স্বাস্থ্যখাতে নীতিগত অব্যবস্থাপনা দূরীকরণ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার মানোন্নয়নসহ ৫ দফা দাবিতে কুমিল্লার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৫ দফা দাবি আদায়ে কুমিল্লার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন তারা। সোমবার সকাল ১১টায় কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. রেজা সরোয়ারের কাছে তারা এই স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপি গ্রহণকালে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন চিকিৎসকদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং দ্রুতই এটি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর আশ্বাস দেন।
স্মারকলিপিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেন, যা স্বাস্থ্যখাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, চিকিৎসকদের অধিকার সংরক্ষণ এবং মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবি:
১.এমবিবিএস/বিডিএস ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবেন না। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) বিরুদ্ধে করা রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। বিএমডিসি নিবন্ধন শুধু এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রিধারীদের দিতে হবে। ২০১০ সাল থেকে হাসিনা সরকার ম্যাটসদের (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন দেওয়া শুরু করেছে। এই ম্যাটসদের বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন দেওয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
২. উন্নত বিশ্বের চিকিৎসাব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ওটিসি ড্রাগ লিস্ট আপডেট করতে হবে। এমবিবিএস বা বিডিএস ছাড়া অন্যরা ওটিসি লিস্টের বাইরের ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারবেন না। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিগুলো ওটিসি লিস্টের বাইরের কোনো ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না।
৩. স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকের সংকট নিরসনে দ্রুত ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে সব শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। আলাদা স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করে আগের মতো সপ্তম গ্রেডে নিয়োগ দিতে হবে। প্রতিবছর ৪-৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। চিকিৎসকদের বিসিএসে বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে হবে।
৪. সব মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট স্কুল (ম্যাটস) ও মানহীন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে পাস করা ম্যাটস শিক্ষার্থীদের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) পদ বাদ দিয়ে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।
স্মারকলিপি প্রদানকালে ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. সাইফুল ইসলাম রাহী, ডা. শায়লা কায়সার এবং মেডিকেল শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলামসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, “বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনার শিকার। চিকিৎসাসেবায় গুণগতমান বজায় রাখার জন্য আমাদের এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন জরুরি। সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হবে।”
তারা আরও বলেন, “আমরা চিকিৎসকদের পেশাগত মর্যাদা রক্ষা এবং জনসাধারণের নিরাপদ চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। এটি শুধু চিকিৎসকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন নয়, বরং দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ।”
ইন্টার্ন চিকিৎসক ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. সাইফুল ইসলাম রাহী জানান, তাদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। তিনি অভিযোগ করেন বাংলাদেশের চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ-স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসকদের কর্মপরিবেশের অবনতি এবং অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. রেজা সরোয়ার জানান, ৫ দফা দাবি নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আমাদের কার্যালয়ে এসেছিলন। তারা একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। তাদের দাবি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিবো।