শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
১০ ফাল্গুন ১৪৩১
চলন্ত বাসে ডাকাতির ভয়ংকর বর্ণনা দিলেন যাত্রীরা
প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:৪৪ এএম আপডেট: ২১.০২.২০২৫ ২:৫৩ এএম |


   চলন্ত বাসে  ডাকাতির ভয়ংকর  বর্ণনা দিলেন যাত্রীরাদফায় দফায় নির্যাতন চালিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নেয় ডাকাতদল। এ ঘটনায় বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার আটক হলেও বর্তমানে তারা জামিনে আছেন। সেদিনের ঘটনার ভয়ংকর বর্ণনা দিয়েছেন বাসের যাত্রীরা।
ওই বাসের যাত্রীদের একজন নাটোরের বড়াইগ্রামের ওমর আলী। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস বাসে করে বাড়ি ফিরছিলাম। গাড়ি ছাড়ার মুহূর্তে কয়েকজন যাত্রীর কানে কানে বাসের হেলপারের কথা বলতে দেখি। এরপর বাইপাইল এসে কয়েকজন যাত্রীকে বাসে তোলেন। বাসটি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় পৌঁছালে বাসে থাকা কয়েকজন ডাকাত অস্ত্র হাতে যাত্রীদের জিম্মি করে টাকা-পয়সা লুট করে নেন।’
ওমর আলী আরও বলেন, তার সঙ্গে ব্যবসায়িক পার্টনার সোহাগ হোসেন ছিলেন। তাদের কাছে থাকা সুপারি ও খেজুরের গুড় বিত্রি করার সব টাকা লুটে নেয় ডাকাতদল। এসময় বাসের অন্যান্য যাত্রীসহ নারী যাত্রীরাও ডাকাতদলের হাত থেকে রক্ষা পাননি।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দিনগত মধ্যরাতে ইউনিক রোড রয়েলসের আমরী ট্রাভেলস নামের একটি বাসে (ময়নসিংহ-ব ১১-০০৬৯) ডাকাতি হয়। গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকার মধ্যে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। যাত্রীরা জানান, ডাকাতি হওয়া বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় পৌঁছানোর পর দুই নারী যাত্রী তাদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার লুটসহ শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন। তবে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলছেন, নারী যাত্রীদের নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনার কথা কেউ তাকে বলেননি। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
এ ঘটনায় বাসটি আটক করে পুলিশ। ওই বাসের যাত্রী সোহাগ হোসেন, ওমর আলী, মজনু আকন্দ (৭৩) এবং তাদের ব্যবসায়িক অংশীদার আবু হানিফ বাস আটকানোর পর থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বড়াইগ্রাম থানায় অবস্থান করছিলেন। তারা মামলা করতে চাইছেন। কিন্তু পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থল মির্জাপুর থানা এলাকা হওয়ায় সেখানেই মামলা হবে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার সময় ওমর আলী বলেন, নাটোরের পুলিশ সুপার তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে নিয়ে গেছেন। মির্জাপুর থানার পুলিশ বড়াইগ্রাম থানার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
বাসযাত্রীদের ভাষ্যমতে, ৪০ জনের মতো যাত্রী নিয়ে সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে বাসটি ছাড়ে। রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে বাসে ডাকাতি শুরু হয়। তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতি শেষে ঘুরিয়ে একই জায়গায় বাসটি নিয়ে গিয়ে ভোর ৪টার দিকে ডাকাতরা নেমে যান। তখন যাত্রীরা দেখতে পান, তাদের অবস্থান মির্জাপুর থানা এলাকার একটি পেট্রোলপাম্পের পশ্চিম দিকে। সেখানে বাসচালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজার গন্তব্যে না যেতে নানা টালবাহানা করতে থাকেন। তবে যাত্রীদের চাপের মুখে তারা বাস ছাড়েন। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রীদের চাপের মুখে বাসটি বড়াইগ্রামে থানায় ঢোকানো হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সোহাগ হোসেন বলেন, গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ার সময় পেছনের সিটে তিনজন ডাকাত উঠেছিলেন। বাসের লোকজনের সঙ্গে তারা কথা বলেন। কিছু দূর এসে আরও পাঁচজনকে বাসে ওঠানো হয়। তারপর ডাকাতদের একজন বাসের স্টিয়ারিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। এসময় ডাকাতরা একজন যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করেন। এতে তার সাদা জামা রক্তে ভিজে যায়। তখন ওই যাত্রী তার টাকাসহ সবকিছু দিয়ে দেন। আরেকজনের হাতে ছুরি দিয়ে পোজ (আঘাত) দেন। তার হাতের মাংস কেটে ফাঁক হয়ে যায়। এসব দেখে ভয়ে যাত্রীরা যার কাছে যা ছিল সব দিয়ে দেন।
প্রত্যেক যাত্রীকে ডাকাতেরা একাধিকবার তল্লাশি করেন উল্লেখ করে সোহাগ আলী বলেন, তাকে একজন ডাকাত বাসের সিটের মাঝখানে ফেলে দিয়ে বুকের ওপর পা তুলে দিয়ে দাঁড়ান। এসময় তার ব্যবসায়িক অংশীদার ওমর আলীর গলায় ছুরি ধরে ২০ হাজার টাকা বের করে নেন। এসময় ওমর আলী এক লাখ টাকার বান্ডিলটি নিচে ফেলে দেন। পরেরবার তল্লাশি করতে এসে ডাকাতরা সেই টাকাটাও পেয়ে যান। ডাকাতরা কোনো যাত্রীর মোবাইল রেখে যাননি। শুধু তার ফোনটি নিচে পড়ে যাওয়ার কারণে তারা বুঝতে পারেননি।
