সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫
১৭ চৈত্র ১৪৩১
কুমিল্লা টাউন হল ও গণপাঠাগারের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেমেছিল মানুষের ঢল
প্রকাশ: শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০২৫, ১২:৪৪ এএম আপডেট: ০৭.০৩.২০২৫ ১:৪৫ এএম |

কুমিল্লা টাউন হল ও গণপাঠাগারের জমকালো  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেমেছিল মানুষের ঢল

১৮৮৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর কুমিল্লায় এক ঐতিহাসিক আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরির উদ্বোধন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে ত্রিপুরার রাজপরিবারের যুবরাজ বাহাদুর ও তাঁর ভাই বড় ঠাকুরের আগমনে শহরে ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা দেয়। তাঁদের সম্মানে শহরের রাস্তাগুলো আলোকসজ্জায় সাজানো হয় এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানানো হয়। যুবরাজ বাহাদুর প্রথমবারের মতো পিতার রাজ্যের বাইরে কুমিল্লায় আসেন।
এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় দ্য ইংলিশম্যান্স ওভারল্যান্ড মেইল পত্রিকায়। ১৮৮৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ঐ পত্রিকায় ৪ হাজার ৭ শ ৩৩ শব্দের একটি বিশাল সংবাদ প্রকাশ করে। লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরির আর্কাইভে পাওয়া পত্রিকার সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
কুমিল্লা টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরি একটি ভাড়া ভবনে শুরু হয়, যা আগে একটি দাতব্য হাসপাতাল ছিল। ভবনটিকে নতুনভাবে ব্যবহারের উপযোগী করতে ব্যাপক সংস্কার করা হয় এবং অত্যন্ত নান্দনিকভাবে সাজানো হয়। এতে রয়েছে একটি বিশাল কেন্দ্রীয় হল, একটি থিয়েটার এবং একটি গ্রন্থাগার, যেখানে প্রচুর মূল্যবান বই ও পত্রিকা সংরক্ষিত রয়েছে।
শুরুতে কুমিল্লা টাউন হল ও লাইব্রেরির যাত্রা শুরু হয় নাট্যশালা ও বিতর্ক সংঘের মতো সূচনার মধ্য দিয়ে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় এ প্রতিষ্ঠানটি। ১ সেপ্টেম্বর বিকালে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদেশের লেফটেন্যান্ট-গভর্নরের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু শারীরিক কারণে তিনি আসতে পারেন নি। কুমিল্লা তথা ত্রিপুরা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর এফ. এইচ. স্ক্রাইন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।  লাইব্রেরি ও টাউন হলের জন্য কাশিমবাজারের মহারানি ও ত্রিপুরার মহারাজার মতো দাতাগণ উল্লেখযোগ্য অনুদান প্রদান করেন। বাবু আনন্দচন্দ্র গুহ, তারকচন্দ্র গুপ্ত, প্রিয়নাথ বসু এবং মন্মোহন রায়-যাঁরা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বক্তৃতা, কবিতা আবৃত্তি এবং জনপ্রিয় নাটকের মঞ্চায়ন হয়, যা দিনটির তাৎপর্য আরও বৃদ্ধি করে।
কুমিল্লা টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরির এই উদ্বোধন কুমিল্লার বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করে, যা ভবিষ্যতে জ্ঞানচর্চা ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সংবাদটির পরো অনুবাদ নিচে দেওয়া হলো-
হিল টিপেরাহ
[একজন সংবাদদাতার কাছ থেকে।]
কুমিল্লা, ২ সেপ্টেম্বর।
১লা সেপ্টেম্বর কখনোই নরফোকের জমিদার বা লন্ডনের খেলোয়াড়দের জন্য বিশেষ আকর্ষণের দিন ছিল না, তবে কুমিল্লার সীমান্ত শহরের বাসিন্দাদের জন্য এটি ভিন্ন এক গুরুত্ব বহন করছিল। এই দিনের জন্য আগ্রহ ও উত্তেজনার অভাব ছিল না, কারণ এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন হতে চলেছিল, যা নিয়ে সবার প্রত্যাশা ছিল অনেক।
৩০ আগস্ট থেকেই এই উৎসাহের সূচনা হয়, যখন স্বাধীন ত্রিপুরার সিংহাসনের দুই উত্তরাধিকারী-যুবরাজ বাহাদুর ও তাঁর ভাই বড় ঠাকুর-কুমিল্লায় আসেন। যুবরাজ বাহাদুর এর আগে কখনোই পিতার রাজ্য ছেড়ে যান নি। তাঁদের সম্মানে শহরের ছায়াঘেরা রাস্তাগুলো আলোকসজ্জায় সাজানো হয়। নবগঠিত পৌরসভা তাঁদের আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানায়, আর হাজারো দর্শকের দৃষ্টি তাঁদের চলাফেরার দিকে নিবদ্ধ হয়। কুমিল্লার জনগণের কাছে তাঁদের পূর্বপুরুষরা কেবল ইতিহাসের ধূসর স্মৃতির মতো ছিল, কিন্তু এবার তাঁরা বাস্তবে তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সামনে দেখতে পেলেন।
তবে পুরো আয়োজনে সবচেয়ে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল নতুন প্রতিষ্ঠান-কুমিল্লা টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরি, যা আগে একটি দাতব্য হাসপাতাল ছিল। ভবনটিকে নতুন ভাবে ব্যবহারের উপযোগী করতে ব্যাপক সংস্কার করা হয় এবং অত্যন্ত নান্দনিকভাবে সাজানো হয়। এতে রয়েছে একটি বিশাল কেন্দ্রীয় হল, একটি থিয়েটার এবং একটি গ্রন্থাগার, যেখানে প্রচুর মূল্যবান বই ও পত্রিকা সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া, একটি বৃহৎ পাবলিক উদ্যানও তৈরি করা হয়েছে, যেখানে সৌন্দর্য ও কার্যকারিতার সমন্বয় করা হয়েছে।
বিকেল পাঁচটার দিকে কুমিল্লার অভিজাত শ্রেণি সেখানে একত্রিত হতে শুরু করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো হল ও আশপাশের এলাকা মানুষের ভিড়ে পূর্ণ হয়ে যায়।
ত্রিপুরার রাজপুত্রদের আগমন
বিকেল পাঁচটার কিছু পর ত্রিপুরার রাজপুত্রেরা কুমিল্লায় পৌঁছালে বেঙ্গল পুলিশের একটি গার্ড অব অনার তাঁদের অভ্যর্থনা জানায়। এরপর জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর, জনাব এফ. এইচ. স্ক্রাইন সভাপতির আসন গ্রহণ করে ভাষণ দেন।
তিনি বলেন-
“আমি আশা করেছিলাম যে আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতির আসন এমন একজন ব্যক্তিত্ব অলংকৃত করবেন, যাঁর উপস্থিতি এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে আরও মহিমান্বিত করত। আমি বলতে চাই প্রদেশের লেফটেন্যান্ট-গভর্নরের কথা, যিনি ত্রিপুরা জেলার প্রতি ঐতিহ্যগতভাবে বিশেষ আগ্রহী। তবে দুঃখজনকভাবে, তিনি ব্যক্তিগত কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবু তাঁর আন্তরিক সমর্থন আমাদের সঙ্গে রয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত সচিবের চিঠিতে লেখা- ‘লেফটেন্যান্ট-গভর্নর কুমিল্লার নতুন পাবলিক লাইব্রেরির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারলে আনন্দিত হতেন, কিন্তু বর্তমানে তিনি কলকাতা থেকে সমুদ্রযাত্রায় রয়েছেন। তবে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত যে কুমিল্লায় এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে এবং তিনি আশা করেন যে আপনি নিজেই এর সফল উদ্বোধনে সভাপতিত্ব করবেন।”
এরপর জনাব স্ক্রাইন বলেন, “ভদ্রমহোদয়গণ, আমি লেফটেন্যান্ট-গভর্নরের পরামর্শ অনুসরণ করেছি, সে কারণেই আমি আজ আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। এই সভার গুরুত্ব উপলব্ধি করেই আমি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। এখানে ইউরোপীয় ও স্থানীয়- উভয় শ্রেণির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত আছেন এবং ত্রিপুরার রাজপরিবারের উত্তরাধিকারীদের আগমনে এই সভা আরও সম্মানিত হয়েছে।”
