কৃষি
নির্ভর কুমিল্লায় এবার আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষক। তবে
মৌসুমের শুরুতে আলুর দরপতনে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে তারা। বিদেশে আলু রপ্তানীর
সুযোগ বাড়িয়ে কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া কমিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে প্রশাসনের
দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এ জেলার কৃষক।
আলু চাষে বছরের পর বছর লোকসান গুনে
কুমিল্লা জেলার কৃষকরা আলু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ সালের
অর্থ বছরে বাজারে আলুর অহংকারদেখেছে ক্রেতারা। ১৫-২০টাকা কেজি দরের আলু
কিনতে হয়েছে ৭০-৮০টাকা কেজি দরে। আলু চাষীদের সাথে সাথে কপাল খুলেছিল আলু
ব্যবসায়ীদের। গত কয়েক বছরের লোকসান পুষিয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম
হয়েছে ব্যবসায়ীরা। গত দুই বছরের টানা মুনাফা অর্জনে এবার জেলায় ৯ হাজার ৬১
হেক্টরে জমিতে আলু চাষাবাদ করেছে কৃষক। পর্যাপ্ত শীতের পাশাপাশি আবহাওয়া
অনুকূলে থাকায় আলু ক্ষেতে রোগ বালাইও ছিল কম। যে কারণে এ বছর আলুর বাম্পার
ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষক ও কৃষি অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা
যায়, এবছর কুমিল্লার ১৭টি উপজেলায় ৯ হাজার ৬১ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ
হয়েছে। তারমধ্যে সর্বোচ্চ চাষাবাদ হয়েছে জেলার দাউদকান্দি উপজেলায়। ওই
উপজেলায় ৩ হাজার ৪৯৭ হেক্টর, দেবীদ্বার উপজেলায় ২ হাজার ৬৭ হেক্টর, বুড়িচং
উপজেলায় ৮৯০ হেক্টর, চান্দিনা উপজেলায় ৫০৪ হেক্টর, মুরাদনগর উপজেলায় ২৩৫
হেক্টর, হোমনা উপজেলায় ৪৫২ হেক্টর, আদর্শ সদর উপজেলায় ১৫০ হেক্টর,
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ১৩৩ হেক্টর, চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ১৩১ হেক্টর, লাকসাম
উপজেলায় ৮ হেক্টর, নাঙ্গলকোট উপজেলায় ৫৫ হেক্টর, বরুড়া উপজেলায় ২৬৭ হেক্টর,
মেঘনা উপজেলায় ৩৭২ হেক্টর, তিতাস উপজেলায় ১৪৫ হেক্টর, লালমাই উপজেলায় ১১০
হেক্টর, সদর দক্ষিণ উপজেলায় ৪০ হেক্টর ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় সর্বনিম্ন ৫
হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ হয়েছে।
এদিকে, এরই মধ্যেই উত্তর বঙ্গের আলুর
চাপ পড়েছে সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লার বাজারে। রেকর্ড গড়ে চূড়ায় থাকা আলুর
দাম এক লাফে মাটিতে নেমে গেছে। স্থানীয় কৃষকদের আলু উত্তোলনের আগেই উত্তর
বঙ্গের আলুতে কোল্ড স্টোরেজগুলো ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই
অবস্থায় আলুর আরও বেশি দরপতনের শঙ্কায় আছেন এ জেলার কৃষক। ৭০-৮০ টাকা কেজি
দরের আলু এখন খুচরা বাজারেই ১২-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে
থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে আলু ৫-৭টাকা কেজি দরে নামার সম্ভাবনা রয়েছে।
এতে আলু চাষে লাভ থাক দূরের কথা চাষাবাদের খরচ উঠানোও সম্ভব হবে না বলে মনে
করেন কৃষক।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার রারিরচর গ্রামের আলু চাষী আকতার
হোসেন জানান- এ বছর আমি ৫ একর জমিতে আলু চাষ করেছি। মৌসুমের শুরুতে বীজের
দাম ছিল দ্বিগুন। এছাড়া অন্যন্য যে কোন বছরের তুলনায় শ্রমিক খরচও বেশি।
আশাকরি আলুর ফলনও ভাল পাবো। তবে বাজারে যেভাবে আলুর দাম কমে যাচ্ছে এভাবে
চলতে থাকলে লাভ থাক দূরের কথা খরচও উঠবে না।
দেবীদ্বার উপজেলার ছোটনা
গ্রামের কৃষক নূরে আলম জানান, আমি ২৭ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছি। প্রতি
শতাংশে ১ হাজার টাকার উপরে খরচ হয়েছে। বাজারের বর্তমান যে অবস্থা এমন
অবস্থা থাকলে খরচ উঠে কিছু লাভ হবে। এর নিচে নামলে লোকসান হবে। তবে উত্তর
বঙ্গ থেকে যে পরিমাণ আলু এখনই বাজারে আসছে, এমন ভাবে চলতে থাকলে আমাদের
অঞ্চলের আলু কোল্ড স্টোরেও রাখতে পারবো না। তখন দাম আরও কমে যাবে।
চান্দিনার
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সারওয়ার হোসেন জানান, এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় এবং
প্রচুর শীত থাকায় আলু ক্ষেতে রোগ বালাইও কম ছিল। যে কারণে অন্যান্য যে কোন
বছরের তুলনায় আলুর ফলন অনেক বৃদ্ধি পাবে। মূলত আলুর বীজ রোপনের ৮০-৯০
দিনের মধ্যেই উত্তোলন করতে হয়। সম্প্রতি যারা আলু উত্তোলন করছেন তাদের
প্রতি শতকে ৩ থেকে সাড়ে ৩মন আলু পাচ্ছেন। আরও কয়েকদিন গেলে আলুর সাইজ বাড়বে
এবং ফলনও বৃদ্ধি পাবে। এ অঞ্চলের কৃষকরা যদি তাদের নিজ নিজ এলাকার কোল্ড
স্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করতে পারে তাহলে লোকসান না হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
বাংলাদেশ
কোল্ড স্টোরেজ সমিতির পরিচালক চন্দন সাহা জানান, উত্তর বঙ্গের আলু এখন
বাজারে আসলেও কোন কোল্ড স্টোরেজে আসেনি। কারণ ১ মার্চ থেকে কুমিল্লার কোল্ড
স্টোরগুলো চালু হবে। আর মার্চের পর কুমিল্লা অঞ্চলের আলুও অনেক উঠবে।
সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র উত্তর বঙ্গের আলুর উপর নির্ভরশীল হবে না কোল্ড
স্টোরেজ মালিকরা।
কৃষক বাঁচাতে সরকার আলু রপ্তানী নিশ্চিত করা এবং
স্থানীয় কোল্ড স্টোরেজগুলো ভাড়া কমিয়ে এলাকার কৃষকদের আলু অগ্রাধিকার
ভিত্তিতে মজুদ করার সিদ্ধান্ত জরুরী বলে মনে করেন কুমিল্লা অঞ্চলের কৃষক।
কুমিল্লা
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ কৃষকদের এই
শঙ্কার সাথে একমত পোষন করে বলেন, যদি আগামী ১৫ দিন বৃষ্টি না হয় তাহলে মাঠ
থেকে উত্তোলনকৃত আলু কৃষক তাদের বাড়িতে মজুদ করে ধীর স্বস্তিতে বিক্রি করতে
পারবে। কোল্ড স্টোরেজে মজুদ করতে না পারলে বা ১৫ দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে
বিপাকে পড়তে পারে এ জেলার কৃষক।