আরেক যাত্রী বড়াইগ্রামের মৌখাড়া গ্রামের মজনু আকন্দের ৪৬ হাজার টাকাসহ সব কেড়ে নিয়েছেন ডাকাতরা। তিনি বলেন, বাসে নারীদের তারা (ডাকাতরা) লাঞ্ছিত করেছেন। মেয়েদের কাছ থেকে তারা প্রায় বিবস্ত্র করে স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেন।
মজনু আকন্দ আরও বলেন, তিন ঘণ্টা ধরে বাস শুধু ওই এলাকায় ঘুরিয়ে সব যাত্রীর টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকারসহ সবকিছু লুট করে নেওয়ার পরে ডাকাতদের নামিয়ে দেওয়া হয়।
যাত্রী ওমর আলীর অভিযোগ, দুই নারী যাত্রী তাদের কাছে একাধিকবার বলেছেন যে, ডাকাতরা তাদের শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছেন। তারা ঘটনাটি বড়াইগ্রাম থানার সেকেন্ড অফিসার শরিফুলের (এসআই শরিফুল ইসলাম) কাছেও বলেছেন।
ওই বাসেই ছিলেন চারঘাটের এক নারী যাত্রী। তিনি ঢাকায় মেয়ের বাসা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তার কাছ থেকে ডাকাতরা সাড়ে ৭ হাজার টাকা, সোনার বালা ও চেইন নিয়েছেন দাবি করে তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, সেদিন রাতে ডাকাতির পর বাসটি প্রথমেই মির্জাপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই থানার পুলিশ তাদের কোনো কথাই শুনতে চায়নি। তারা বলেছেন ওসি না এলে তারা কিছুই বলতে পারবেন না। ওসি সকাল ৯টার আগে আসবেন না। এ অবস্থায় নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা না পেয়ে তারা বড়াইগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ওই নারী আরও বলেন, ‘যেসব মেয়েরা গয়না খুলতে দেরি করেছে, তাদের সঙ্গে খুব জোর খাটিয়েছে, তাদের শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছে।’
এ বিষয়ে মির্জাপুর থানার ওসি মোশারফ হোসেন বলেন, মঙ্গলবার ভোরে কিছু লোকজন থানায় এসেছিলেন বলে তিনি জেনেছেন। মির্জাপুর থানা থেকে পুলিশ তাদের কথা শোনার জন্য বসতে বলে। কিন্তু তারা পুলিশের সঙ্গে উল্টো রাগারাগি করে চলে যান। তাদের কথা পুলিশ শোনেনি এই অভিযোগ সত্য না। ওই লোকজন এ ঘটনার শিকার কিনা তা জানাসহ প্রকৃত ঘটনা ও স্থান জানা যাবে বলে ওসি জানিয়েছেন।
বাসচালকসহ তিনজন জামিনে মুক্ত:
ডাকাতির ঘটনায় আটক বাসের সুপারভাইজার, চালক ও চালকের সহকারী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জামিন পেলেও বিষয়টি বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালত সূত্রে বিষয়টি জানা যায়।
নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলী আদালত সূত্রে জানা যায়, বড়াইগ্রাম থানার এসআই শরিফুল ইসলাম সই করা চালানমূলে ঢাকা-রাজশাহী চলাচলকারী ইউনিক রোড রয়েলস বাসের চালক বাবলু ইসলাম (৩৫), চালকের সহকারী সুমন ইসলাম (৩৫) ও সুপারভাইজার মাহবুল আলমকে (৩৮) বুধবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় তাদের আদালতের সামনে হাজির করলে আদালত শুনানি শেষে জামিনের আদেশ দেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোস্তফা কামাল বলেন, মামলাটি ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারার হওয়ায় এবং আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো ধর্তব্য অপরাধের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট না থাকায় আদালত তাদের জামিনের আদেশ দেন।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাসের যাত্রীরা মৌখিকভাবে পুলিশকে ডাকাতি হওয়ার কথা বলেছেন। অনেক যাত্রীই রাস্তায় নেমে গেছেন। দুই নারী যাত্রী এসেছিলেন। তাদের একজনের বাড়ি নাটোরের লালপুরে, আরেকজনের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়ার দিকে। তারা তাদের নির্যাতনের ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। তারা চলে গেছেন। তাদের ফোন নম্বরও তার কাছে নেই।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শারমিন নেলী বলেন, যেহেতু ঘটনাটি তাদের আওতার মধ্যে হয়নি এবং কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি, সে কারণে সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি মির্জাপুর থানাকে জানানো হয়েছে। তারা যৌথভাবে বাস ডাকাতির বিষয়টি তদন্ত করছেন।
















সর্বশেষ সংবাদ
দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে দাঁড়াতেই পারল না আফগানিস্তান
জয় দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু মোহামেডানের
মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হলো ৪৫ বাংলাদেশিকে
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন
কুমিল্লা সরকারি কলেজে যথাযথ মর্যাদায় মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
আলুর দরপতন নিয়ে শঙ্কিত কুমিল্লার কৃষক
আজ লাকসামে আসছেন মির্জা ফখরুল
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির কাউন্সিল তিন পদেই একক প্রার্থী
অনিশ্চয়তায় না রেখে দ্রুত নির্বাচন দিন
চলন্ত বাসে ডাকাতির ভয়ংকর বর্ণনা দিলেন যাত্রীরা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২