মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাত্র তিন সপ্তাহ আগে ১৯৭১ সালের এই দিন কার্যত পূর্ব পাকিস্তানে কর্তৃত্ব হারায় উর্দুভাষী নেতৃত্ব। পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) তখন প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল। সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে নেওয়া হলো ব্যারাকে। বীর বাঙালি স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সর্বস্তরের মানুষ বর্জন করে চলেছিল পাকিস্তানি প্রশাসনের সব আদেশ-নির্দেশ।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান তার 'উতল রোমন্থন: পূর্ণতার সেই বছরগুলো' গ্রন্থে ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ সম্পর্কে লিখেছেন, 'জেনারেল ইয়াকুব (সাহেবজাদা লে. জেনারেল ইয়াকুব আলী খান) যখন বুঝতে পারে যে সেনা দিয়ে কোনো সমাধান হবে না, তখন ৪ মার্চ ১৯৭১ সেনাবাহিনীকে ক্যান্টনমেন্টে ফিরিয়ে নেওয়া হলো। ওই মুহূর্তে কার্যত সে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের হাতে ছেড়ে দিয়েছিল এবং এভাবেই ২৪ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের ওপর পর্দা নেমে এসেছিল।
ঢাকায় এসে স্বয়ং পরিস্থিতি সামাল দিয়ে রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার জন্য ইয়াহিয়াকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে চিফ মার্শাল ল' অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার পদ থেকে ইস্তফা দেয় ইয়াকুব।'
পূর্ব পাকিস্তানে এই অগ্নিগর্ভ অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন উর্দুভাষী রাজনীতিকরাও। ৪ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজনৈতিক দল তেহরিক-এ-ইশতিকলাল-এর প্রতিষ্ঠাতা এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।
বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের 'বাংলাদেশের তারিখ' গ্রন্থে আসগর খানের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। ওই দিন তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এ-মুহূর্তে সংখ্যাগুরু দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশের সংহতি রক্ষা করা অপরিহার্য।'