সমাজের বিভক্তি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব
“আপনারা অনেকেই জানেন, এই উদ্যোগ কীভাবে শুরু হয়েছিল এবং যার সফল বাস্তবায়ন আমরা আজ উদযাপন করছি। তবে আমাদের সম্মানিত অতিথিদের সুবিধার্থে, আমি এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরছি। যখন আমি প্রথম কুমিল্লায় আসি, তখন দেখলাম সমাজ বিভক্ত এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিভিন্ন দলে বিভাজিত। এ ধরনের পরিস্থিতি এ দেশে বিরল নয়, তবে কুমিল্লার ক্ষেত্রে এটি আরও প্রকট ছিল।”
“এর কারণও ছিল স্পষ্ট। কুমিল্লা শহরে তুলনামূলকভাবে একটি বড় অবসরপ্রাপ্ত ও সম্পদশালী শ্রেণি বসবাস করে; অন্যদিকে, যারা জীবিকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন, তাঁদের মানসিক ও শারীরিক শক্তি দৈনন্দিন কাজে ব্যয় হয়ে যায়। ফলে শিক্ষিত শ্রেণির উদ্বৃত্ত শক্তির কোনো গঠনমূলক ব্যবহার না হওয়ায় তা নানা অপ্রয়োজনীয় বিরোধে লিপ্ত হয়।”
“কুমিল্লা এই সমস্যার একমাত্র উদাহরণ নয়; এমন অনেক দেশ রয়েছে, যাদের উন্নত ও সভ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবু ইতিহাসে তারা দীর্ঘ সময় ধরে সংঘাত ও যুদ্ধের মধ্যে কাটিয়েছে। এর অন্যতম কারণ ছিল অতীত জীবনের চরম একঘেয়েমি এবং কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ। যদি সমাজ কেবল সামরিক পেশার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা অবশ্যম্ভাবীভাবে অস্থিরতা ও সংঘাত সৃষ্টি করে।”
মানব প্রকৃতি ও উন্নতির পথ
“তবে, মানবজাতির মধ্যে যুদ্ধপ্রবণতার মূল আরও গভীরে প্রোথিত, যা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির অংশ। যেমন খেলা শরীরের উদ্বৃত্ত শক্তির বহিঃপ্রকাশ, তেমনি যুদ্ধ ও প্রতিযোগিতার প্রবণতাও মানব উন্নতির একটি মাধ্যম। এই প্রবৃত্তিই সভ্যতাকে ক্রমাগত উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে, এ প্রবৃত্তির লাগামছাড়া চর্চা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এবং অনেক সময় সভ্যতার অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে।”
“সুতরাং, মানবপ্রেমিকদের দায়িত্ব হলো এই প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে এটি গঠনমূলক পথে পরিচালিত হয়। এটি এমনভাবে দিকনির্দেশনা করা জরুরি, যাতে সংঘর্ষ সৃষ্টির পরিবর্তে সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ বয়ে আনে। এই লক্ষ্যেই আমি কুমিল্লায় একটি শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করি।”
একটি পাবলিক লাইব্রেরি ও টাউন হল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এটি বিভিন্ন সংস্থার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠতে পারে, যা তাদের সদস্যদের আত্মোন্নয়নের পথ সুগম করবে। এই ধারণা বাস্তবে রূপ দিতে কোনো বিলম্ব করা হয়নি। গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত একটি সর্বজনীন সভায় এ প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং কুমিল্লার শিক্ষিত শ্রেণির বিপুল সমর্থন লাভ করে।
