত
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দিবাগত মধ্য রাতে মামলায় অভিযুক্তরা পূর্ব
বিরোধের জের ধরে ২০/২৫ জন সিভিল পোষাকধারী এবং সেনাবাহিনীর মতো পোষাক
পরিহিত লোক বাড়িতে গিয়ে যুবদল নেতা তৌহিদ ও প্রতিবেশী লুৎফুর রহমানকে আটক
করে নিয়ে যায়। পরদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একই ব্যক্তিরা আবারো আহত তৌহিদ ও
লুৎফুরকে নিয়ে বাড়িতে এসে ঘরে তল্লাশী করে। এ সময় আটক লুৎফুর রহমানকে ছেড়ে
দিলেও তৌহিদকে নিয়ে তারা চলে যায়। পরে তারা সংকটাপন্ন অবস্থায় তৌহিদকে
গোমতী বাঁধের ঝাকুনি পাড়ায় ফেলে যায়। খবর পেয়ে কোতয়ালী থানা পুলিশ দুপুর
পৌনে ১২টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত তৌহিদুল জেলার
আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের
ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি সে চট্টগ্রামে
একটি বেসরকারি শিপিং কোম্পানিতে চাকুরী করতো। গত ২৬ জানুয়ারি বাধ্যর্কজনিত
কারণে তার বাবা মারা যাওয়ার খবরে সে বাড়ি এসেছিল। মারা যাওয়ার দিন ছিল
বাবার কোলখানির আয়োজন। দুই দফায় জানাজা শেষে তাকে বাবার কবরের পাশে সমাহিত
করা হয়েছে।
এদিকে যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় যৌথবাহিনীর ক্যাম্প
কমান্ডারকে তাৎক্ষনিকভাবে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ঘটনাটি তদন্তে
সেনাবাহিনীর একটি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্তের দোষী সাব্যস্ত
ব্যক্তিদের সেনা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আন্ত বাহিনীর
জনসংযোগ পরিদপ্তর - আইএসপিআর এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
পরবর্তীতে
গত সোমবার রাতে তৌহিদুলের পরিবারের সাথে দেখা করে ন্যায় বিচারের বিষয়ে
তাদেরকে আশ্বস্ত করেন কুমিল্লা সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত
মোহাম্মদ তারিক। সেনাবাহিনীর প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত বলেও জানিয়েছেন
তৌহিদুলের পরিবারের সদস্যরা।
মামলার বাদী ও তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াসমিন
নাহার বলেন, ৪টি শিশু সন্তান নিয়ে আমি বিধবা হলাম। আমার স্বামী পরিকল্পিত
হত্যাকাণ্ডের শিকার। আমরা সরকারের কাছে ন্যায় বিচার চাচ্ছি। মামলার রায় না
হওয়ায় পর্যন্ত দেশের সকল মিডিয়াকে কাছে পাবো বলে আশা করছি।
তৌহিদুলের বড়
ভাই আবুল কালাম আজাদ বলেন, যাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে এর বাইরেও কেউ
কেউ থাকতে পারেন। এখানে রাজনৈতিক কোন বিষয় আছে কিনা তাও তদন্ত করে পুলিশ
বের করবে বলে আশা করি।
কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মককর্তা (ওসি)
মহিনুল ইসলাম।বলেন, নিহতের স্ত্রী অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা মামলা
নথিভুক্ত করা হয়েছে। ঘটনায় অভিযুক্তদের কেউই এলাকায় নেই। তাদের গ্রেপ্তার
করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।