বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫
২৮ ফাল্গুন ১৪৩১
কুমিল্লার দুটি বড় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা
প্রকাশ: সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫, ১২:৫৫ এএম আপডেট: ১০.০৩.২০২৫ ১:৪৮ এএম |

কুমিল্লার দুটি বড় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা
কুমিল্লার ইতিহাসে দুটি বড় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শহরটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত। প্রথম দাঙ্গাটি ঘটে ১৯০৭ সালের ৪ মার্চ, ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ খানের কুমিল্লা সফরের সময়। দ্বিতীয় দাঙ্গাটি ঘটে ১৯২৭ সালের ২০ আগস্ট, জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে। এই দুটি দাঙ্গা কুমিল্লার ইতিহাসে সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং উত্তেজনার প্রতিফলন হিসেবে দেখা দেয়।

১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলা প্রদেশকে বিভক্ত করে দুটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়: ১. পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ এবং ২. বিহার, উড়িষ্যা ও সম্বলপুর নিয়ে গঠিত বেঙ্গল প্রদেশ, যা বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিত। এটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের একটি রাজনৈতিক কৌশল, যা হিন্দু-মুসলিম বিভাজনকে আরও তীব্র করে তোলে এবং সাম্প্রদায়িক বিভক্তিকে স্থায়ী রূপ দেয়। যদিও ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়, ততদিনে এর প্রভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তী সময়ে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনকে ত্বরান্বিত করে।
কুমিল্লার দুটি বড় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা
কুমিল্লার ইতিহাসে প্রথম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল ১৯০৭ সালের ৪ মার্চ। এই দাঙ্গার খবর কলকাতা, করাচি, এমনকি বিশ্বের অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছিল। এ বিষয়ে অনেক সংবাদপত্রের কপি লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়। ১৯০৭ সালের এই দাঙ্গার রেশ  ১৯২৮ সাল পর্যন্ত ছিল। ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ খানের কুমিল্লা সফরকালে এই দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। কয়েক হাজার মুসলিম মিছিলের পিছুপিছু  নবাবকে কুমিল্লায় আমন্ত্রণকারী নাবালক মিয়ার বাড়িতে নবাবকে যাওয়ার সময় মিছিলটি যখন যোগীরানপালের কাপড়ের দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন নবাবের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারা হয়।  ফলে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে সৈয়দ আলী নামে এক ব্যক্তি গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশের কনস্টেবল নিবারণ চন্দ্র রায়কে বন্দুকসহ ধরে ফেলেন মকবুল নামে এক ব্যক্তি। পরে দ্বারকানাথ দে এবং মুঙ্গুল সিং তাকে ছিনিয়ে নেয়। এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং মামলা দায়ের করা হয়। মুসলিম নবাবরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও, রাজগঞ্জ থেকে চকবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন দোকান ও বাসাবাড়িতে হামলা হয়। পরদিন শহরটি শান্ত হতে শুরু করে এবং ঢাকার নবাব ও তার দলের লোকজন নিহত ব্যক্তির জানাজায় অংশ নেন এবং  নবাব  জনসভায় ভাষণ দেন।
