জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী ১৩ মার্চ চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে গুতেরেস বাংলাদেশ সফর করবেন। বুধবার নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এই তথ্য জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের কার্যালয়ও এই সফরের তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের কার্যালয় জানিয়েছে, গুতেরেস আগামী ১৩-১৬ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন।
এর আগে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে গুতেরেস এখন বাংলাদেশ সফরে আসছেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান। এ সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণপত্রটি গুতেরেসের কাছে হস্তান্তর করেন।
এদিকে মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে জাতিসংঘের রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কাতারের রাজধানী দোহায় এই সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি:
বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এ বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ এবং এ অঞ্চলের ওপর পড়া প্রভাব, রাখাইনে ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট নিয়ে তিনি বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের উদ্বেগের সঙ্গে একমত।
বাসস জানায়, জাতিসংঘ মহাসচিবের ওই চিঠি মঙ্গলবার হাতে পান প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে গুতেরেস বলেন, “রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের জন্যে উপযোগী পরিবেশ তৈরি করাসহ মিয়ানমারের সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে আঞ্চলিক অংশীদার, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট (আসিয়ান) এবং সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে আমি আমার বিশেষ দূতের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাব।”
রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক ও জীবিকার সহায়তা আরও বাড়াতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে দায়িত্বরত জাতিসংঘের কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়ার কথাও মহাসচিব বলেন।
জাতিসংঘ রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিকে অগ্রাধিকারে রাখবে এবং জরুরি ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।
গুতেরেস আশা প্রকাশ করেন, রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন বিশ্বব্যাপী নতুন করে মনোযোগ আকর্ষণ এবং সমস্যার সমাধান বের করতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে চলমান ‘পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে’ সমর্থন দেওয়ার কথাও চিঠিতে পুনর্ব্যক্ত করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
তিনি গত ৪ ফেব্রুয়ারি পাঠানো চিঠির জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান। জাতিসংঘ মহাসচিবকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে লেখা ওই চিঠি তাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকার বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান।