জুলাই অভ্যুত্থান এবং ক্ষমতার পালাবদলের পর দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই নাজুক হয়ে পড়ে। পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমের স্বাভাবিকতা ব্যাহত হয়। এই সুযোগে অপরাধ বৃদ্ধি পায়। নানা ধরনের অন্তর্ঘাত শুরু হয়।
শিল্পাঞ্চলসহ নানা স্থানে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে জনজীবনের স্বাভাবিকতা ব্যাহত হতে থাকে। কখনো কখনো সেসব সহিংসতায় রূপ নেয়। এমন অবস্থায় প্রথম থেকেই দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি জনজীবনের স্বাভাবিকতা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫০ দিনে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৮৮টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত ৩০ বার মূল সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
গত এক মাসে ৪২টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, রাজনৈতিক কোন্দল এবং অন্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনাও ছিল। সোমবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনা সদর আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সেনা সদর মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
মব জাস্টিস-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, শুধু মব জাস্টিস নিরসন নয়, চাঁদাবাজি, চুরি, রাহাজানি ও হত্যা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। গত দুই মাস আগে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল ২৫০টি, বর্তমানে তা কমে ১২০টিতে নেমেছে।
চুরি ছিল ৮৫০টির মতো, বর্তমানে ৬০০টির নিচে নেমে এসেছে। হত্যা সাড়ে তিন শ ছিল, বর্তমানে ১২০-এ নেমেছে। পার্বত্যাঞ্চলে কুকি-চিনের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর পেট্রোলিংয়ের কারণে কুকি-চিনের দৌরাত্ম্য রোধ করা গেছে। গত রবিবারও কুকি-চিনের দুটি ক্যাম্প (আস্তানা) ধ্বংস করা হয়েছে। এ ছাড়া কুকি-চিনের অত্যাচারে বাড়িছাড়া ১১টি বম পরিবারকে সম্প্রতি সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদের গ্রামে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।
কুকি-চিনের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাঁরা আহত হয়েছেন, সেনাবাহিনী তাঁদেরও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। আজ পর্যন্ত তিন হাজার ৮৫৯ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪১ জন এখনো চিকিৎসাধীন। সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের জনগণের জান-মাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আমরা আশা করি, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী বরাবরের মতোই জাতীয় প্রয়োজন ও উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের সর্বোচ্চ অবদান রাখবে।