প্রকল্পের জন্য  ১,৫০০ রুপি তৎক্ষণাৎ অনুদান হিসেবে সংগ্রহ করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে এটি  ৫,০০০ রুপিতে পৌঁছে যায়। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অনুদান দেন কাশিমবাজারের মহারানি বুরানাময়ী, যিনি বাংলাদেশের অন্যতম শ্রদ্ধেয় ও মহীয়সী নারী হিসেবে বিবেচিত।
স্বাধীন ত্রিপুরার মহারাজাও তাঁর উদারতা প্রদর্শন করে এই উদ্যোগে অবদান রাখেন। আনুমানিক ১০,০০০ রুপি ব্যয়ে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যবর্তী সময়ে আমাদের সম্মেলনস্থল হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই চমৎকার ভবনটি অস্থায়ীভাবে প্রদান করা হয়েছে।
পরবর্তীতে একটি শক্তিশালী নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়, যারা বিভিন্ন পূর্বপ্রস্তুতির দায়িত্ব গ্রহণ করে। লাইব্রেরির কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়, যেখানে ৫০০ আসনবিশিষ্ট একটি হল তৈরি করা হয়। অপেশাদার নাট্যপ্রতিভার বিকাশের জন্য একটি থিয়েটার নির্মিত হয়, যার কিছু অংশ আজ রাতেই দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। ১,৫০০ রুপি মূল্যের বই কলকাতা থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং আসবাবপত্র ঢাকা ও অন্যান্য স্থান থেকে সরবরাহ করা হয়। যদিও প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ বিলম্ব, মৌসুমি প্রতিবন্ধকতা ও কুমিল্লার দূরবর্তী অবস্থানের কারণে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে, তবু এটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। আজ প্রতিষ্ঠানটি ১১৩ জন গ্রাহক, মাসিক ১৩০ রুপি আয় এবং সমস্ত দেনা পরিশোধের পর ২,০০০ রুপি রিজার্ভ ফান্ড নিয়ে কার্যক্রম শুরু করছে।
এই প্রতিষ্ঠানের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য  ৫,০০০ রুপি মূল্যের অনুদান একান্ত প্রয়োজন, যা বিভাগের কমিশনারের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহ, যিনি এই অঞ্চলে বিশাল জমির মালিক, এটি জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার জন্য প্রদান করেছেন।
এই অনুদানের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আলোচনা চলছে এবং সফল হলে এটি সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হবে। এর ফলে লাইব্রেরির সুবিধা কেবল উচ্চ শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি সমাজের সকল স্তরের জন্য উন্মুক্ত হবে।
এছাড়া, আমি আরও কয়েকটি সংস্থার কথা উল্লেখ করতে চাই যারা আমাদের পাবলিক লাইব্রেরিতে তাদের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করবে।
“দুটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে-একটি নাট্যশালা ও একটি বিতর্ক সংঘ। আশা করি, আপনারা একমত হবেন যে উভয় ক্ষেত্র থেকেই বিশাল উপকারিতা অর্জিত হবে।”
নাটক সর্বোচ্চ স্তরের গণশিক্ষার মাধ্যম। এর মাধ্যমে দর্শকরা কিছু সময়ের জন্য দৈনন্দিন জীবনের ক্লান্তিকর দায়িত্ব ভুলে থাকতে পারেন এবং অতীতের মহান নায়কদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করতে পারেন।
তেমনই, বিতর্কের গুরুত্বও কম নয়। এটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হয়, যা বুদ্ধির নমনীয়তা বৃদ্ধি করে এবং যুক্তির যথাযথ প্রকাশ নিশ্চিত করে-যা আইন ও রাজনীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আক্ষরিক অর্থে, যাঁরা এই গুণাবলি অর্জন করেন, তাঁদের জন্য উন্নতির কোনো সীমানা নেই। এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, যেমন ওয়াটারলুর যুদ্ধ ইংরেজ স্কুলগুলোর খেলার মাঠে জয়যুক্ত হয়েছিল, তেমনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক মঞ্চ থেকেই গড়ে ওঠে।
