বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
৩০ মাঘ ১৪৩১
নৈতিক বিকাশে স্কাউটিং
অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:৫৮ এএম আপডেট: ১১.০২.২০২৫ ১:৩৫ এএম |


 নৈতিক বিকাশে স্কাউটিং  আমরা যে যুগে বসবাস করছি তাকে অনেকেই দেয়া-নেয়ার যুগ মনে করে থাকেন। মানে হলো আপনি কাউকে কিছু দিলে বিনিময়ে আপনি কিছু পাবেন। হ্যাঁ! আমি এ বিষয়ে একমত কিন্তু দেয়ার ধরনটা আর পাওয়ার ধরণটা অন্যরকম। আপনি সম্মান করবেন সম্মান পাবেন। আপনি সেবা করবেন সেবা পাবেন। যদি কোন কিছু প্রাপ্তির জন্য কোন কিছু দেয়া হয় সেটাতে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্প্রীতি কিছুই থাকে না। থাকা সম্ভব নয়। অনেক যুবকদেরই ধারণা চাকুরীটা টাকা ছাড়া হবে না। হ্যাঁ। সত্যিই হবে না টাকা ছাড়া। কেননা আপনার ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে, পরীক্ষা দিতে হবে। এসবে তো টাকা লাগবেই। 
আমি জানি আপনি কি ভাবছেন। ভাবছেন, এসব তো বিষয় নয়। টাকা তো এভাবে লাগে না। এতো ছোট পরিমাণে টাকা লাগলে তো সমস্যাই ছিলো না।" তাহলে সমস্যা কোথায় । সমস্যা হলো, আপনার ছেলেটা বা মেয়েটা অযোগ্য!!! 
 আমার পরিচিত একটা ছেলে তার এলাকায় একটি কলেজে হিসাবরক্ষক লোক নেওয়ার বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর তার খুব ইচ্ছা ঐ কলেজের হিসাবরক্ষক পদে চাকুরী করার। আমাকে ফোন করে দেখা করার জন্য তার সনদপত্র দেখাতে চায়। আমি বললাম তুমি আমাকে সনদপত্র দেখিয়ে কি করবে চাকুরীর বিজ্ঞপ্তিতে যা চেয়েছে তাই দিয়ে আবেদন করো। তুমি যোগ্য হলে তোমাকে অবশ্যই নেবে তারা। সে ছেলে বলে ভাই আমার কি এমনি এমনি চাকুরী হবে? ধরেন যদি এক/দুই লক্ষ টাকাও লাগে আমি দিতে রাজি আছি।
আমি বললাম, তুমি টাকা দিতে চাও কেন? তুমি সব কাগজপত্র ঠিক আছে তোমার তো এমনি হয়ে যাওয়ার কথা। সে বলে ভাই আমি পরীক্ষা নিলে টিকতে পারবো না। এ গল্পে আমি যা বলতে চাইছি তা হলো আমাদের অযোগ্যতাই আমাদের বড় দুর্বলতা। এর পেছনে আমাদের পরিবারের অভিভাবকদের একটু ভ্রান্ত ধারণা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে দায়ি করা যায়। বিশেষত যা হয় তা হলো। পরিবার থেকে সন্তনদের বলা হয়, স্কুল-কলেজে গিয়ে মন দিয়ে লেখাপড়া করবি, অন্য যে দিকে যা হয় হোক লেখাপড়া ছাড়া কিছুই করবি না। 
রীতিমত চাপ দিয়ে লেখাপড়া করানোর ফলে ফলাফল যাই হোক  কিন্তু বাস্তবিকতা জ্ঞান শূণ্য হয়ে বেড়ে ওঠে। সামাজিক কোন কর্মকান্ডের সাথে ওই সন্তনের সম্পৃক্ততা থাকে না বলেই আত্মকেন্দ্রিকতায় পর্যবসিত হয়। বাবা-মা সন্তনের সফলতার চিন্তাই সর্বস্ব দিয়ে এগিয়ে দিতে চায়। কিন্তু সন্তান যখন সফলতা পায় তখন এই বাবা-মা'র দায়িত্ব তার কাছে বোঝা মনে হয়। এর কারণ এই সকল সন্তানের নৈতিক শিক্ষা পরিবার দিতে ব্যর্থ হয়।
এখন বলবেন পরিবারেরই কি সব দায়?  আমি বলতে চাই পরিবারের দায়টা এখন অনেকাংশে বেশি কারণ পরিবার থেকে যদি ছোটবেলা থেকেই সেই নৈতিক শিক্ষা দেয়া হতো তাহলে এ সমস্যা হবার কথা নয়। যদি পরিবার ছোটবেলাতে নৈতিক শিক্ষা, বাহিরের পরিবেশে মেশার জন্য বাস্তবিক জ্ঞান সন্তানকে দিতেন,  তাহলে সেই সন্তানের আত্মকেন্দ্রিক প্রবনতা থেকে বেরিয়ে আসতো। পরিবারের প্রতি গুরুত্ব বেশি দেবার কারণ হলো পরিবার পৃথিবীর সবচেয়ে আদি সংগঠন। এখানে সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে শিখেছে মানুষ। পরিবারের পরে সমাজে বিচরণ। তাই নৈতিক শিক্ষাটা পরিবার থেকে আসে অনেকাংশ।
আপনার সন্তানকে আপনি ভালো দেখতে চান। আপনি মনে করেন আপনার সন্তান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সুন্দর করে লেখাপড়া করছে। কিন্তু সে কার সঙ্গে মিশছে সেটা কি আপনার দৃষ্টিগোচর হচ্ছে? 
আসলে এভাবে সম্ভবও না সব সময় চোখে চোখে রাখা। তাই একটা সহজও সুন্দর উপায় হলো আপনার সন্তানকে নিয়মিত লেখাপড়া পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা। যাতে আপনার সন্তান সফল হবে তো বটেই তবে এটুকু বলতে পারি আত্মকেন্দ্রিক হবে না। আপনার সন্তান হয়ে উঠবে মানবিকগুণ সম্পন্ন। যা বলার জন্য এতোগুলো কথা বলা তা হলো সহ শিক্ষার মধ্যে অন্যতম হল "স্কাউটিং"। আপনার সন্তান যদি স্কাউটিং এ সম্পৃক্ত থাকে সেক্ষেত্রে তার শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, আধ্যাত্নিক ও সামাজিক ভাবে বেড়ে ওঠা নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে কম। শুধু প্রয়োজন হবে পরিবার থেকে একটু উৎসাহ দেয়া।
 
শুধুমাত্র পাঠ্য বইয়ের বিদ্যাই জীবনে সব সময় সফলতা এনে দিতে পারে না। বিশেষত এ সফলতা বলতে সমাজে যোগ্য হয়ে বেড়ে ওঠাকে বুঝাচ্ছি। দামি দামি বাড়ি, গাড়ি থাকলে সে যোগ্যতা অর্জন করা যায় না। সে জন্য নৈতিকতার প্রয়োজন। এই নৈতিক শিক্ষার  সংগঠন বাংলাদেশ স্কাউটস্। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই একটা শিশু এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত হতে পারে। এর স্তরভিত্তিক ক্রমোন্নতিশীল এগিয়ে চলা একজন মানব শিশুকে চৌকষ করে গড়ে তোলে। জীবনটাকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ করে দেয় স্কাউটিং। যারা স্কাউটিং এর সাথে সম্পৃক্ত তারা কখনো হতাশায় ভোগে না। কারণ তারা জানে তার যোগ্যতা কতটুকু। তারা প্রতিনিয়ত স্কাউটিং এর পর্যায় উত্তীর্ণ করার জন্য নিজেকেই চ্যালেঞ্জ করেছে এবং সেটা অতিক্রম করেছে। এ জন্য জীবনের যে পর্যায়েই স্কাউটরা থাকুক না কেন তারা মানবিক যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে পারে।
স্কাউটিং কেবল শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্যই নয়, বরং নৈতিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্কাউট আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো একজন মানুষকে সৎ, চরিত্রবান, দায়িত্বশীল ও সমাজের প্রতি সচেতন করে গড়ে তোলা।  নৈতিক বিকাশে স্কাউটিংয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক  হলো-
স্কাউট প্রতিজ্ঞা ও আইন অনুসারে, একজন স্কাউট সর্বদা সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ থাকে। এটি তাদের জীবনে সততার চর্চা গড়ে তোলে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করে। স্কাউটদের শেখানো হয় কীভাবে অন্যদের সাহায্য করতে হয়। স্কাউটদের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়, যা তাদের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবোধ গড়ে তোলে। 
বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে স্কাউটরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। এটি তাদের নৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং জীবনের কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। স্কাউটিং মূলত নৈতিক শিক্ষা ও চারিত্রিক গঠনের একটি অনন্য পদ্ধতি, যা একজন স্কাউটকে একজন আদর্শ ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। স্কাউটিং কেবল শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য নয়, বরং নৈতিক মূল্যবোধ গঠনের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্কাউট আন্দোলনের মূল লক্ষ্য একজন মানুষকে সৎ, দায়িত্বশীল, পরোপকারী ও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা।  