এই ঘটনায় কুমিল্লার দায়রা আদালত নিবারণ চন্দ্র রায়, দ্বারকানাথ দে এবং মুঙ্গুল সিংকে খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং প্রথমজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তবে কলকাতার হাইকোর্টের বিচারপতি মিত্র ও বিচারপতি ফ্লেচার তাদের সাজা বাতিল করে এবং বন্দিদের মুক্তির নির্দেশ দেন। এই ঘটনার সংবাদ বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়, যা ‘‘কুমিল্লা শ্যুটিং কেস’’ নামে পরিচিতি পায়।
প্রখ্যাত বিপ্লবী অখীলচন্দ্র নন্দী তাঁর লেখা ‘বিপ্লবীর স্মৃতিচারণ’ গ্রন্থে লিখেছেন- এই দাঙ্গা প্রতিরোধের কৃতিত্বের জন্য কুমিল্লার তরুণদের উপর সারাদেশের দৃষ্টি পড়ে। ১৯০৮ সালে ঢাকা অনুশীলন সমিতির নেতারা কুমিল্লায় এসে গুপ্ত বিপ্লবী দলের শাখা গঠন করেন।
এরপর ১৯২৭ সালের ২০ আগস্ট শুক্রবার বিকালে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে শহরের রাজাপাড়ায় আরেকটি দাঙ্গা ঘটে। শহরের হিন্দুদের আয়োজিত বিশাল শোভাযাত্রা শহরের দিকে আসছিল, এবং শোভাযাত্রাটি একটি মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু স্থানীয় মুসলিম বাধা দেয়, যার ফলে হিন্দু ও মুসলমান সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে প্রায় ২৫ বছর বয়সী এক মুসলিম যুবক নিহত হন এবং অন্য দুই মুসলিম গুরুতর আহত হন। সহকারী পুলিশ সুপার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সশস্ত্র কনস্টেবল পাঠান। পরবর্তীতে প্রায় ৩,০০০ হিন্দু নিয়ে আরেকটি শোভাযাত্রা মহেশাঙ্গন থেকে বের হয়, তবে মহকুমা শাসক গুরুতর অশান্তির আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করে শোভাযাত্রাটি বন্ধ করে দেন। শোভাযাত্রাটি শুরুর স্থান থেকে কিছুদূর এগোনোর পরই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। শোভাযাত্রার সামনে ছিলেন পরেশ চট্টোপাধ্যায়, ডা. নৃপেন বসু, ডা. সুরেশ ব্যানার্জী, জিতু দত্ত, বলাই ধর, অমর দাস, শরৎ ভোমিক, অখিল নন্দী প্রমুখ।
নিহত যুবকের মৃতদেহ কিছু মুসলমান শহরের রাজগঞ্জ বাজারের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময়, ছত্রভঙ্গ হওয়া হিন্দু শোভাযাত্রা অন্যটির সাথে মিলিত হয়ে পাথর ছোঁড়া শুরু করে, যার ফলে একজন হিন্দু যুবক আহত হন এবং তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। শহরে জামতলায় প্রখ্যাত চিকিৎসক অবিনাশ ব্যানার্জীর ভাই রমেশ ব্যানার্জী নিজের বাসাতেই ছুরিকাঘাতে মারা যান (এই রমেশ ব্যানার্জীর বাসা ছিল বিপ্লবীদের আখড়া, উদয়পুর পাহাড়ে গুপ্ত প্রশিক্ষণে বিপ্লবীরা যাওয়ার সময় এখানে আশ্রয় নিতেন। রমেশ ব্যানার্জীর একটি ডাকাতি মামলায় ১৯১৩ সালের ১২ই মার্চ ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছিল)।
দাঙ্গার সময় ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। বুলক ব্রাদার্স এবং আরও কয়েকটি দোকান লুটপাটের শিকার হয়েছে।
সব মিলিয়ে ৩৪ জন আহত হন, এবং আটজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অভয় আশ্রমের ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সশস্ত্র পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে এবং হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের সমন্বয়ে শান্তি কমিটির সদস্যদের সাথে শহরে টহল দেয়। পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, তবে দাঙ্গার সময় ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। বুলক ব্রাদার্স এবং আরও কয়েকটি দোকান লুটপাটের শিকার হয়েছে।
