দেশে ভূমিসেবা কার্যক্রম রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছে। পরিবারের কোনো সদস্যের চিকিৎসা, সন্তানের বিদেশযাত্রাসহ আরো অনেক কারণে মানুষের জরুরি ভিত্তিতে জমি বিক্রির প্রয়োজন হয়, কিন্তু তা করা যাচ্ছে না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে সারা দেশের বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। খতিয়ান, ডিসিআর পাওয়া যাচ্ছে না।
নিবন্ধনপ্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। নিবন্ধনের জন্য খাজনা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, কিন্তু খাজনা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া নামজারি ও খাজনা না দিলে সেই জমিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সংযোগ আনা যায় না। ব্যাংকঋণ নেওয়া যায় না।
একই কারণে অনেক নির্মাণকাজও বন্ধ রয়েছে। আর এসবের জন্য প্রধান অজুহাত হচ্ছে সার্ভারের ত্রুটি।
জানা যায়, গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত ই-মিউটেশন সিস্টেম, ই-পরচা সিস্টেম এবং ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল ভূমি মন্ত্রণালয়। ১ ডিসেম্বর থেকে এই সেবা পুনরায় চালু করা হবে বলে জানানো হয়।
কিন্তু আজ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হয়নি ভূমিসেবা। লগইন আইডি না পাওয়ায় ভূমি ও ফ্ল্যাট ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো নামজারি করাতে কিংবা খাজনা দিতে পারছে না। দলিল নিবন্ধনও ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, সফটওয়্যার সমস্যার কারণে ভিপি সম্পত্তি, কোর্ট অব ওয়ার্ডস সম্পত্তি ও খাসজমি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিযোগ, নতুন সফটওয়্যার চালুর আগে কোনো পাইলট প্রজেক্ট নেওয়া হয়নি।
পাশাপাশি ভূমি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। এখন সফটওয়্যার জটিলতা ও ধীরগতির কারণে কোনো কাজই করা যাচ্ছে না। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন গ্রাহকরা। ঢাকাসহ সারা দেশেই তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত অসংখ্য আবাসন কম্পানি রয়েছে। নামজারি ও খাজনা দিতে না পারার কারণে তারা নতুন ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারছে না। পাশাপাশি ব্যাংকঋণও নিতে পারছে না অনেকে। ব্যক্তিগত উদ্যোগও অনেক কমে গেছে। ফলে নির্মাণশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রড, সিমেন্ট, শ্রমিক, রং, প্রকৌশলী, পাথর, টাইলস, বিদ্যুৎসামগ্রীসহ উপখাতগুলো ক্ষতির মুখে। এই খাতের শ্রমিকরাও বেকার হচ্ছেন।
দেশে খুনাখুনির যত ঘটনা ঘটে, তার একটি বড় অংশের কারণ ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ। জমিজমার বিরোধ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও কম নয়। অভিযোগ আছে, অবৈধ আয়ের জন্য ভূমি অফিসগুলোতে এসব বিরোধ বা সমস্যা জিইয়ে রাখা হয়। অর্থের বিনিময়ে একজনের জমি আরেকজনের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার অভিযোগও কম নয়। এসব কারণে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনা হয়। বলা হয়ে থাকে, প্রথম থেকেই এই প্রক্রিয়ায় অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রবল ছিল। এসব কারণে এখন কেউ কেউ মনে করছে, বিদ্যমান সার্ভার জটিলতার পেছনে বিশেষ কোনো চক্রান্ত থাকতে পারে। আবার কেউ কেউ বলছে, বর্তমান সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে কোনো বিশেষ চক্রের তৎপরতাও থাকতে পারে।
আমরা আশা করি, ভূমিসেবা কার্যক্রমে গতি আনতে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি এর পেছনে কোনো চক্রান্ত আছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হোক।