স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ব্যাডেন-পাওয়েল ১৯০৭ সালে স্কাউট আন্দোলন শুরু করেন, যার মূল ভিত্তি ছিল চরিত্র গঠন ও সমাজসেবার মাধ্যমে একজন ভালো মানুষ তৈরি করা। স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি শৈশব থেকেই সত্যবাদিতা ও ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা পায়, যা ভবিষ্যতে তার নৈতিক চরিত্র গঠনে সহায়ক হয়। স্কাউট আন্দোলনের অন্যতম প্রধান শিক্ষা হলো “প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করা”।
এর মাধ্যমে স্কাউটরা- সমাজের অসহায় ও দুর্বল মানুষের পাশে দাঁড়ানো শেখে, স্কাউটদের একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচি ও নিয়ম মেনে চলতে হয়, যা-ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলাবোধ গড়ে তোলে। সঠিক পথে থাকার অনুপ্রেরণা দেয় এবং অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে দূরে রাখে।
স্কাউটদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যেমন-প্রাথমিক চিকিৎসা, জীবনরক্ষার কৌশল
অরণ্যে টিকে থাকার উপায়, দূরবর্তী স্থানে নিজেকে পরিচালিত করার দক্ষতা এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে স্কাউটদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়, যা নৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি তাদের জীবনের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করে। 
স্কাউট আন্দোলনের অন্যতম মূলনীতি হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা। স্কাউটিং কার্যক্রমে -জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের প্রতি সম্মানবোধ সৃষ্টি হয়।
সহনশীলতা ও সহমর্মিতার চর্চা হয়। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। স্কাউটিংয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া এবং সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা। এর ফলে স্কাউটদের-চিন্তাভাবনা ও বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা বাড়ে।
নেতিবাচক পরিস্থিতিতেও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা গড়ে ওঠে। নিজের সমস্যার পাশাপাশি অন্যদের সমস্যার সমাধান করার মানসিকতা তৈরি হয়। 
লেখক: সম্পাদক, বাংলাদেশ স্কাউটস, কুমিল্লা জেলা রোভার ।












সর্বশেষ সংবাদ
ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন
কুমিল্লায় তিন দিনে গ্রেপ্তার ১৯ জন
অপারেশন ডেভিল হান্টে সারাদেশে গ্রেফতার আরও ৬০৭ জন
কুমিল্লার আদালতে এক যুবকের বিরুদ্ধে ৫ মামলা
নগরীর ২৪নং ওয়ার্ডে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও সম্মাননা ক্রেষ্ট বিতরণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
অপারেশন ডেভিল হান্ট : কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ১৩ জন
কুমিল্লায় ১৮০০ ফুট অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন
কুমিল্লায় দুই ইটভাটা বন্ধ ঘোষণা পানি ঢেলে নিভিয়ে দেওয়া হলো চুল্লির আগুন
কুমিল্লায় দেড় কোটি টাকার ভারতীয় মোবাইল ফেলে পালিয়েছে মালিক
চান্দিনায় ঘুড়ি আনতে ১৩২ কেভি লাইনের তারে উঠে যুবক!
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২