বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। এরই মধ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ছয়টি সংস্কার কমিশন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ঐক্যমত কমিশন করে।
এর নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এরই মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবে রূপ দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন চেয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করা হবে, যাতে নির্বাচনের পথে এগোনো যায়।
এ লক্ষ্যে রিপোর্ট নিয়ে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘এই ঐক্যপ্রক্রিয়া এক অর্থে সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু। রাজনৈতিক দল, জনগণ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব, সব মিলে পৃথিবীজুড়ে বড় রকমের সমর্থন আছে। কারো কোনো রকমের দ্বিধা নেই, কোনো প্রশ্ন নেই।
তারা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এবং ক্রমাগতভাবে সমর্থন বাড়ছে।’ আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর রাষ্ট্র গঠন করার বিষয়ে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘কাউকে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য নয়, একটা ঐকমত্যের মাধ্যমে হবে। সুযোগ কাজে লাগালে একটা সুন্দর দেশ পাওয়া যাবে।’
গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন কিংবা গণ-অভ্যুত্থানের পর সংগত কারণেই ছাত্র-জনতার মধ্য থেকে দাবি উঠেছে যে এবার তারা আর আগের মতো সরকার পরিবর্তন নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সর্বাত্মক মেরামত এবং বৃহত্তর অর্থে সংবিধানের অর্থবহ পরিবর্তন চায়। প্রয়োজন হলে সমাজের সব স্তরের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে কিংবা তাদের পরামর্শ নিয়ে আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এবং বিশেষ করে সংবিধান সংস্কারের দুরূহ কাজটি সম্পাদন করতে হবে।
ঐক্যপ্রক্রিয়ার বিষয়টিকে যেমন ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে, আবার নানা প্রশ্নও তুলছে অনেকে। কেউ কেউ বিষয়টিকে জটিল ও সময়সাপেক্ষ বলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে ঐকমত্যের প্রয়াস শুরু হওয়ার পর এর প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়ন নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা করেও রাজনৈতিক নানা মতাদর্শের কারণে কতটুকু ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছে, সুপারিশ বাস্তবায়নে অনেক বিষয়ে সমর্থন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জও। কারণ কোন দল কী সুপারিশ করল, তা প্রকাশ করা হবে। ফলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে গেলে তাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব হবে না। সে অবস্থায় সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, শুধু যেসব বিষয়ে ঐক্যমত হলো, সেগুলোকেই কি বাস্তবায়ন করা হবে-এমন নানা প্রশ্ন তাদের মনে এসেছে।
সবার আন্তরিক চেষ্টায় দ্রুত সব কিছু সংস্কার হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।