অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। এরই মধ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া হয়। জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হয় ৫ ফেব্রুয়ারি।
ছয়টি সংস্কার কমিশন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ঐকমত্য কমিশন করে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ, যিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনেরও প্রধান। বাকি পাঁচ সংস্কার কমিশনের প্রধানরা ঐকমত্য কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন, ‘ছয় কমিশনের পুরো প্রতিবেদন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গে কথা বলবে ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর কথার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে কতটুকু সংস্কার আসলে দ্রুত করতে হবে, কতটুকু পরে করা যাবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জুলাই সনদ প্রণয়ন করবে সরকার।’ সেই ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সভা হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি এক চরম দুঃসময় পার করে এসেছে। রাজনীতিতে আদর্শ, জনকল্যাণ, আত্মত্যাগ ও নৈতিকতা ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। জনস্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতির ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়েছে সাধারণ মানুষ। এ জন্যই সংস্কার খুব জরুরি দরকার।
আদর্শভিত্তিক রাজনীতি, সুশাসন ও দেশের উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে চলে।
আদর্শচ্যুত রাজনীতিও সমাজ বা রাষ্ট্রকে কিছু দেয় না। নেতৃত্ব অযোগ্য, অদক্ষ হলে সৃষ্টি হয় নৈরাজ্য। স্বাধীনতা লাভের পর গত পাঁচ দশকে সময় যত গড়িয়েছে, ততই যেন রাজনীতি আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছে। অথচ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতির গুণগত মানের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের উন্নতি বা অবনতি। শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে সংস্কার সম্পন্ন হলে তা অন্যদের জন্যও তা শিক্ষণীয় হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ অনেকটাই এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত চলমান সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার সম্প্রতি ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশে চলমান সংস্কার কর্মসূচির প্রতি বিশ্বব্যাংকের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার অবশ্যই একটি বড় কর্মযজ্ঞ। সংস্কারটি খুব জরুরি দরকার। কারণ এ দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, সুশাসন, বৈষম্যহীন সমাজ, সমৃদ্ধি, শান্তি-শৃঙ্খলা আর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে।