বাংলাদেশ ব্যাংক জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি আগের মতো রাখা হয়েছে। আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ৯.৮ শতাংশ, সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৭.৫০ শতাংশ লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। ব্যাংক খাত থেকে সরকারকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে (রিজার্ভ মানি) মুদ্রার সরবরাহ বাড়াবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।
মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিনিয়োগ বৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন না তিনি। মূল্যস্ফীতি কমানোই প্রধান টার্গেট। তাঁর আশা, আগামী জুন মাসের মধ্যে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে।
তখন ধীরে ধীরে নীতি সুদহার কমানো হবে। তাঁর মতে, যেকোনো সিদ্ধান্তের ফল আসতে ছয় থেকে ১২ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। আর কাক্সিক্ষত ফল পাওয়ার জন্য ১৮ থেকে ২৪ মাস সময় প্রয়োজন হয়। তাঁর আশা, দেশের মূল্যস্ফীতি আগামী জুনের মধ্যে ৭ থেকে ৮ শতাংশ ও ২০২৬ সালে ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
এখন মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের মানুষ বিশেষত কম আয়শ্রেণির পরিবারগুলো মূল্যস্ফীতির কারণে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি। মুদ্রানীতিতে বংলাদেশ ব্যাংক যে নীতি গ্রহণ করেছে, তার লক্ষ্য বা মূল উদ্দেশ্যও হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম কার্যক্রম হলো দেশের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা।
মুদ্রা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ ও দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগ (সরকারি, বেসরকারি) প্রভাবিত করার পাশাপাশি মুদ্রা ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য থাকে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করা। আবার প্রবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত থাকে কর্মসংস্থান ও সামাজিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা অর্জন। সুদহার দ্বারা মুদ্রা সরবরাহ ও বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে থাকে। মুদ্রা সরবরাহের নিয়ামক নীতি সুদহার। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত মুদ্রানীতিতে রেপো হার ১০ শতাংশই রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিনিয়োগ মন্দাকালেও নীতি সুদহার ১০ শতাংশে বহাল রাখার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মনে করে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এই কঠোর অবস্থান বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাদের মতে, জানুয়ারি-জুন ২০২৫ সালের জন্য বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯.৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত বেসরকারি খাতকে আশাহত করেছে। ডিসিসিআই মনে করে, এতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ আরো হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। বেসরকারি খাতের আস্থা ও ব্যাবসায়িক কার্যকলাপ পুনরুদ্ধারের জন্য এই খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা অবশ্যই দুই অঙ্কের ঘরে থাকা প্রয়োজন।
মূল্যস্ফীতি, নিম্ন প্রবৃদ্ধি, ধীরগতির বেসরকারি বিনিয়োগসহ বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঘোষিত মুদ্রানীতি কার্যকর হোক-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।