রমেশ ব্যানার্জী হত্যার ঘটনায় আব্দুল রশিদ সহ অন্যান্য ৮ জন মুসলিমের বিরুদ্ধে দাঙ্গা, গুরুতর আঘাত এবং হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
১৯২৮ সালের ৯ জানুয়ারি প্রকাশিত এক সংবাদে দেখা যায়, হিন্দু ও মুসলিম প্রতিনিধিরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে তারা সাম্প্রদায়িক মতপার্থক্য দূর করতে সম্মত হন এবং প্রার্থনা করেন যেন উভয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মামলাগুলি আর এগিয়ে না নেওয়া হয়। তাদের অনুরোধ মঞ্জুর করা হয় এবং সমস্ত সাম্প্রদায়িক মামলা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. ক্রাউন কর্তৃক প্রত্যাহার করা হয়।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে সৃষ্ট নতুন প্রদেশ পূর্ববঙ্গ এবং আসামের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন স্যার জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলার। সে সময় বঙ্গভঙ্গ বিরোধীরাও দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তাদের এ আন্দোলনের বিরোধিতা করার জন্য ফুলার মুসলমানদেরকে বঙ্গভঙ্গের পক্ষে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছিলেন। কুমিল্লায় বঙ্গভঙ্গের পক্ষে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম জমিদার খান বাহাদুর সৈয়দ হোচ্ছাম হায়দার চৌধুরী। স্যার জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলার ১৯০৬ সালের ১৩ জানুয়ারি কুমিল্লা পরিদর্শন করেন।
একটি বিশেষ ট্রেনে তিনি কুমিল্লায় পৌঁছালে জেলার কালেক্টর মি. লিস, বিচারক মি. ব্রাউন, রাজকুমার নবদ্বীপ বর্মন, ত্রিপুরারাজ্যের মন্ত্রী বাবু রমণীমোহন চ্যাটার্জি, মৌলভী আলী নবাব খান বাহাদুর, কলকাতার শোভাবাজারের রাজা বিনয় কৃষ্ণ বাহাদুর, পশ্চিম গাঁওয়ের জমিদার খান বাহাদুর সৈয়দ হোচ্ছাম হায়দার চৌধুরী, কাজী মুন্সী রিয়াজউদ্দিন আহামেদ এবং জেলা পরিষদের সদস্য ও পৌর কমিশনারগণ তাকে  আন্তরিক স্বাগত জানান।
সে সময় ফুলারকে স্বাগত জানাতে বানানো জিলা স্কুল রোডে দু ’একটি গেট গোপনে আগুনে নষ্ট করে দেয় বঙ্গভঙ্গ বিরোধীরা। কুমিল্লায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধীদের অন্যতম ছিলেন কৈলাশ চন্দ্র দত্ত, মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য, রজথনাথ নন্দী, ভূধরচন্দ্র দাস, অখীলচন্দ্র দত্ত প্রমুখ।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত রাজনৈতিক পত্রিকা দ্য ইংলিশম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ১৯০৬ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের প্রথম বার্ষিকী কুমিল্লায় বিপুল আনন্দের সাথে উদযাপিত হয়েছিল। ছয় হাজারেরও বেশি বিভিন্ন স্তরের ও শ্রেণির মানুষ জেলার প্রধান জমিদার সৈয়দ হোচ্ছাম হায়দার চৌধুরীর বাড়িতে একত্রিত হয়েছিলেন। সমাবেশটি পরে একটি শোভাযাত্রায় পরিণত হয়েছিল এবং প্রধান প্রধান রাস্তাগুলি প্রদক্ষিণ করে বিকেল ৪টায় কুমিল্লা টাউন হলে জমায়েত হয়েছিল। বঙ্গভঙ্গের আশীর্বাদে তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং এটি যেন কোনোভাবেই পরিবর্তিত না হয় সেই প্রার্থনা জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল। রাজা সম্রাট, রাণী সম্রাজ্ঞী, রাজপরিবারের সদস্যদের দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়েছিল, পাশাপাশি পূর্ববঙ্গ ও আসামের ভাইসরয় এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নরের দীর্ঘায়ু কামনাও করা হয়েছিল। হালকা নাস্তার আয়োজন করা হয়েছিল। শহরের ইউরোপীয় ভদ্রলোকদের বিনোদন দেওয়া হয়েছিল। আতশবাজির প্রদর্শনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়েছিল। বিপুল উচ্ছ্বাস বিরাজ করছিল।
লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে পাওয়া ১৯০৭ সালের ৭ মার্চ দি মাদ্রাস উইকলি মেইল পত্রিকায় ‘অল-ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ, কুমিল্লায় ঢাকার নবাব’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়- ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ খান ৩ মার্চ রাতে কলকাতা থেকে চাঁদপুর আসেন এবং খান বাহাদুর নবাব আলী চৌধুরী এবং বিপুল সংখ্যক মুসলমান ভদ্রলোক তাকে অভ্যর্থনা জানান, পুরো দলটিকে নবাবের তিনটি স্টিমারে রাতে থাকার ব্যবস্থা করে। রাত ৮টার দিকে তিনি কুমিল্লা থেকে একটি প্রভাবশালী প্রতিনিধি দল এবং পরে চাঁদপুর থেকে একটি প্রতিনিধি দল গ্রহণ করেন এবং এখানে পৌঁছানোর পর চাঁদপুর ঘাটে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। নবাব ৪ মার্চ বিকেলে বিশেষ ট্রেনে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা হন। নদীর ঘাটটি শত শত মুসলমানের ভিড়ে পরিপূর্ণ ছিল এবং নদীর তীর থেকে ট্রেন পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবকরা সারিবদ্ধ ছিল। নবাব সলিমুল্লাহ খান এবং খান বাহাদুর নবাব আলী চৌধুরী উভয়কেই আনন্দের সহিত মুসলমানগণ অভিবাদন ও স্বাগত জানান। ট্রেন এবং ইঞ্জিন পতাকা ও সবুজ পাতা দিয়ে সজ্জিত ছিল এবং স্বেচ্ছাসেবকদের ক্যাপ্টেন একটি ইংরেজি স্বাগত কবিতা পাঠ করেন। তার অবতরণ থেকে ট্রেন ছাড়ার সময় পর্যন্ত সালাম হিসেবে বাজি ফুটানো হয়।
নবাব বাহাদুর তাকে দেওয়া অভ্যর্থনায় অভিভূত হন এবং তার স্যালুনে প্রবেশের আগে তিনি অভ্যর্থনা কমিটি এবং স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানান, তিনি বলেন যে তিনি আনন্দিত যে অভ্যর্থনাটি তাকে একজন ব্যক্তি হিসেবে নয়, বরং সেই মহান জাতীয় কারণের জন্য দেওয়া হয়েছে। নবাব আলী চৌধুরীও মুসলমানদের এই উদ্দেশ্যে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি উদ্দীপনামূলক বক্তৃতা দেন। ট্রেনটি প্রতিটি স্টেশন অতিক্রম করার সময় সালাম হিসেবে বাজি ফুটানো হয় এবং ট্রেনটি কুমিল্লা স্টেশনে পৌঁছানোর সাথে সাথে প্রায় ২ হাজার মুসলমানের উল্লাসে নবাবকে অভ্যর্থনা জানায়, রেলওয়ে স্টেশনটি এই উপলক্ষে সজ্জিত করা হয়েছিল। ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মের কাছে আসার সাথে সাথে একটি ব্যান্ড “দেখো বিজয়ী বীর আসছে” গানটি বাজানো শুরু করে এবং নবাবের হাতে চুম্বন করার জন্য ভিড় জমে যায়। তার গাড়িতে পৌঁছাতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে। স্থানটি পতাকা, বিজয় খিলান ইত্যাদি দিয়ে জমকালোভাবে সজ্জিত করা হয়েছে। নবাব বাহাদুর নবাব আলী চৌধুরীর সাথে জমকালো গাড়িতে করে চৌধুরী সাহেবের বাসভবনে যান, যা পতাকা এবং সজ্জা দিয়ে বেশ উৎসবমুখর দেখাচ্ছে এবং মাঠগুলি চৌধুরী সাহেবের অতিথিদের জন্য তাঁবুসহ একটি বিশাল শিবিরের মতো দেখাচ্ছে। নবাব বাহাদুর ৫ মার্চ সকালে একটি জনসংবর্ধনা গ্রহণ করবেন এবং সন্ধ্যায় তিনি অল-ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ এবং জাতীয় তহবিল গঠনের বিষয়ে একটি জনসভায় ভাষণ দেবেন। শহরে ব্যাপক আনন্দ বিরাজ করে।
