কুমিল্লার
চান্দিনায় ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ‘ভোটার ফরম’ সংকটে
পড়েছে উপজেলা নির্বাচন অফিস। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে নতুন ভোটার প্রত্যাশীরা।
আর বিভ্রান্তিতে পড়েছে তথ্য সংগ্রহকারীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,
ছবিসহ নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংশ্লিষ্ট ভোটার এলাকার বিদ্যমান ভোটারের ৫%
নতুন ভোটার হিসেব করে ভোটার ফরম সরবরাহ করে নির্বাচন কমিশন। সেই
ধারাবাহিকতায় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৩
লাখ ১২ হাজার ৫০৮জন বিদ্যমান ভোটারের ৫% শতাংশ হারে ১৫ হাজার ৬২৬জন নতুন
ভোটারের ধারণা করে উপজেলা নির্বাচন অফিস। সেই মোতাবেক প্রথম ধাপে ১২ হাজার
৫শ, দ্বিতীয় ধাপে ৫ হাজার, তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৫শ এবং চতুর্থ ধাপে ৭শ সহ
মোট ১৯ হাজার ৭শ ফরম সরবরাহ করা হয়। তারপরও ফরম সংকটে ভোগছে তথ্য
সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজাররা।
চান্দিনা উপজেলায় চলতি বছরের ২০ জানুয়ারী
থেকে ০৩ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজ শুরু
করেন তথ্য সংগ্রহকারীরা। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে ফরম সংকট। ফরম সংকট পড়ায়
বিপাকে পড়েছে তথ্য সংগ্রকারী ও সুপারভাইজারা। নতুন ভোটার হওয়ার জন্য তথ্য
সংগ্রহকারীদের কাছে ছুটে এসেও ফরম না থাকায় হতাশ হয়েছেন নতুন ভোটার
প্রত্যাশীরা। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচন অফিসের পরামর্শে ছবি তোলার আগেই
ফরম পূরণের আশ^াস দিয়ে ভোটার প্রত্যাশীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেখেই
শান্তনা দেয় তথ্য সংগ্রহকারীরা। এরই মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নে ছবি তোলার কাজ
শেষ হলেও বাকি থাকা অনেকের ফরম পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা
যায়, চান্দিনা পৌরসভা এলাকায়ই ৫শতাধিক ফরম সংকট দেখা দিয়েছে। পৌরসভার ৯টি
ওয়ার্ডে ৩৬ হাজার ৩শ বিদ্যমান ভোটারের ৫% হিসেবে ১ হাজার ৮১৫ জন নতুন ভোটার
হওয়ার কথা। কিন্তু ওই এলাকায় এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৭ নতুন ভোটারের ফরম
পূরণ হওয়ার পরও ফরম সংকটে রয়েছে প্রায় ৫শ নুতন ভোটার।
পৌরসভার ১-৪নং
ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সুপার ভাইজার জহিরুল ইসলাম জানান, আমার এ পর্যন্ত
৮৫০জন নতুন ভোটার ফরম পূরণ করতে পেরেছি। ফরম না থাকায় আরও প্রায় ৩শ ভোটারের
কাগজপত্র নিয়ে রেখেছি। কিন্তু তাদের ফরম পূরণ করা যাচ্ছে না। নির্বাচন
অফিস থেকে দ্রুত এর সমাধান করবেন বলে আশ^াস দিয়েছেন।
পৌরসভার ৫-৯নং
ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার আনোয়ার হোসেন জানান, আর এ পর্যন্ত
৮৪০জন নতুন ভোটারের ফরম পূরণ করতে পেরেছি। বাকি ২১০জনের কাগজপত্র নিয়ে
রেখেছি। ফরম সংকটে তাদের ফরম পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও জানান,
বাড়ি বাড়ি ভোটার তালিকা করতে গিয়ে যখন ফরম শেষ হয়ে যায় তখন স্থানীয়দের নানা
কথা শুনতে হচ্ছে। নতুন ভোটার হওয়ার জন্য কোন কোন ব্যক্তি কাজ ফেলে বাড়ি
থাকেন, তখন আমরা তাদের কাগজপত্র জমা রাখলেও ফরমে স্বাক্ষর রাখতে না পারায়
তাকে পরবর্তী তারিখও জানাতে পারছি না। নতুন ভোটার প্রত্যাশীরা বিষয়টি
ভোগান্তি হিসেবেই মনে করছেন।
উপজেলা বাড়েরা ইউনিয়নের ১-৩নং ওয়ার্ডের
দায়িত্বে থাকা সুপার ভাইজার মোসাম্মদ পারভীন আখতার জানান, আমার এলাকায় ছবি
তোলার কাজও শেষ হয়ে গেছে। তারপরও প্রায় ৫০জন নতুন ভোটার প্রত্যাশীদের ফরম
দিতে পারিনি।
এদিকে উপজেলা নির্বাচন অফিসের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন কোন জায়গায় ফরম সংকট থাকলেও আবার কোন জায়গা থেকে ফরম ফেরতও আসছে।
এ
বিষয়টি আবার ভিন্ন ভাবে দেখছেন সুহিলপুর ইউনিয়নের ১-৪ নং ওয়ার্ডের
দায়িত্বে থাকা সুপার ভাইজার মো. আব্দুল মতিন মিয়া। তিনি বলেন, আমরা বাড়ি
বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটার তালিকা নিশ্চিত করেই ফরম নিয়েছি। কিন্তু ভোটার
অনুপস্থিত থাকলে সেই ফরমটি পূরণ করা সম্ভব হয় নাই। যেসব অনুপস্থিত নতুন
ভোটার রয়েছে তাদের ফরমগুলোই ফেরত দিচ্ছি। যেমন আমার এলাকায় আমি ৭৭০জন নতুন
ভোটার বাছাই করি। এর মধ্যে ৫১জন অনুপস্থিত রয়েছে। সেই অনুপস্থিত ৫১জনের
ফরমই আমি ফেরত দিতে এসেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো.
আশরাফুল ইসলাম জানান, কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারীর
আগে যাদের জন্ম তাদেরকেই নতুন ভোটার তালিকায় অন্তুর্র্ভূক্ত করার কথা
রয়েছে। চান্দিনা উপজেলায় ২০০৮ সালের কয়েক বছর আগে যাদের জন্ম এমন অনেক বেশি
বাদ পড়া ভোটার ছিল। যে কারণে এ উপজেলায় ৫ শতাংশ নয়, মনে হচ্ছে ৮-৯ শতাংশ
হারে নতুন ভোটার হচ্ছে। আমরা যথার্থ ভাবে ফরম সরবরাহ করে যাচ্ছি। ছবি তোলার
আগ পর্যন্ত ফরম সরবরাহ করে যাবো। এছাড়া যারা বাদ পড়বে ২০ ফেব্রুয়ারীর
মধ্যে তাদেরও ভোটার করবো। তারপরও যদি কেউ বাদ পড়ে অন্যান্য সময়ের মতো আমরা
সেবা দিয়ে যাবো।