সৌদি
আরবে গিয়ে কৃষক পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন সাজিদ হোসেন (২২)।
মেডিকেল চেকআপ, ফিঙ্গার, ম্যানপাওয়ার ও ওকালা সম্পন্ন। বিমানের টিকেট কাটা
বাকি। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনা কৃষক পিতার সেই স্বপ্নকে তছনছ করে দিয়েছে।
সড়কে প্রাণ হারিয়ে আর বিদেশ যাওয়া হলো না সাজিদ হোসেনের।
মঙ্গলবার (১৮
ফেব্রুয়ারি) রাতে কুমিল্লা-বাঙ্গড্ডা সড়কের লালমাই উপজেলার ভুশ্চি দক্ষিণ
বাজারে মোটরসাইকেল ও নসিমনের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারান সাজিদ হোসেন।
তিনি লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের আশেকের তুলাতুলী গ্রামের কৃষক
আবদুর রহমানের ছোট ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী, নিহতের পরিবার ও পুলিশ জানায়,
মঙ্গলবার রাত অনুমান ৮.৩০টায় একটি আরটিএ মোটরসাইকেলযোগে সাজিদ হোসেন, তার
বন্ধু ফাহিম ও রায়হান ভুশ্চি বাজার থেকে বাড়িতে যাচ্ছিলেন। তাদের
মোটরসাইকেলটি ভুশ্চি বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র পার হলে ভুশ্চিগামী একটি
নসিমনের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে নসিমনের ধাক্কায় বুকে আঘাতপ্রাপ্ত
হয়ে ঘটনাস্থলেই সাজিদ হোসেন প্রাণ হারান। তার দুই বন্ধুকে গুরুতর আহত
অবস্থায় জেলার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মোটরসাইকেলটির মালিক ফাহিম
হলেও দুর্ঘটনার সময় সেটি চালাচ্ছিলেন নিহত সাজিদ হোসেন।
নিহত সাজিদ
হোসেনের বাবা কৃষক আবদুর রহমান কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার বড় ছেলে সুমন
৮বছর বয়সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। ছোট ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর সবকিছু
চূড়ান্ত করেছি। কিন্তু ছেলে আমার পরদেশে একবারে চলে গেছে। আল্লাহ আমার
ছেলেকে জান্নাত দান করুক।
সাজিদের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম সুজন বলেন, আমি
জেলার চান্দিনা উপজেলায় একটি এনজিওতে জুনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরি করি।
সেখানকার পরিচিত মনির হোসেন নামের একজনের মাধ্যমে ছোট ভাই সাজিদকে সৌদি
পাঠানোর উদ্যোগ নিই। চার লক্ষ টাকার চুক্তিতে একমাস আগে মনির হোসেনকে ঋণ
করে দেড় লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। বাকি টাকা বিমানের টিকেট ক্রয়ের সময় দেওয়ার
কথা ছিল। আজ (বুধবার) বিকেলে আমি তাদের বাকী টাকা পরিশোধ করার প্রস্তুতিও
নিয়েছিলাম। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে।
ভুশ্চি
বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক আমিনুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার
পরপরই আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ধারনা করা যাচ্ছে ঘটনাস্থলেই সাজিদ
হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পরিবার কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে না মর্মে
ময়নাতদন্ত না করেই মরদেহ বাড়ি নিয়ে গেছে এবং দাফন সম্পন্ন করেছে। দুর্ঘটনা
কবলিত মোটরসাইকেলটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা (ওসি) মো: শাহ আলম বলেন, সড়কে দুর্ঘটনায় নিহত সাজিদ হোসেন
কয়েকদিনের মধ্যে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। নিহতের পরিবারের লিখিত আবেদনের
প্রেক্ষিতে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। বুধবার দুপুরে জানাজা শেষে তাকে
পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।