‘একটি বিক্ষোভ’ শিরোনামে আরেকটি খবরে বলা হয়- ৪ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকার নবাবকে শহরের মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে দেখার জন্য বিপুল সংখ্যক লোক জড়ো হয়েছিল। নবাব ৫ মার্চ সকালে একটি বিশাল শামিয়ানার নিচে একটি সভায় যোগ দেন, যেখানে তাকে ব্যান্ডসহ আঞ্জুমান-ই-ইসলামিয়ার কমিটির মারহাবা ধ্বনির মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সভাটি খুব জনাকীর্ণ ছিল এবং স্থানীয় সমস্ত বিশিষ্ট মুসলমানরাও এতে যোগ দিয়েছিলেন। কোরআনের আয়াত পাঠের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হয় এবং তারপর মৌলভী আলী আহমদ, একজন জমিদার এবং অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট, আঞ্জুমানের পক্ষ থেকে ফার্সি ভাষায় একটি স্বাগত ভাষণ পাঠ করা হয়। এর উত্তরে নবাব ফার্সি ভাষায় একটি উত্তর পাঠ করেন, যা প্রায় সকলকে উল্লাসিত করে। এরপর একই আঞ্জুমানের পক্ষ থেকে বাংলা ভাষায়  স্বাগত ভাষণ পাঠ করা হয়, যার উত্তরে নবাব বাংলা ভাষায়  দীর্ঘ উত্তর পাঠ করেন এবং এটি বিপুল করতালির মাধ্যমে গৃহীত হয়। এরপর লীগে এবং নবাবের জনসেবার উপর বাংলা ভাষায় প্রশংসা পাঠ করা হয় এবং এরপরে মৌলভী রাজিউদ্দিন আহমদ কর্তৃক এই উপলক্ষে রচিত একটি ফার্সি কাসিদা পাঠ করেন, যার শেষে তিনি প্রচুর প্রশংসা পান। এরপর নবাব উর্দু ভাষায় শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন, জনগণকে সংযমী হতে এবং বঙ্গভঙ্গ নিয়ে অতিরিক্ত উল্লাস না করার জন্য অনুরোধ করেন এবং গত রাতের ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন যে, যা ঘটেছে তার জন্য তিনি দুঃখিত হলেও তিনি আনন্দিত যে তাদেরকে গতরাতে উচ্ছৃঙ্খলতায় গ্রাস করেনি এবং তাদের কোনো অবস্থাতেই শান্তি ভঙ্গ না করার, ডান গালে চড় মারলে বাম গাল এগিয়ে দেওয়ার কথা বলেন, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই প্রতিশোধ না নেওয়ার বা নিজেদের হাতে আইন তুলে না নেওয়ার পরামর্শ দেন। চৌধুরী সাহেব এবং জনগণ গত রাতের ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার পরামর্শে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এবং গতকাল নবাবকে আনা বিশেষ ট্রেনটি যে সংকীর্ণ বিপদ থেকে রক্ষা পায় তা জানতে পেরে তারা জোর দিয়ে বলেন যে, এটি পূর্বপরিকল্পিত ব্যবস্থার অংশ ছিল। রেলের জোড়ায় পিন না থাকার কারণে ট্রেনটি ভিঙরাতে লাইনচ্যুত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। যাইহোক, ট্রেনটি নিরাপদে চলে যায় এবং কুমিল্লায় পৌঁছানোর পরই আমরা ঘটনাটি জানতে পারি।

(পরের অংশ এই লিংক https://www.comillarkagoj.com/news/201407)












সর্বশেষ সংবাদ
স্ত্রীসহ সাবেক এমপি বাহারের ফ্ল্যাট ও ব্যাংক হিসাব জব্দ
৫ দফা দাবি আদায়ে কুমিল্লায় ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি - ভোগান্তিতে রোগী ও স্বজনরা
তাওবা ও ক্ষমা
কুমিল্লায় র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্র ও গুলিসহ যুবক গ্রেফতার
কুমিল্লায় বিদেশী পিস্তলসহ দুই ডাকাত গ্রেফতার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
স্ত্রীসহ সাবেক এমপি বাহাউদ্দিনের ফ্ল্যাট ও ব্যাংক হিসাব জব্দ
কুমিল্লায় সর্প দংশনে এক যুবক নিহত
চাঁদাবাজির অভিযোগে দেবিদ্বারের দুই ভুয়া সাংবাদিক খাগড়াছড়িতে গ্রেপ্তার
‘বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় খুন!’ গ্রেপ্তার ২
‘ফারজানা’ কাউন্টারে তালা ঝুলিয়ে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২