গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। সরকারের ছয় মাস পূর্তি হয়েছে। এই সরকারের কাছে দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে অসম্ভবকে সম্ভব করার সুবিশাল কর্মপরিধি।
সেই কর্মপরিধির একটি হচ্ছে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, নানা চ্যালেঞ্জ আর সংকটের মধ্যে রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের গুরুদায়িত্ব এই সরকারের ওপর। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ রয়েছে। অন্তর্র্বতী সরকারের ছয় মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, রাষ্ট্র সংস্কারের যে উদ্যোগ এই সরকার নিয়েছিল, সে পথে অনেকখানি অগ্রসর হওয়া গেছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। প্রথম ধাপে গঠিত সংস্কার কমিশনের মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি দেওয়া হয় জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন। ছয় কমিশনের প্রতিবেদনের আলোকে সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করেছে সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে অর্থনীতিকে ‘সঠিক পথে’ ফেরানোর আশ্বাস নানাভাবে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা। এই ছয় মাসে সামষ্টিক অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচকে আশাদায়ক কোনো ফল কি দেখা যাচ্ছে? বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের একটি তথ্য বলছে, ব্যালান্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত নিয়ে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ ডিসেম্বর শেষে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৩০ লাখ ডলার, যদিও নতুন বিনিয়োগ থমকে আছে। বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঘাটতি কমে আসার চিত্রটি অর্থনীতির জন্য স্বস্তির।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়াসহ ২৭ ধরনের পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে দুই হাজার ৪৫৩ কোটি ৩৫ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। এর পরও ব্যবসা-বিনিয়োগে আস্থাহীনতা এবং উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণনে ধীরগতির কারণে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা উদ্বেগে আছেন। ব্যবসার প্রসার কিংবা নতুন বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কা আছে সংশ্লিষ্ট মহলে। উদ্বেগ বিদ্যমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও। উৎপাদনব্যবস্থার গতি শ্লথ হয়েছে। বিশ্লেষকদের অভিমত, এর মধ্যে নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে কষ্টে আছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, সুশাসন, বৈষম্যহীন সমাজ, সমৃদ্ধি, শান্তি-শৃঙ্খলা আর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে অন্তর্বর্তী সরকার।