কুমিল্লার
লাকসামে আজ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল
ইসলাম আলমগীর আসছেন। এ উপলক্ষে ওইদিন অনুষ্ঠিতব্য জনসভা সফল করার লক্ষ্যে
ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
বিএনপির মহাসচিবের আগমনকে ঘিরে গতকাল
বুধবার সারাদিন লাকসাম পৌর শহরে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের
নেতাকর্মীদের খন্ড খন্ড আনন্দ মিছিলসহ শোডাউন করেছে। এলাকায় তাঁদের অবস্থান
জানান দিচ্ছেন। আবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জনসভাকে
ঘিরে বিএনপিতে চলমান ২১ বছরের গ্রুপিংয়েরও অবসান হতে যাচ্ছে। এমনই বার্তা
দিলেন স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীরের লাকসামে আগমন উপলক্ষে অনুষ্ঠিতব্য জনসভা সফল করার লক্ষ্যে উপজেলা
বিএনপির দক্ষিণ লাকসামস্থ কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে
সংবাদ সম্মেলন করেছেন কর্ণেল (অব:) এম আনোয়ারুল আজিম অনুসারী বিএনপি
নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বিএনপি নেতা মো. ফজলে
রহমান চৌধুরী আয়াজ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এখন থেকে লাকসামে
জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির নেতাকর্মীরা দলের স্বার্থে এক ও অভিন্ন। আমাদের
মধ্যে এখন কোনো বিভেদ নেই। আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার
লাকসামে বিএনপির জনসভা হবে স্মরণকালের জনসভা। যা লাকসামের রাজনৈতিক ইতিহাসে
স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি সকলকে ওইদিন যথাসময় জনসভাস্থলে উপস্থিত থাকার
আহবান জানান। এসময় বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের (কর্ণেল (অব:) আজিমের
অনুসারী)নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় বিএনপির আয়োজনে আগামীকাল
(২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লাকসাম ষ্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ওই জনসভায় বিএনপির
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে
এদিকে
ওই জনসভাকে ঘিরে লাকসামে বিএনপির দু'টি গ্রুপ গত কয়েকদিন ধরে পৃথক পৃথক
প্রস্তুতি সভা, মিছিল জনসভাস্থল পরিদর্শন করে আসছিলেন। একটি গ্রুপের
নেতৃত্বে রয়েছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল
কালাম (চৈতী কালাম)। অপর গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির
সাবেক বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ কর্নেল (অব.) এম আনোয়ার উল
আজিম।
লাকসাম-মনোহরগঞ্জে বিএনপির এই বিরোধ প্রায় ২১ বছর ধরে চলমান।
এখানে বিএনপি ছিলো ত্রিধাবিভক্ত। ত্রিধাবিভক্ত বিএনপির কালাম-আজিম গ্রুপের
বাইরেও লাকসাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ভাইয়া গ্রুপের পরিচালক
বিএনপি নেতা আলহাজ মজির আহমেদ একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিতেন।
এদিকে ২০১৩
সালের ২৭ নভেম্বর রাতে লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মো.
সাইফুল ইসলাম হিরু এবং পৌরসভা বিএনপির সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির পারভেজ গুম
হন। দীর্ঘ ১৩ বছরেও গুম হওয়া বিএনপির ওই দুই নেতার আজও কোনো খোঁজ মিলেনি।
বিএনপির ওই দুই নেতার গুমের ঘটনায় একটি গ্রুপ পরোক্ষভাবে বিএনপির অপর
গ্রুপের নেতৃত্বে থাকা আলহাজ মজির আহমেদকেও দুষছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট
আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক
মো. আবুল কালাম (চৈতী কালাম) গ্রুপ এবং মজির আহমেদ গ্রুপ এক হয়ে যায়।
ফলশ্রুতিতে বিএনপি নেতা মজির আহমেদকে লাকসাম বণিক সমিতির আহ্বায়ক করা হয়।
অপরদিকে
বিএনপির অপরাংশ কর্ণেল (অব:) আজিম গ্রুপের অনুসারী গুম হওয়া পরিবারসহ
অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা পৃথক কর্মসূচি এবং
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জনসভাকে ঘিরে একাধিক
প্রস্তুতি সভা, মিছিল, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
এদিকে
সম্প্রতি গুম পরিবারের সদস্যরা চৈতী কালাম গ্রুপের সঙ্গে যোগ দিয়ে দলীয়
কার্যক্রমে অংশগ্রহণসহ একাত্মতা ঘোষণা করেন। দীর্ঘ ২১ বছরের বিরোধের অবসান
ঘটছে। ফলে কুমিল্লা-৯ আসনে (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) বিএনপির রাজনীতিতে নতুন
মেরুকরণের সৃষ্টি হচ্ছে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০
ফেব্রুয়ারি লাকসাম সফরে আসছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ওই দিন তিনি লাকসাম স্টেডিয়ামে লাকসাম উপজেলা ও লাকসাম পৌরসভা এবং
মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন। রাষ্ট্র সংস্কারে
বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ জনসভার আয়োজন করা হয়েছে।
বিএনপি
কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম বলেন, আমি চাই না
লাকসাম ও মনোহরগঞ্জে বিএনপিতে কোনো গ্রুপিং থাকুক। আজিম ভাইয়ের সঙ্গে আমার
দেখা হয়েছে এবং কথা হয়েছে। আজিম ভাইসহ আমরা সকল নেতাকর্মী এখন ঐক্যবন্ধ।
মহাসচিবের জনসভা সফল করাসহ আগামী জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও
আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো ইনশাল্লাহ। তিনি দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং
আগামীকালের জনসভা সফল করার লক্ষ্যে যথাসময় লাকসাম ষ্টেডিয়ামে উপস্থিত
হওয়ার আহবান জানান।