ফ্যাসিবাদ
ও গণহত্যায় জড়িতরা কাউকে কাউকে 'খাজনা' দিয়ে এদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভের
চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয়
সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান।
তিনি বলেছেন, এদেশে আর
কোনদিন ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা পাবে না। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ
রক্ত দিতে জেনেছে, জীবন দিতে জেনেছে। ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে
ফ্যাসিবাদের বিদায় হয়েছে। যারা পালিয়ে গেছেন তারা যেমন আর ফিরতে পারবেন না,
তেমনি কাউকে খাজনা দিয়ে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার সুযোগ নেই। ইদানিং লক্ষ্য
করছি ফ্যাসিবাদ ও গণহত্যায় জড়িত এবং সহযোগীদের অনেকেই একটি গোষ্ঠীকে খাজনা
দিয়ে পাড় পাওয়ার চেষ্টা করছেন। কাজ না দিয়ে রেহাই পাওয়া যাবে না; সেই সুযোগ
তাদেরকে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের মাটিতে আর ফ্যসীবাদের উত্থান হবে না।
ফ্যাসিবাদ এবং গণহত্যার সাথে যারা জড়িত- তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
'ফ্যাসিবাদের নায়িকা' শেখ হাসিনাসহ যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে তাদেরকেও দেশে
ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি)
কুমিল্লার মুরাদনগরের ডিআর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী
আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগকে একটি 'অভিশপ্ত
দল' হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের
বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। দেশের টাকা লুটপাট করেছ। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে
নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে। তারা অবৈধভাবে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায়
থাকতে চেয়েছিলো। নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছিলো। বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস
করে দিয়েছে।
তিনি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ক্ষমতায় থাকতে
সারাক্ষণ শুধু উন্নয়নের ভুলি আওড়াতেন- এতো উন্নয়নের রোলমডেল হলে দেশ ছেড়ে
পালালেন কেন? জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ফাঁসির কাষ্ঠে গেলেও কখন দেশ ছেড়ে
পালাননি। মূলত আওয়ামী লীগকে পালাতে হয়েছে নিজেদের অপকর্মের কারণে।
দুর্নীতির করে সার্টিফিকেট না থাকা ব্যক্তিকেও বিচারপতি বানিয়েছেন। তাদের
আমলে নিয়োগ পাওয়া আপিল বিভাগের বিচারপতিরা ছিলো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের
লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য। তাদের ব্যবহার করে নিজেদের পক্ষে রায় আদায় করেছে।
তিনি
আরও বলেন বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে জামায়াত।
যাকে তাকে জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করেছে। জুলাই-আগস্ট এর
আন্দোলনে দুই হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। অনেকের লাশ গুম করেছে।
অনেকের লাশ পুড়িয়ে ফেলেছে। কিন্তু খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারে সরকার
দৃশ্যমান কোনো কাজ করেনি। প্রশাসনে এখন ফ্যাসীবাদের দোসররা বুক ফুলিয়ে
চলছে। তিনি তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি করেন।
তিনি
অভিযোগ করেন ভোটার তালিকায় গোঁজামিলের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। তিনি স্বচ্ছ
ভোটার তালিকা ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান।
তিনি জামায়াতের কারাবন্দী সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এটি এম আজহারুল
ইসলামের মুক্তি দাবি করেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের পরিবার ও আহতদের
সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি করেন।
মুরাদনগর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা
আবু নছর মুহাম্মদ ইলইয়াস এর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন
বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিল সভাপতি ও সাবেক চাকসু ভিপি অ্যাডভোকেট জসিম
উদ্দিন সরকার।
মাওলানা আমির হোসেন ও মাওলানা মিজানুর রহমান এর যৌথ
পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন,জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে
শুরা সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আমির আব্দুল মতিন,জেলা নায়েবে আমির
অধ্যাপক আলমগীর সরকার, কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও
দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম শহীদ,জেলা
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক লোকমান হাকিম,ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের
মজলিশে শুরা সদস্য ডা.মোহাম্মদ তফাজ্জল হোসেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ
ফেডারেশনের কুমিল্লা উত্তর জেলা সভাপতি অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, বাঙ্গরা
বাজার থানা আমির মাষ্টার আব্দুর রহিম,উপজেলা সাবেক আমীর,মনসুন মিয়া,সাবেক
আমীর,অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মোহাম্মদ ফারুক। সাবেক উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান
ইউসুফ সোহেল, অধ্যক্ষ আব্দুস সামাদ,শিবিরের কুমিল্লা উত্তর জেলা সভাপতি
সানাউল্লাহ রাসেল, মাওলানা আবু বক্কর।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে চাকসুর
সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট জসীমউদ্দিন সরকার বলেন-বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী
শক্তিকে দমন করার জন্য আয়নাঘর তৈরি করেছিলো যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তিনি
বলেন খুনিদের দল আওয়ামী লীগের অপরাধীদের বিচার করতে হবে। গণতন্ত্র আর
আওয়ামী লীগ একসাথে চলে না।তারা পিলখানায় হত্যা করেছে। জামায়াতের শীর্ষ
নেতৃত্বকে বিচারিক হত্যা করেছে। আল্লামা সাঈদীকে মেডিকেল কিলিং করা হয়েছে।
তিনি এ বিষয়ে পুনঃ তদন্ত দাবি করেন। আগামীতে ইসলামী শক্তির পক্ষে কাজ করতে
তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন বিগত দিনে
মুরাদনগরে কোনো উন্নয়ন হয়নি। মূলত দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে। তাই সৎ ও
দুর্নীতিমুক্ত নেতৃত্বকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।