আগামী
জাতীয় নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে
অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন,
তা রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার উপর নির্ভর করছে। সোমবার রাতে রাজধানীর ফরেন
সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ''এখন
যদি সব পার্টি বলে আমরা ডিসেম্বরে নির্বাচন চাই, সেক্ষেত্রে উনি তো (প্রধান
উপদেষ্টা) বলেছেনৃএমন নয় যে উনি একটি জায়গায় স্থির আছেন। রাজনৈতিক দলগুলো
কী চায় তার উপর নির্ভর করবে।”
নির্বাচনের বিষয়ে প্রেস সচিব সরকারের
অবস্থানের বিষয়টি যখন তুলে ধরেন তার কাছাকাছি সময়ে প্রধান উপদেষ্টা
মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
বলেছেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্র্বতী সরকার
কাজ করছে বলে তাদের ‘আশ্বস্ত’ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রায় দেড় ঘণ্টার
ওই বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,
“আমরা আশা করছি এবং জনগণের যেটা প্রত্যাশা আছে যে, অতি দ্রুত নির্বাচন এবং
একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন তিনি (প্রধান উপদেষ্টা), যার মধ্য দিয়ে
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।”
মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সোমবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করে।
এ
বৈঠকের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের
দাবি জানিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা তাদের বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের
কাজটাই হবে এ বিষয়ে তাড়াতাড়ি কাজ করা। নির্বাচন চলতি ডিসেম্বর বা ২০২৬
সালের জুনের মধ্যে হওয়ার ঘোষণা আগেই দেওয়ার বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেছেন।
এক
প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ''স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে তেমন কথা হয়নি।
জাতীয় নির্বাচন ওনারা দ্রুত চাচ্ছেন, এই ডিসেম্বরেই চাচ্ছেন। আমাদের তরফ
থেকে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ দেখবেন, সিদ্ধান্ত হলে
জানবেন।''
বিএনপির পক্ষে থেকে বলা হচ্ছে সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে
নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ”এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত
হলে আপনারা জানবেন।”
বিএনপির তরফ থেকে সংস্কারের বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন
দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, ''তারা বলেছে আপনারা সংস্কার করবেন
তা আমরা চাই। আমরা সব কমিশনে প্রস্তবা দিয়েছি। আপনাদের সঙ্গে আছি।''
তিনি
বলেন, ''তারা দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় জোর দিয়েছেন। অন্যায়-অত্যাচারের
সঙ্গে জড়িতদের বিচার কাজ যাতে দ্রুত হয় সেগুলোর জন্য বলেছেন।''
আওয়ামী
লীগের আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘হয়রানি’ মামলার
প্রত্যাহারের বিষয়ে বিএনপির আলোচনা করার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
চলমান
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নিয়েও দলটির আলোচনা করার কথা তুলে ধরে শফিকুল আলম
বলেন, ''তারা বলেছেন এখানে যেন মানবাধিকারের কোনো রকমের লঙ্ঘন না হয়।
প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকেও বলা হয়েছে কোনোভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে
দেওয়া যাবে না, যারা অন্যায়-অবিচারের সঙ্গে যুক্ত, সুস্পষ্ট অভিযোগ আছে
তাদেরকে অপারেশন ডেভিল হান্টের আওতায় আনা হচ্ছে। গুরুত্বের সঙ্গে তদারকি
করা হচ্ছে। কোনো রকমের মানবাধিকার লঙ্ঘন চায় না, হবেও না।
''সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে অভিযানে কোন ধরণের নিরপরাধ, নির্দোষ ব্যক্তি এ ধরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ''
তিনি বলেন, বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বিএনপি নেতাদের বলেছেন, গায়েবি মামলার বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ চলছে।
বিএনপি
দেশের স্থিতিশীলতার দিকে জোর দিয়েছে মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন,
''প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তারপরে দেশের শান্তি
ফিরে এসেছে, দেশে কোনো ধরণনের ভাঙচুর দেখছি না। পরিস্থিতি এখন নরমাল। একই
সঙ্গে বিএনপি এসব ঘটনায় শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন। দেশকে অস্থিতিশীল করার
পেছনে তারই ভূমিকা প্রধান।''
সাম্প্রতিক ঘটনার সরকার দায় এড়াতে পারে না
বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ''সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার
কারণেই আজ বা কালের মধ্যে কোন ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা দেশের মানুষের
নিরপত্তার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ''
বই মেলায় সব্যসাচীর স্টলে ভাঙচুরের
বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, ''বিষয়টি নিয়ে বাংলা একাডেমির সঙ্গে কথা বলেছি।
তাদের দ্রুত ঘটনা জানাতে বলেছি, কারণ পুরো ঘটনা এখনও জানি না। বইমেলা খুবই
পবিত্র জায়গা, তার পবিত্রতা আমরা রাখতে চাই।''