ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতির পবিত্র শবে বরাত আজ। রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি এদিন হালুয়া-রুটিসহ বাহারি খাবারের আয়োজন করেন অনেকে। বিশেষ করে রাজধানীর পুরান ঢাকাবাসীর কাছে শবে বরাত যেন আরও বিশেষ কিছু। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনে দুই ঈদের পর পুরান ঢাকাবাসীর কাছে শবে বরাতই সবচেয়ে বড় উৎসব।
এদিকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মহিমান্বিত এ লাইলাতুল বরাতকে কেন্দ্র করে অন্য বছরের মতো এবারও পুরান ঢাকায় ধুম পড়েছে হালুয়া-রুটি বিক্রির। তবে বিক্রেতা ও স্থানীয়রা বলছেন, শবে বরাতকে কেন্দ্র করে আগের সেই আমেজে এখন অনেকটাই ভাটা পড়েছে।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর চকবাজার, গেন্ডারিয়া, রায়সাহেব বাজার ও বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরান ঢাকায় আনন্দ ও সিটি কনফেকশনারি, আলাউদ্দিন সুইটসসহ বিভিন্ন দোকানে নানা রকমের রুটি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এসব রুটি এলাকাবাসীর কাছে শবে বরাতের রুটি নামে পরিচিত। ফুল, মাছ, হাঁস, কুমির, পাখিসহ বিভিন্ন আকৃতি দেওয়া হয়েছে এসব রুটির। পাশাপাশি আছে গাজর, সুজি, বুটসহ বিভিন্ন ধরনের হালুয়া। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পুরান ঢাকার শত বছরের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সঙ্গে হালুয়া-রুটি মিশে আছে। এসব খেয়ে স্থানীয় মুসলমানরা শবে বরাত পালন করেন।
চকবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানি হালুয়া, মাস্কাট হালুয়া, মাখন্দি হালুয়া, সুজির হালুয়া, গাজরের হালুয়া ও নকশি, ফেন্সি রুটির পসরা সাজিয়েছেন। এসব দোকানকে কেন্দ্র করে মানুষের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। ফেন্সি ও নকশি নামের এসব রুটি ১০০ গ্রাম থেকে শুরু করে ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনেরও রয়েছে। আর রুটিতেও দেখা গেছে নানা নকশা। এসব এলাকায় মাছের বরা, জিলাপি, ঠান্ডা দই, মোতিচুর লাড্ডু, মাওয়া লাড্ডু এবং রসমালাইও সমানতালে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, শবে বরাতকে কেন্দ্র করে হালুয়া-রুটি খাওয়ার ধর্মীয় কোনো নির্দেশনা না থাকলেও এটি বহু বছর ধরে প্রচলিত প্রথা হিসেবে চলে আসছে। এদিনকে কেন্দ্র করে সবার মধ্যে একটি অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। সবার এমন উৎফুল্লতায় একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। তাছাড়া এদিনে আত্মীয় ও পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতেও পাঠানো হয় হালুয়া-রুটি। এমন কার্যক্রম পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি করতে এবং বন্ধন আরও সুদৃঢ় করতে ভূমিকা পালন করে বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
রুটি কিনতে আসা পুরান ঢাকার বাসিন্দা শম্পা আক্তার বলেন, পুরান ঢাকায় শবে বরাতে সবাই ঘরে হালুয়া-রুটি তৈরি করেন। আর যারা তৈরি করেন না তারা দোকান থেকে হালুয়া-রুটি কিনে শবে বরাত উদযাপন করেন। এদিনে বাসায় মেহমান এলে আমরা রুটি-হালুয়া পরিবেশন করি। শবে বরাতে আত্মীয় ও স্বজনদের বাসায় রুটি-হালুয়া পাঠানোর ঐতিহ্য শত বছরের। আমরা এখনো সেই রীতি পালন করে আসছি।
মুহিবুর রহমান নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, পুরান ঢাকায় আজকের দিনে নতুন জামাইরা শ্বশুরবাড়িতে বড় রুটি এবং হালুয়া নিয়ে যান। একইসঙ্গে মেয়ের বাড়ি থেকেও শ্বশুরবাড়িতে রুটি ও হালুয়া পাঠানো হয়। এটি দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। কম-বেশি সবাই করেন। আমিও কিনতে এসেছি।
দাম প্রসঙ্গে দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেজি প্রতি ফেন্সি রুটি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। মাছ, প্রজাপতি আকৃতির ৫-৭ কেজির রুটির সর্বোচ্চ দাম ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও হালুয়া বিক্রি করতে দেখা গেছে বাটি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়।
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, মোগল আমল থেকেই শবে বরাতে রুটি-হালুয়া খাওয়ার রীতি চালু আছে। তবে এসময় মুনাফা করার চেয়ে উৎসবে যোগদানটাই বড় বিষয়। বিক্রি ভালো হচ্ছে। ফেন্সি রুটি শুধু আজকের দিনেই পাওয়া যায়। এদিনে এ রুটির বিশেষ চাহিদা থাকে।
আনন্দ কনফেকশনারির বিক্রেতা বাবু মিয়া জানান, দুপুর থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে বিকেল ও সন্ধ্যায় অত্যধিক ভিড় থাকে। এসময়ে বিক্রি করে সামাল দেওয়া কঠিন। গভীর রাত পর্যন্ত চলবে আমাদের বেচাকেনা। ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সুস্বাদু রুটি।