হাসান
তিলেকারত্নে বিগত আড়াই বছর ধরে বাংলাদেশ নারী দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে
ছিলেন। তবে বরাবরের মতোই আলোচনার পাদপ্রদীপ থেকে দূরেই থাকতেন শ্রীলঙ্কার
সাবেক এই ক্রিকেটার। সম্প্রতি বাংলাদেশ নারী দলের সঙ্গে তার চুক্তির মেয়াদ
শেষ হয়েছে। তিলেকারত্নে নিজেও ইতোমধ্যে বিদায় নিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে। এরপরই
নতুন দেশীয় কোচকে তার স্থলাভিষিক্ত করেছে বিসিবি।
বাংলাদেশ নারী দলের
সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পরপরই শেষ হয়েছে হাসান তিলকারত্নে অধ্যায়।
যেখানে সরাসরি ২০২৫ বিশ্বকাপে ওঠার সুযোগ ছিল নিগার সুলতানা জ্যোতিদের
সামনে। কিন্তু ক্যারিবীয় মেয়েদের কাছে সিরিজ হারায় তারা সেটি হাতছাড়া
করেছে। ফলে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলেই এই মেগা প্রতিযোগিতার টিকিট কাটতে হবে
টাইগ্রেসদের। এদিকে, চুক্তির মেয়াদ শেষেই তিলেকারত্নে বিসিবির অসন্তোষের
বিষয়টি বুঝতে পেরে নিজে থেকেই সরে গেছেন। বিসিবি নতুন করে নিগার সুলতানা
জ্যোতিদের দায়িত্বের ভার দিয়েছেন দেশি কোচ সারোয়ার ইমরানের কাঁধে।
বাংলাদেশি
এই কোচ ইতোমধ্যে নারী ক্রিকেট দলের সঙ্গে কাজও শুরু করেছেন। প্রধান কোচের
দায়িত্ব পাওয়ার পর সারোয়ার ইমরান আজ (মঙ্গলবার) জানিয়েছেন নিজের দায়িত্ব ও
আসন্ন চ্যালেঞ্জের কথা। তিনি বলছিলেন, ‘নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে, বিশ্বকাপের
কোয়ালিফাই ম্যাচ আছে। ব্যাটিংটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জ, এটা আমাদের উন্নতি করতেই
হবে। কারণ (ক্রিকেটের) টপ লেভেলে যেতে হলে ব্যাটিংয়ের বিকল্প কিছু নেই। ওই
চেষ্টাই করতেছি, এগিয়ে যাচ্ছি সেভাবেই।’
বাংলাদেশ নারী দলের দীর্ঘদিনের
সমস্যা ব্যাটিংয়ে ভঙ্গুর দশা। সে কারণে দলের সেরা ব্যাটারদের নিয়ে আলাদা
করে কাজ করছেন ইমরান, ‘ইতোমধ্যে যে ১০ জন সেরা ব্যাটসম্যান আছে, তাদের ডাকা
হয়েছে ক্যাম্পে। তাদের সঙ্গে কাজ করছি, দুই দিন কাজ হয়েছে অলরেডি। কিভাবে
তারা খেলবে, না খেলবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।’
ব্যাটাররা কেন রান
পাচ্ছেন না, মূল সমস্যা কোথায়– এমন প্রশ্নে ইমরান জানান, ‘আমরা কাজ করতেছি
আসলে, কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা ছিল সেগুলো নিয়ে। টেকনিক্যাল বিষয় যেগুলো
আছে, সেসব কাজ হচ্ছে। যে অভাব আছে তাদের ব্যাটিংয়ে সেগুলো বিশেষভাবে দেখছে,
মেয়েরা যাতে একদম স্বাধীনভাবে খেলতে পারে।’
ক্রিকেটারদের অনুশীলনে
দেখেও প্রাথমিকভাবে সন্তুষ্টির কথা জানালেন ইমরান। তবে মাঠে গিয়ে
পারফরম্যান্স ঠিকঠাক হচ্ছে না বলেও স্বীকার করে নিয়েছেন পরপরই, ‘অনুশীলন
দেখে তো মনে হয়েছে তারা খুবই ভালো। কিন্তু মাঠে গেলে মানসিক নাকি
টেকটিক্যাল সমস্যা হয়, সেগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
ব্যাটিংয়ে
অস্বস্তি থাকলেও, নিয়মিত ভালো করে আসছেন টাইগ্রেস বোলাররা। তবে এ নিয়ে
তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে চান না নতুন প্রধান কোচ ইমরান, ‘না, বোলিং নিয়েও
স্বস্তির কিছু নাই। এখানে ভালোর কোনো শেষ নাই, এখানে সবসময় ভালো করতে হবে।’
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ নারী দলে কেবল মাত্র প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ
পেয়েছেন সারোয়ার ইমরান। বাকি কোচিং স্টাফ এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। জানা
গেছে সেসবও দ্রুতই নিয়োগ করা হবে।
দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত ও
অন্যতম জনপ্রিয় মুখ সারোয়ার ইমরান। অবশ্য তার বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ দলেরও
কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার অধীনেই বাংলাদেশ ২০০০ সালে নিজেদের
ঐতিহাসিক অভিষেক টেস্ট খেলেছিল ভারতের বিপক্ষে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায়
অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রধান
কোচেরও দায়িত্ব পালন করেছেন সারোয়ার ইমরান। নতুন করে নারী জাতীয় দলের
দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি মিরপুরে জ্যোতি-ফারজানা-সুলতানাদের সঙ্গে কাজও শুরু
করেছেন।
প্রসঙ্গত, উইন্ডিজ সফরে যাওয়ার আগে সরাসরি ২০২৫ বিশ্বকাপে
খেলার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ নারী দলের। ওয়ানডে সিরিজের এক ম্যাচ জিতে তারা
সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল। তবে প্রথমবারের মতো সরাসরি বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা
হলো না নিগার সুলতানা জ্যোতির দলের। অবশ্য বাছাইপর্ব খেলেই টাইগ্রেসদের
বিশ্বকাপের মূল পর্বে যাওয়ার সুযোগ থাকছে। বাংলাদেশ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ
টেবিলের সাতে থেকে এই প্রতিযোগিতা শেষ করে। যদিও তাদের সমান ২১ পয়েন্ট
নিয়েও সরাসরি বিশ্বকাপের টিকিট পায় নিউজিল্যান্ড, কারণ তাদের নেট রানরেট
ছিল বেশি। এখন নতুন কোচ সারোয়ার ইমরানের সামনে বাছাইপর্ব উৎরে বিশ্বকাপের
মূলপর্বে ওঠাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ!