রাষ্ট্রায়ত্ত
প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুরবস্থা সর্বজনবিদিত। এর জন্য
মূলত দায়ী করা হয় সংস্থাটির অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে
কিছু ট্রাভেল এজেন্সি বিমানে টিকিট কালোবাজারি করছে। আর তাদের লোভের মাসুল
গুনছে রেমিট্যান্সযোদ্ধা প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সাধারণ বিমানযাত্রীরা।
অভিযোগ
আছে, এই ট্রাভেল এজেন্ট সিন্ডিকেটের কবজায় চলে গেছে বিমানের টিকিট। তারা
বিশেষ বিশেষ রুটে বিমান বাংলাদেশসহ কিছু এয়ারলাইনসের টিকিট আগাম ব্লক করে
নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নেয় এবং পরে ইচ্ছামতো দাম বাড়ায়। এ কারণে বিমানের
বিদেশগামী যাত্রীদের স্বাভাবিক ভাড়ার তিন গুণ পর্যন্ত বেশি টাকা দিয়ে টিকিট
কিনতে হয়। যাত্রী, কর্মী ও ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,
সিন্ডিকেটের কারণে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার টিকিট কখনো কখনো কিনতে হয় এক লাখ
৯০ হাজার টাকা দিয়ে।
বিভিন্ন সূত্রের তথ্য নিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়,
মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনস ব্যবসায়ী এবং দেশীয় কিছু ট্রাভেল এজেন্সির মধ্যে
একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো সময়ে কোনো কোনো রুটে
টিকিটের চাহিদা বেড়ে যায়। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সিন্ডিকেটভুক্ত
এজেন্সিগুলো নিজেদের চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত লাভের আশায় বিভিন্ন
এয়ারলাইনসের টিকিট ব্লক করে রাখে। আর বিমান বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি বেশি
হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
যাত্রীদের কোনো প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা ও ভ্রমণ
নথিপত্র ছাড়া শুধু ই-মেইলের মাধ্যমে এরা দু-তিন মাস আগেই এয়ারলাইনসগুলোর
সিট বুকিং করে থাকে। পরবর্তীকালে সাধারণ যাত্রীরা সেসব এয়ারলাইনসে টিকিট
কিনতে গেলে দেখানো হয় টিকিট শেষ হয়ে গেছে। তখন সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলো
বেশি দাম নিয়ে সেই টিকিট বিক্রি করে। জানা যায়, রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দা,
ওমান, দোহা, কুয়ালালামপুরসহ বেশ কিছু রুটে এই পদ্ধতিতে যাত্রীদের পকেট বেশি
কাটা হয়। বিশেষ করে হজের মৌসুমে সিন্ডিকেটের তৎপরতা অনেক বেড়ে যায়।
অ্যাসোসিয়েশন
অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের
বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে চলমান অন্যতম বড় সমস্যা এয়ার টিকিটের অতিরিক্ত
মূল্যবৃদ্ধি। আটাবের মতে, এই সমস্যা সমাধানে বিমান মন্ত্রণালয় ও সিভিল
এভিয়েশনকে ভূমিকা রাখতে হবে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টিকিটের
মূল্যবৃদ্ধি কমাতে সরকারকে এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে অথবা ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর
সঙ্গে কথাবার্তা বলে সমঝোতা করতে হবে। সিন্ডিকেট বন্ধে কঠোর ভূমিকা রাখতে
হবে এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। যেসব দেশে প্রবাসী
বাংলাদেশি কর্মীদের যাতায়াত বেশি, সেসব দেশে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটগুলোতে
স্বচ্ছন্দে টিকিটপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।