মূল্যস্ফীতি নিয়ে সব সরকারেরই উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা থাকে। টার্গেট থাকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার। মূল্যস্ফীতির চাপ সমাজের দরিদ্র শ্রেণির ওপর সবচেয়ে বেশি পড়ে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের কয়েক কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিয়েছে।
নিম্ন আয়ের মানুষ প্রকৃত আয় পড়ে যাওয়ায় কম পুষ্টিকর খাবার কিনছে কিংবা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বাদ দিচ্ছে। মূল্যস্ফীতি মানবপুঁজি সৃষ্টিতে বাধা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের দেশে গরিব খানাগুলোর মোট আয়ের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ চলে যায় ভোগ্যপণ্যে। চাল কিনতে যায় ৪০ শতাংশ।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি লাগামহীন হলে সমাজের সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। সে কারণেই মূল্যস্ফীতি রোধে সরকারের চেষ্টার কমতি নেই।
মূল্যস্ফীতি যে বাংলাদেশের জন্য নানা দিক থেকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং, তা সহজেই অনুমান করা যায়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বা ডব্লিউইএফ ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জন্য যে পাঁচটি প্রধান ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে, তার শীর্ষে রয়েছে মূল্যস্ফীতি।
সুখের খবর হলো, খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে এক অঙ্কে এসেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শহরের মানুষের তুলনায় গ্রামের মানুষের মূল্যস্ফীতি বেশি কমেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় পর্যায়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.৩২ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ৯.৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ০.৩৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমেছে। তবে ২০২৩ ও ২০২২ সালের তুলনায় এখনো মূল্যস্ফীতি বেশি রয়েছে।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৭৮ শতাংশ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.১৭ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুসারে, শুধু গত বছরের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কমেনি, বরং একক মাস হিসেবেও মূল্যস্ফীতি কমেছে। এর আগের মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯৪ শতাংশ। সেই হিসাবে জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি কমেছে ০.৬২ শতাংশ। সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য খাতেও কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.২৪ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে ছিল ৯.৪৪ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডিম, আলু ও পেঁয়াজের পাশাপাশি শাক-সবজির দাম কমায় মূল্যস্ফীতি কমেছে। তবে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমলে মূল্যস্ফীতি আরো কমবে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি প্রধানত ব্যয় বৃদ্ধিতাড়িত। বিপর্যস্ত সাপ্লাই চেইন এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন একটি সরবরাহ ধাক্কা নিয়ে আসে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেয়। তাঁরা বলছেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় নজর দেওয়ার পাশাপাশি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্যক্রমের আওতা বাড়াতে হবে। বাজার তদারকি এবং ব্যবসার পরিবেশ যতটুকু দরকার ছিল, তা বাস্তবে দেখা না গেলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে সংকটে ফেলে। তাই মূল্যস্ফীতি রোধ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের জন্য নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। সর্বোপরি ন্যায্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।