বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন মানেই কোচিং স্টাফ-কর্মকর্তাদের বহর। আজ অধিনায়ক, হেড কোচ, নারী উইংয়ের প্রধান ও পৃষ্ঠপোষক ঢাকা ব্যাংকের প্রতিনিধি ছাড়া কেউ ছিলেন না। বাংলাদেশ নারী দলের এই সফর অনেক দিক থেকেই ভিন্ন।
বৃটিশ কোচ বাটলারকে বিদ্রোহ করে সাবিনা,কৃষ্ণারা অনুশীলনে যাননি। ফেডারেশনও কোচের পক্ষ অবস্থান নেয়ায় সাবিনাদের ছাড়াই দল আরব আমিরাত রওনা হচ্ছে। এই দলের অধিনায়ক করা হয়েছে ডিফেন্ডার আফিদা খন্দকারকে। বাংলাদেশ দলের নতুন অধিনায়ক বলেন, ‘আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অধিনায়কত্ব করেছি। ওই দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড় এখানে রয়েছে। আমি আমার মতো করে চেষ্টা করেছি দলটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। পেছন থেকে তাদের সমর্থন দিয়ে যাবো।’
সাবিনা-কৃষ্ণা-মারিয়ার মতো সিনিয়ররা দলে নেই। এই ক্ষতি দলের জন্য অপূরণীয় হলেও নতুন অধিনায়কের কন্ঠে পেশাদার মন্তব্য, ‘আমি অভাব অনুভব করছি না।’ উল্লেখ্য, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ২ মার্চ আরব আমিরাতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দু'টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দলের বৃটিশ কোচ পিটার বাটলার নতুন দল নিয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করলেও বাস্তবতার নিরিখে পথ চলতে চাইলেন, ‘সবাই জিততে চায়, আমিও চাই, খেলোয়াড়রাও চায়। প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার সামঞ্জস্যতাও আমাদের বজায় রাখতে হবে। এই দলের অনেক খেলোয়াড় নতুন। তাদের অভিজ্ঞতা কম। এই ম্যাচগুলোর মাধ্যমে তারা নিজেদের তৈরি করবে।’
আরব আমিরাতগামী দলের ২৩ জনের মধ্যে ৮ জন রয়েছেন সাফ চ্যাম্পিয়ন স্কোয়াডের। বাকি ১৫ জন মূলত অ-২০ পর্যায়ের। দল নিয়ে অধিনায়কের বিশ্লেষণ, ‘ডিফেন্স, মিডফিল্ডও ভালো। আমাদের পুরা দলটাই ভালো। ইনশাআল্লাহ আমরা ভালো রেজাল্ট করে দেশে ফিরবো।’
আরব আমিরাত সফরের সংবাদ সম্মেলন হলেও ঘুরে ফিরে এসেছে সাবিনাদের প্রসঙ্গও। বৃটিশ কোচ বাটলারকে এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি ৫৮ বছর বয়স্ক একজন পেশাদার মানুষ ও কোচ। তারা অনুশীলনে আসেনি এটা তাদের বিষয়। আমি যাদের পেয়েছি তাদের নিয়েই কাজ করছি। তারা আসবে কিনা এটা সম্পূর্ণ তাদের সিদ্ধান্ত। তাদের মধ্যে কয়েকজন রয়েছেন যাদের ফুটবলীয় কোয়ালিটির আমার সম্মান ও শ্রদ্ধা রয়েছে। তারা চাইলে অনুশীলনে আসতে পারে।’
বাফুফে নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ ১৬ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দিয়েছিলেন নারী ফুটবলাররা অনুশীলনে ফিরবেন। ফেডারেশন কর্মকর্তা বিদ্রোহ অবসানের ঘোষণা দিলেও ফুটবলাররা এখনো মুখ ফুটে কিছু বলেননি। উল্টো কোচ ক্রমাগত কয়েকজন খেলোয়াড়কে অনুশীলন না নেয়ার সংখ্যা বাড়িয়েই যাচ্ছে এতে তারা ফেরার আগ্রহ হারিয়েছেন। এ নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন হলে কিরণ বলেন, ‘আমার সঙ্গে যখন মেয়েদের কথা হয়েছে তখন তারা বলেছে আরব আমিরাতে তারা যাবে না এবং আমিরাত থেকে দল ফেরার পর তারা ক্যাম্পে এসে অনুশীলনে আসতে চেয়েছে। আমিরাতে তারা খেলবে না এবং তারা ফিটও নয়। ফলে কোচ ফিট খেলোয়াড়দেরই নিয়েছে এই দলের জন্য।’
নারী ফুটবল উইংয়ের প্রধান বাটলারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সব সময়। সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসার পরপরই বেশ কয়েক বার গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘বাটলার ভালো কোচ, সেই থাকবে।’ নারীদের অনুশীলনে ফেরার ঘোষণার দিন অবশ্য মিডিয়ায় জানান,‘ বাটলারকে না রাখার সুপারিশ করেছিলাম।’ বাটলার যদি ভালো কোচই হন তাহলে নারী উইংয়ের প্রধান কেন সুপারিশ করলেন না সেই খটকা তৈরি হয়েছে ফুটবলারঙ্গনে।
আবার তিনি না রাখার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বাটলারকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ হওয়ায় কর্মকর্তাদের মধ্যে দূরত্বও খানিকটা স্পষ্টত। এই প্রসঙ্গে কিরণের ব্যাখ্যা, ‘বাটলার অবশ্যই কোচ হিসেবে ভালো। বড় প্রোফাইল এ নিয়ে সন্দেহ নেই। না রাখার সুপারিশ আমার ব্যক্তিগত। একজনের মতামতে আর ফেডারেশন চলে না। নির্বাহী কমিটি রয়েছে, আমার উপর সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি রয়েছে। তারা জরুরি কমিটির সভায় ভালো মনে করায় তাকে নিয়োগ দিয়েছে।’