রামাদ্বান
মাস এসেছে তিনটি পর্বে ও একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মহিমান্বিত রজনি নিয়ে।
এর সবগুলো উদ্দেশ্যই হলো বান্দাহকে পরিশুদ্ধ করে ক্ষমার মাধ্যমে জান্নাতের
অধিবাসি করা। এখন আমরা যেই অংশে অবস্থান করছি তা হলো রহমতের অংশ পেরিয়ে
মাগফিরাত তথা ক্ষমার অংশ। আর এই ক্ষমা পাওয়ার জন্য দুইটি জিনিস শর্ত। বিশেষ
করে কবিরা বা বড় গুনাহের জন্য। এক. তাওবায়ে নাসুহা। দুই, ভবিষ্যতে গুনাহের
কাজে লিপ্ত না হওয়ার ১০০% নিশ্চয়তা।
তাওবায়ে নাসুহা কি? সর্বোত্তম
তাওবা। নসিহত মূলক তাওবা। যেভাবেই বলি না কেন। মোট কথা ঐ গুনাহ যেটা ইচ্ছায়
বা অনিচ্ছায় কোন বান্দাহ করে ফেলে অতঃপর সে চরম লজ্জিত হয়ে অন্তর থেকে
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা চেয়ে নেয় এবং ভবিষ্যতে পূনরায়
না করার ব্যপারে দৃঢ় থাকে। মহান আল্লাহ কুরআনুল করিমে এই তাওবায়ে নাসুহার
ব্যপারে বলেন- হে ঈমানদার বান্দাহগণ তোমরা তাওবা কর মহান আল্লাহর নিকট
আন্তরিক তাওবা। আশাকরা যায় তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দকাজ সমূহ মোচন
করে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।
সেদিন মহান আল্লাহ অপছন্দ করবেন না তাঁর নবীগন ও বিশ্বাসী সহচরদেরকে।
তাঁদের (তাওবা ও আমলের) নূর তাঁদের সামনে ডানদিকে ছুটাছুটি করতে থাকবে।
তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের নূরকে পরিপূর্ণ করে দিন এবং
আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছুর উপর সর্ব শক্তিমান।
পারা-২৮, সুরা-তাহরীম, আয়াত-৮। এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায় তাওবা গুনাহ থেকে
মুক্ত হওয়ার ও ক্ষমা পাওয়ার একটি বিশাল মাধ্যম। কিন্তু শর্ত হলো তাওবায়ে
নাসুহা করতে হবে। এমন যেন না হয় একবার তাওবা করলাম আবার পূণরায় সেই গুনাহতে
লিপ্ত হলাম। আবার তাওবা করলাম আবার গুনাহতে লিপ্ত হলাম। তাহলে সেটা আর
তাওবা থাকলোনা। সেটা তাওবা নিয়ে উপহাস করা হলো। তখন ঐ তাওবাও এক প্রাকার
কবিরা গুনাহতে পরিনত হয়ে গেল। এই ধরনের উপহাসমূলক তাওবা থেকেও আমাদেরকে
তাওবা করতে হবে।
আবার আমার আপনার গুনাহ যত বড়ই হোক আর যত বেশিই হোক না
কেন মহান আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা থেকে নিরাশ বা আশাহত হওয়া যাবেনা। কারণ তাঁর
রহমত ও ক্ষমার দরজা সর্বদাই উন্মুক্ত। মহান আল্লাহ এই ব্যাপারে ঘোষনা
করেন-হে রাসুল দঃ আপনি বলে দিন- হে আমার (আল্লাহর) ঐ সকল বান্দাহগণ যারা
(গুনাহের মাধ্যমে) নিজেদের উপর জুলুম করেছ তারা মহান আল্লাহর রহমত থেকে
নিরাশ হয়োনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তোমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। তিনি
ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। পারা-২৪, সুরা-ঝুমার, আয়াত-৫৩। হাদিসে পাকে নূর
নবিজী দঃ বলেন- কোন বান্দার গুনাহ যদি একেকটি উহুদ পাহড়ের সমান হয় আর এমন
গুনাহ দ্বারা যদি সাত আসমান ও সাত জমিন পরিপূর্ণ হয়ে যায় এরপর বান্দাহ যদি
মহান আল্লাহর নিকট খালেছ দিলে ও সত্যিকার অর্থে তাওবা করে। মহান আল্লাহ সেই
পরিমান গুনাহও ক্ষমা করে দিবেন। সুবহাল্লাহ সুবহানাল্লাহ।
ওহে আল্লাহর
বান্দাহগণ। আর কত দুরে থাকবো আমরা মহান আল্লাহর কাছ থেকে? আসুন সবাই মিলে
এই মাস ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেওয়া সুযোগ গুলোকে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠি
পরিপূর্ণ মুমিন ও জান্নাতী। তাই মাগফিরাতের এই অংশ আমাদের জন্য এক মহা
নিয়ামত। পালনকর্তা আমাদের সবাইকে এই নেয়ামতের যথাযথ সম্মান ও কদর করার
তৌফিক দান করুন। রহমতের অংশের প্রতিটি ইবাদত কবুল করে নিন। আমিন।
প্রধান ইমাম ও খতীব, কান্দিরপাড় কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ ও কেন্দ্রিয় ঈদগাহ, কুমিল্লা।