যদিও আমি এই উদ্যোগের সূচনা করেছিলাম, প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে অন্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে। অনেকেই তাঁদের সাহসী জনসেবার জন্য স্বীকৃতি লাভ করেছেন, তাই নির্দিষ্ট কাউকে আলাদা করে উল্লেখ করা কঠিন। তবে ন্যায়বিচারের স্বার্থে কয়েকজনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই- বাবু আনন্দচন্দ্র গুহ, তারকচন্দ্র গুপ্ত, প্রিয়নাথ বসু এবং মন্মোহন রায়-যাঁরা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
এখন এটি আপনাদের দায়িত্ব, ভদ্রলোকেরা, আজ উদ্বোধন করা এই প্রতিষ্ঠানের সুযোগগুলো সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগানো। আপনার শহর ইতিমধ্যেই এমন সুবিধা অর্জন করেছে, যা এটিকে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার মহান বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল করে তুলতে পারে।
বর্তমান সময়ের লক্ষণ স্পষ্ট যে পূর্ববঙ্গ অবশেষে স্থবিরতা ঝেড়ে ফেলে নবজাগরণের পথে এগোচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় জেলার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় প্রবেশ করেছে।
পশ্চিমবঙ্গ তুলনামূলকভাবে আগে ইউরোপীয় সংস্কৃতির সংস্পর্শে এলেও, পূর্ববঙ্গে রয়েছে উর্বর ভূমি, উন্নত জীবনযাত্রা এবং সভ্যতার নেতিবাচক দিক থেকে কিছুটা সুরক্ষিত।কুমিল্লা টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরির এই উদ্বোধন যেন একটি নতুন যুগের সূচনা করে- “যে যুগ বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতির মাধ্যমে আপনার জেলাকে মহান আন্দোলনের অগ্রভাগে স্থাপন করবে এবং উন্নত নাগরিক ও সামাজিক আদর্শের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে!”
চেয়ারম্যানের বক্তৃতার পর, বাবু মোহিনী মোহন বর্ধন (সরকারি আইনজীবী) ও কৈলাস চন্দ্র দত্ত (পৌরসভার সহ-সভাপতি) মাতৃভাষায় তাঁদের বক্তব্য প্রদান করেন। এরপর মৌলভী আশরাফউদ্দিন উত্তর ভারতের মিষ্টভাষায় বক্তৃতা করেন।
কবিতার জগতও পিছিয়ে ছিল না, অনুষ্ঠানের সূচনায় তরুণ কবি বাবু কাশিকি চরণ চট্টোপাধ্যায় একটি উদ্বোধনী কবিতা আবৃত্তি করেন, যা দর্শকদের মধ্যে প্রশংসিত হয়।
পরবর্তীতে একদল প্রতিভাবান অপেশাদার নাট্যশিল্পী জনপ্রিয় নাটক “দুর্গেশ নন্দিনী” ও “বাবাহ বিভ্রাট” মঞ্চস্থ করেন। রাত ৯টায় টাউন হল থিয়েটারে এই নাটকগুলোর সফল প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিশেষ দিনের সমাপ্তি ঘটে।
মতামত জানাতে-+৮৮০১৭১১১৫২৪৪৩













সর্বশেষ সংবাদ
মুসল্লিদের ঢল নেমেছিল কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহে। স্বস্তির ঈদ জামাত
কুমিল্লায় আইনজীবী আবুল কালাম হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
কুমিল্লায় ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়
এলো খুশির ঈদ
কুমিল্লার ৩৮পরিবারে ‘বিষাদের ঈদ’
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা জিলা স্কুলে গ্র্যান্ড ইফতার মাহফিল
কুমিল্লায় আইনজীবী আবুল কালাম হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
কুমিল্লায় ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়
কুমিল্লার ৩৮পরিবারে ‘বিষাদের ঈদ’
হরিশ্চর ইউনিয়ন হাই স্কুল এন্ড কলেজের চতুর্থ পুনর্মিলনী
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২